পুরুষ নির্যাতন আইন চাইলেন তারা
নারী নির্যাতনের পাশাপাশি পুরুষ নির্যাতন আইনের দাবি জানিয়েছে নারায়ণগঞ্জে নারীদের হাতে নির্যাতিত কয়েকজন পুরুষ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে সবক্ষেত্রে নারী পুরুষ সমান অধিকার বলা হয়েছে। নারী নির্যাতন আইন আছে, পুরুষ নির্যাতন আইন চাই। পুরুষ নির্যাতন আইন পাশ করার জোরালো আহ্বান করেন তারা।
বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় ’পুরুষ নির্যাতন চাই’ এমনি একটি ব্যানার নিয়ে সকাল থেকে দাঁড়িয়েছিলেন স্ত্রীর নির্যাতনের শিকার সোনারগাঁয়ের আবু বকর সিদ্দিক ও ফতুল্লার শেখ খায়রুল আলম। পরে তাদের সমর্থন করে কিছুক্ষণ পর লোকজন এসে সংহতি প্রকাশ করেন অন্যরাও।
এদিকে পুরুষ নির্যাতন আইন পাসের দাবিদার সোনারগাঁও কাঁচপুর চেঙ্গাইন এলাকার আমির উদ্দীনের ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিকের সঙ্গে কথা হলে তিনি সাংবাদিকদের জানায়, ২০০৪ সালে বন্দর লাঙ্গলবন্দ এলাকার নারগিস আক্তারকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তাদের সংসারে সাদিয়া নামে এক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু কয়েক বছর সংসার চলে আসলেও সংসারে অশান্তি লেগেই ছিল। যার পেছনের কারণ হলো আবু বক্কর সিদ্দিকের পোশাক। সে দাঁড়ি রাখে, টুপি ও পাঞ্জাবী পরিধান করায় স্ত্রী তাকে পছন্দ করতো না। যে কারণে ওই নারী পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে পরে। আর স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া শুরু করে। এ নিয়ে স্বামী শাসন করতে গেলে স্বামী আবু বক্করের বিরুদ্ধে যৌতুক মামলাসহ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনেও মামলা করে দেয় স্ত্রী নারগিস আক্তার। পরবর্তীতে পারিবারিক আদালতে পৃথক আরেকটি মামলা করে তার স্ত্রী। ওই মামলায় আদালতের তার ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হয়। দীর্ঘ ৬ বছর ধরে নারগিসের সঙ্গে মামলার লড়াই করতে গিয়ে নিজের জীবন এখন বিষন্ন হয়ে গেছে। অনেক জমি জমা বিক্রি করে এখন আবু বক্কর পথে বসেছে। এরি মধ্যে ৪ দফা জেলও খাটতে হয়েছে আবু বকর সিদ্দিককে। প্রথম বার ২ মাস, ১৪ দিন, ৭ দিন ও ২৩ দিন কারাভোগ করতে হয় স্ত্রীর মামলায়। তবে নিজ খরচে দুই শ্যালককে বিদেশে পাঠাতেও আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছিলেন আবু বক্কর। এছাড়াও কাঁচপুরে রাস্তায় ফেলে ২০০৯ সালে র্যাবের এক কর্মকর্তাকে দিয়ে অমানসিক নির্যাতন করে স্ত্রী নারগিস।
এদিকে নারী নির্যাতনের শিকার ফতুল্লার ভুইগর পশ্চিমপাড়া এলাকার শেখ সাহা আলমের ছেলে শেখ খায়রুল আলম জানান, ২০১৩ সালের ১৮ অক্টোবর একই এলাকার আজাহার মিয়ার মেয়ে শারমিন আফরোজার সঙ্গে বিয়ে হয় খায়রুল আলমের। বিয়ে করলেও শারমিনের ভাই ও তার দুলাভাই দেশে ফিরে আসলে আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দিবে বলে জানায় মেয়ের পরিবারকে। তবে বিয়ের পর থেকেই স্ত্রীর জন্য মাসিক হাত খরচ দেয়া হয়। কিন্তু বিয়ের পর স্ত্রীর চাহিদা অনেক সেটা বুঝা যায়। উচ্চমূল্যে পোশাক কিনে দেয়াসহ ল্যাপটপ কিনে দিতেও টাকা দেয়া হয়। কিন্তু পরবতীতে ২০১৩ সালের ১৪ নভেম্বর খায়রুলের বাড়িতে একাই চলে আসে শারমিন। এসে শাশুড়ি ও স্বামীর সঙ্গে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়। পরে ২০১৪ সালের ৩১ মে রাতে শারমিন ফোন করে জানায় তাকে দেনমোহর এক লাখ টাকা দিয়ে তালাক দিতে চাপ দেয়। হুমকি ধামকিও দেয়। একই বছরের ৬ জুন একজন ব্যক্তি ফোন করে খায়রুলকে জানায় সে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের এসআই সোহাগ এবং আরো বলে যে, আপনার স্ত্রী আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ করিয়াছে, আপনি এক লাখ টাকা নিয়া আমার সঙ্গে দেখা করেন। দেখা না করলে আপনাকে নারী নির্যাতন মামলা দিয়ে জেল খাটাব’ হুমকি দিয়ে ফোন রেখে দেয়। তবে খায়রুল জানায়, এরি মধ্যে দেখা গেছে শারমিন প্রায়শই গভীর রাতে বাসায় ফিরে। এবং কখনও কখনও রাতে বাসায় ফিরে না। কিন্তু সে আমার বাবা মা ও আমার নামে মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। আমার জীবন আজ শেষ করে দিয়েছে।
তিনি জানান, এ বিষয়ে কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদের ৩নং ওয়ার্ড মেম্বারসহ বিভিন্ন জনের দারস্থ হলেও তার সমাধান হয়নি। উল্টো শারমিন বাসায় এসে নিজেই নিজের শরীরে আগুন দেয়। আগুন দিয়ে মামলা দিয়ে আমাকে জেল খাটাতে চেষ্টা করে। আদালতে আমার বিরুদ্ধে একের এক মামলা দায়ের করে যাচ্ছে। আর স্ত্রী আদালতে আসে না। তারা বলেছে আমাকে শিক্ষা দিবে।
শাহাদাত হোসেন/ এমএএস/পিআর