বুড়িয়ে গেলেও ফুরিয়ে যাননি অঞ্জন দ্ত্ত!


প্রকাশিত: ০৯:৩৫ এএম, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬
ছবি : মাহবুব আলম

তিনি এখন আর অতিথির মতো নন। একদম ঘরের মানুষে পরিণত হয়েছেন। দীর্ঘ সংগীত জীবনে তার কলকাতা যতোটা ভালোবাসা তাকে দিয়েছে তার থেকে এক ইঞ্চিও কম দেয়নি ঢাকার শ্রোতারা। ক্যারিয়ারের সেই শুরু থেকে আজ অবধি এপারে অঞ্জন দত্ত সংগীতের একটা রাজপুত্রের নাম।

বহুবার এসেছেন, মিশেছেন এখানকার গানের সঙ্গে, গানের মানুষদের সঙ্গে। সখ্যতা গড়েছেন শ্রোতাদের সঙ্গেও। সম্প্রতি গানের অঞ্জন চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবেও প্রশংসিত এখানে। তবে আশার কথা হলো যতোবারই আসেন সেই আসাটা পুরোনো হয় না কখনো।

তাই বোধকরি গেল ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবসেও রাজধানীর ফার্মগেটে অবস্থিত কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে সবাই অধির আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলেন কখন তিনি মঞ্চে আসবেন। অবশেষে তিনি এলেন ৬টায় শুরু অনুষ্ঠানের ৮টায়। রেড ভেলভেটের আয়োজনে ‘লাইভ উইথ অঞ্জন দত্ত’ শিরোনামের কনসার্টটিতে বাকি সময়টা পরিবেশনায় ছিলেন অন্যরা।

Anjan 1
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকেই মঞ্চে এসেছিলেন ভাই-বোন সভ্যতা আর সন্ধির ব্যান্ড ‘মহাকাল’। তারা একে একে গাইছিলেন তাদের জনপ্রিয় গানগুলো। তবে সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন দত্ত, সেটা খুব সহজেই অনুমান করা গেল।

Mohakal
অবশেষে ৮টায় মঞ্চে এলেন অঞ্জন দত্ত। মঞ্চে উঠেই তার কণ্ঠে ঝড়ে পড়ল বাংলাদেশের ভক্ত ও প্রিয়জনদের প্রতি কৃতজ্ঞত। বললেন, ‌‘শিল্পী হিসেবে মর্যাদা পেতে গত চব্বিশ বছরে কলকাতার দর্শকদের যেমন ভাগ আছে, তেমনি ঢাকার শ্রোতাদের অবদানও কোনো অংশে কম নয় আমার ক্যারিয়ারে। আমি এই ঋণ শোধ করতে পারব না। তাই সেটা করতেও চাই না। ভালোবাসার ঋণে বন্দি থাকেতে আমার এতটুকু আক্ষেপ নেই। ভালোবাসা বাংলাদেশের জন্য, ভালোবাসা ঢাকার জন্য, ভালোবাসা এখানে আসা প্রতিটি হৃদয়ের জন্য।’

anjan 2
অবশ্য অঞ্জন আসার আগে মঞ্চে এসেছিলেন তার ছেলে নীল দত্ত ও বন্ধু অমিত। তুমুল কড়তালি আর উষ্ণ অভ্যর্থনায় যখন রীতিমত আপ্লুত তারা, ঠিক সেসময় মাইক্রোফোন হাতে মঞ্চে উঠলেন প্রিয় অঞ্জন দত্ত। উপস্থিতদর্শক ভক্তরা যখন মাথায় ক্যাপ, পরনেজিন্স আর টি-শার্টের উপর সাদা কোর্টের চিরচেনা ভঙ্গিমায় হাজির হওয়া অঞ্জন দত্তকে দেখছিলেন হাঁ করে, তখন পুরুষালি কণ্ঠে মাইক্রোন হাতে অঞ্জন গেয়ে উঠেন ‘আমার জানালা দিয়ে একটুখানি আকাশ দেখা যায়।’

Anjan 3
এরপর একে একে গেয়ে শোনালেন ‌‘হ্যালো বাংলাদেশ’, ‘আমি বৃষ্টি দেখেছি’, ‘রঞ্জনা আমি আর আসব না’, ‘বেলা বোস’, ‘ঊনষাট’, ‘ম্যারিয়েন’, ‘কত কি করার ছিল যে’, ‘হানড্রেড মাইল’, ‘তুমি না থাকলে’র মতো জনপ্রিয় সব গান।

Anjan 4
আর গানের ফাঁকে আয়োজক রেড ভেলভেটকে ধন্যবাদও দিতে ভুললেন না অঞ্জন দত্ত। বললেন, ‘জানেনতো আমাদেরকে ভিসাটিসা দিয়ে অনেক খরচ করে এইসব প্রোগ্রামে আনতে হয়। আর রেড ভেলভেট এই সাহসটা করেছেন। তাদেরকে ধন্যবাদ। তারচেয়ে ধন্যবাদ বেশি আপনাদের, যারা নিজের এতো টাকা পয়সা খরচ করে আমার মত একটা বুড়োর গান শুনতে এসেছেন, গত চব্বিশ বছর ধরে শুনছেন।’ এই বলে দর্শকদের উদ্দেশে মাথা নুয়ে দিলেন!

Anjan 5
গান শেষ হলো, মুগ্ধতা যেন কাটেই না। ঘোরের নেশায় সবাই তখন ভাবছিলেন- এই যা! শেষ বুঝি! আর এটাও অনুময়ে হলো, বয়সে ষাট পেরিয়ে বুড়িয়েছেন বটে, কিন্তু গায়ক অঞ্জন ফুরিয়ে যাননি একদম-ই।

এলএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।