প্রখ্যাত গীতিকবি মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান শোনালেন জীবনের জয়গান
সংগীত রচয়িতা হিসেবে বারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন প্রখ্যাত গীতিকবি ও লেখক মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান। তার আশি বছরের কর্মযজ্ঞ, অধ্যবসায়, সাধনা আর সাফল্যের গল্পগাঁথায় শোনালেন জীবনের জয়গান। শিক্ষার্থীদের জন্য অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে দিয়ে গেলেন আগামীর পথচলার রসদ; জীবনীশক্তি।
শিক্ষার্থীরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো সেই গল্প শুনলেন। পাশাপাশি স্বপ্ন পূরণের সংগ্রামের জন্য তুলে নিলেন নতুন উদ্যম। মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) রাতে যশোরে আইডিয়া সমাজকল্যাণ সংস্থা’র ব্যতিক্রমী ‘সফল যারা, কেমন তাঁরা’ অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে আমন্ত্রিত ছিলেন বিশিষ্ট গীতিকবি ও লেখক মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান।
শৈশব, কৈশোর, শিক্ষা জীবন, কর্মজীবন নিয়ে তিন ঘণ্টা গল্প শোনান তিনি। যুগ যুগ ধরে সমাদৃত অনেক গানের জন্ম ইতিহাস, সিনেমা নির্মাণের প্রেক্ষাপট, পেছনের গল্প তুলে ধরেন। শিহরণ জাগানিয়া সেইসব গল্পে আপ্লুত হন শিক্ষার্থীরা।
‘ছুটির ঘণ্টা’ সিনেমার চিত্রনাট্য লেখার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, সেই সময় স্কুলের ‘বাথরুমে শিশু মৃত্যুর’ খবর শুনে ঘটনাস্থল খুঁজতে ঢাকা, চট্টগ্রামের বহুস্থানে ছুটেছি। এরপর একপর্যায়ে কাপ্তাইয়ে একটি স্কুল লোকেশন হিসেবে পছন্দ হলে সেখানে বাংলোয় অবস্থান নিয়ে চিত্রনাট্য লেখা হয়। বারবার স্কুল দেখে দেখে চিত্রনাট্য তৈরি করা হয়েছে।
‘সেই রেললাইনের ধারে মেঠো পথটার পারে দাঁড়িয়ে..’ গানটি’র মধ্যবয়সী নারী রফিকউজ্জামানের মা সাজেদা খাতুন। মহান মুক্তিযুদ্ধকালে রেললাইনের পাশের যে পথ ধরে ভাই আসাদুজ্জামান মায়ের কাছ থেকে শেষ বিদায় নিয়ে চলে গিয়েছিলেন, সেই পথের দিকে তাকিয়ে সন্তানের ফিরে আসার প্রতীক্ষায়রত মায়ের হাহাকার, আর্তনাদ আর রক্তক্ষরণ তুলে এনেছেন এই গানে।
রেডিওতে সুবীর নন্দীর জন্য লেখা ‘বন্ধু হতে চেয়ে তোমার শত্রু বলে গণ্য হলাম’ গানের কথা বললেন। বললেন, ‘দুঃখ আমার বাসর রাতের পালঙ্ক’ গানে অবস্তুগত আবেগ, রূপ, নিয়মকে বস্তুগত বিষয়ে তুলে আনার গল্প। বৈচিত্র্যময় উপামা ব্যবহারের গল্প।
নতুন লিখিয়ের উদ্দেশ্যে বললেন, ‘শ্রোতার রুচির কাছে বিক্রি হওয়া যাবে না; লেখকের কাজ শ্রোতার রুচিকে উন্নত করা।’জানালেন, ‘ভালো সিনেমা তৈরির ইচ্ছে থাকলেও সিডিউলের জন্য নায়ক-নায়িকাদের বাড়ি যেয়ে বসে থাকতে হয়। একাজটি পারব না বলেই সিনেমা করা হয় না।’
মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান বলেন, এখন সুর সৃষ্টি খুব কম হচ্ছে। বর্তমান প্রজন্মের কাছে কমে যাচ্ছে পুরাতন আবেগ, স্মৃতির টান। যে জীবনে মানুষের জন্য প্রেম, ভালোবাসা, মমত্ব, মানবতা, মিলন নেই; সে জীবন কোনো জীবন নয়। মানুষকে দূরে ঠেলে তীর্থস্থান ঘুরে খুব বেশি ফল আশা করা যায় না। তারপরও আইডিয়ার এমন আয়োজনে মুগ্ধ হলাম। বহুদিন পর গল্প করার সুযোগ হলো, অনেক ভালো লাগছে। আর এই প্রাঙ্গণে কেন আরও আগে আসিনি সে নিয়ে বড্ড আক্ষেপ হচ্ছে।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই আইডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা সহকারী অধ্যাপক হামিদুল হক প্রধান অতিথি মোহাম্মদ রফিকউজ্জামানের হাতে শুভেচ্ছা স্মারক উপহার তুলে দিয়ে বরণ করে নেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, রফিকউজ্জামানের সহধর্মিনী পান্না জামান ও অনুজ হাবিবউজ্জামান।
মিলন রহমান/এমএমএফ/এএসএম