এফডিসিতে ঢুকলেই সালমান শাহকে মনে পড়ে: ডন

লিমন আহমেদ
লিমন আহমেদ লিমন আহমেদ , বিনোদন প্রধান
প্রকাশিত: ০৩:২৪ পিএম, ০৮ মার্চ ২০২২

দুজন ছিলেন মানিকজোড়। একসঙ্গে চলতেন। আড্ডা দিতেন। একসঙ্গে বহু সিনেমায় অভিনয়ও করেছেন। দুজনের বন্ধুত্ব নিয়ে সিনেমাপাড়ায় আজও অনেক গল্প। তারা হলেন অকাল প্রয়াত অমর নায়ক সালমান শাহ ও অভিনেতা ডন। বন্ধুত্ব রেখে সেই ১৯৯৬ সালে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন সালমান। এরপর একাই বন্ধুত্ব বুকে ধরে আছেন ডন।

যেখানে যান, আড্ডা হলেই কোনো না কোনোভাবে উঠে আসে সালমানের প্রসঙ্গ। জাগো নিউজের সঙ্গে সম্প্রতি এক আলাপারিতায়ও তার ব্যতিক্রম হলো না। সালমান শাহকে নিয়ে বললেন মন খারাপের কিছু কথা। পাশাপাশি শিল্পী সমিতির নির্বাচন, নিজের ক্যারিয়ার, ব্যক্তি জীবনের অনেক অজানা বিষয় নিয়েই খোলামেলা কথা বললেন দেশের নন্দিত এই খল অভিনেতা।

শিল্পী সমিতি নিয়ে টালমাটাল এফডিসি। প্রতিদিনই সংবাদের নানা উপলক্ষ। নিয়মিত যাতায়াতের স্রোতেই ৫ মার্চ এফডিসিতে যাওয়া। তখন সন্ধ্যা নামলো কেবল। অন্ধকার গভীর হচ্ছে। পরিচালক সমিতির সামনে ডন ভাইয়ের সঙ্গে দেখা। তিনি বললেন, ‘কও তো বের হই কোনদিক দিয়া? দিনের বেলায় তো ঢুকছিলাম। এখন এই রাতের বেলায় বাইর হওয়ার রাস্তা পাইতাছি না।’ তার কথার টোন ও এক্সপ্রেশনে বোঝার উপায় নেই এটা তার দুষ্টুমি। ডন ভাই এমনই। হেব্বি সিরিয়াস মুডে তিনি মজার কথা বলতে পারেন। মজার মানুষ ডন ভাইকে চিনি বলেই তার রসিকতাটা ধরতে পেরে উপস্থিত সবাই হাসলাম।

ডন ভাইকে বের হওয়ার রাস্তা দেখানোর কথা বলে শিল্পী সমিতির সম্মুখভাবে নিয়ে বসালাম। তারপর শুরু হলো ঝড়ের বেগে কিছু আলাপচারিতা।

জাগো নিউজ : আপনি গান বাজনা খুব পছন্দ করেন। নিজে গাইতেও ভালোবাসেন। কোন গানগুলো আপনার প্রিয়?
ডন : অনেক গান আমার প্রিয়। ব্যান্ডের। সিনেমার। বলে শেষ করে যাবে না। গুণগুণ করে একটা না একট গান আমি গেয়েই যাই প্রতিনিয়ত। গান-বাজনা খুব ভালো লাগে। অবসর হলেই গান শুনি, গান করি। মন খারাপ হলে গান শুনি। গিটার বাজাই।

জাগো নিউজ : ঠিক কি কি কারণে আপনার মন খারাপ হয়?
ডন : আমার মন খুব একটা খারাপ হয় না। চেষ্টা করি চিল মুডে থাকতে। তবু মানুষ তো। নানা কারণে মন খারাপ হয়। যেমন- এফডিসিতে এলেই ইমনের (সালমান শাহ) কথা মনে পড়ে। তখন মন খারাপ হয়। এই পৃথিবীতে কতকিছু ঘটছে, এফডিসি, শিল্পী সমিতি; কত নতুন মুখ, কত নতুন ঘটনা। কিছুই সে দেখলো না। কষ্ট হয়।

জাগো নিউজ : সালমান শাহকে সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে কখন বা কোন মুহূর্তগুলোতে?
ডন : সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে এফডিসিতে এলেই। চারদিকে তো ওর স্মৃতি জড়িয়ে আছে। দীর্ঘদিন আমরা একসঙ্গে এখানে প্রবেশ করেছি, কাজ করেছি, কাজ শেষে বেরিয়ে গেছি। ওকে ছাড়া এখানে আসাটা মন মানতে চায় না। ওর জন্য দোয়া করবেন। যেন ওপারে ওর আত্মা শান্তিতে থাকে।

জাগো নিউজ : বছরের পর বছর সালমান খুনের দায় নিয়ে ঘুরেছেন। এ নিয়ে কিছু বলবেন?
ডন : না। এসব চুকেবুকে গেছে। পুরোনো বিষয়। আর ভাবতে চাই না। আইন তার মতো করে চলেছে। সালমানের মৃত্যু নিয়ে তদন্ত হয়েছে কয়েক দফায়। ওসব আইনের কাছেই থাক। ভালোবাসাবাসি, বন্ধুত্ব থাক আমার কাছে। এটাই বেশি উপভোগের।

জাগো নিউজ : সালমান শাহ থাকাকালীন আপনার ক্যারিয়ার যে গতিতে ছিল আজকের এ অবস্থানে এসে কি মনে হয়, সেই গতি ঠিক স্কেলে আছে? বা অভিনেতা ডন তার ক্যারিয়ার নিয়ে কতোটা সন্তুষ্ট?
ডন : আমি সবকিছুতেই সন্তুষ্ট থাকার চেষ্টা করি। আমার খুব বেশি প্রত্যাশা নেই। মহান আল্লাহ তাআলা সুস্থ রেখেছেন এটাই বেশি জরুরি। এখনো কাজ করে যেতে পারছি, আপনাদের দেখছি, আড্ডা দিচ্ছি, ঘুরছি, ফিরছি, গান করছি; মন্দ কি।

jagonews24

জাগো নিউজ : এটা তো ব্যক্তি ডনের সন্তুষ্টি। অভিনেতা ডন কতোটা সন্তুষ্ট তার ক্যারিয়ার নিয়ে?
ডন : খারাপ নয়। ভালোই সন্তুষ্ট। দেখেন, সালমান শাহ-শাবনূর-মৌসুমীদের জনপ্রিয়তার সেই সময় আমিও তুমুল জনপ্রিয় ছিলাম। সেই সময় ক্যারিয়ারের গ্রাফটা একরকম ছিল। এরপর সালমান চলে গেলো। রিয়াজরা এলো। তখনও রোমান্টিক সিনেমা হতো। আমি বেশ ভালো কাজ করেছি। রিয়াজদের পর যে প্রজন্মটা শুরু হলো সেখানে রোমান্টিকতার খুব একটা জায়গা নেই। চরিত্রের প্রতিও মনোযোগ দেয়া হয়নি। নায়ক-নায়িকাকে দেখানোর একতরফা চেষ্টা অনেক কিছুই নষ্ট করে দিয়েছে। তবুও অনেক কাজ করেছি আমি। এখনো করছি মাশাল্লাহ। আশা করছি কাজ করতে পারবো আজীবন।

জাগো নিউজ : দীর্ঘ ক্যারিয়ারে বহু সিনেমায় আপনাকে ধর্ষণের দৃশ্যে দেখা গেছে। কোন নায়িকার সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সাবলীলভাবে ধর্ষণ দৃশ্যে অভিনয় করতে পেরেছেন?
ডন : বেশ ইন্টারেস্টিং প্রশ্ন। এই প্রশ্নটা আমাদের মিশা ভাইকেও করা হয়েছিল একটা অনুষ্ঠানে। মজা পেয়েছিলাম তার উত্তর শুনে। আসলে আমি বলবো আমার সঙ্গে সব নায়িকাই এই দৃশ্যগুলোতে সাবলীল ছিলেন। তাদের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব, কাজের বন্ডিংটা সহশিল্পী হিসেবে ভালো ছিল বলেই এসব দৃশ্য করে স্বস্তি পেতাম বা সহজে শুটিং করতে পারতাম।

জাগো নিউজ : খুব মজা করে আপনার কাছের লোকরা বলে যে- ‘ডন প্রেমিক পুরুষ’। আপনার প্রেম নিয়ে অনেক কথা শুনি। আমাদের কিছু বলুন-
ডন : এসব হচ্ছে মজা। আমার কাছের মানুষেরা আমাকে নিয়ে মজা করে। কারণ আমিও মজা করতে পছন্দ করি। প্রেম তো সবাই করে। সব পুরুষই প্রেমিক পুরুষ।

জাগো নিউজ : বিয়ে করেননি কেন এখনো?
ডন : বিয়ের বয়স হয়নি আমার। (বলেই হাসলেন দুষ্টুমির ভঙ্গিতে) দেখুন, প্রেমই তো করতে পারিনি। বিয়ে করবো কেমন করে! কাউকে পাই না যাকে বিয়ে করা যায়। বিয়ে নিয়ে আমার খুব একটা চিন্তাও নেই।

জাগো নিউজ : সবাই তো চায় তার বংশধর থেকে যাক পৃথিবীতে। নানা গল্পে রঙিন অভিনেতা ডনের পরবর্তী জেনারেশন থাকুক সেটা চান না?
ডন : চাই তো বটেই। দেখা যাক কপালে কি আছে। একটা মানুষ জুটুক আগে, ব্যাটে বলে হয়ে গেলে বিয়ে করতেও পারি।

জাগো নিউজ : শিল্পী সমিতির নির্বাচনে এবার আপনিও প্রার্থী ছিলেন। স্বতন্ত্র। তো নির্বাচন নিয়ে এই যে চলমান সংকট, সে নিয়ে কিছু বলবেন?
ডন : হতাশ হচ্ছি। শিল্পী সমিতিতে এমনটা কখনো আগে দেখিনি। এতদিনে এত এত নির্বাচন হয়েছে, টুকটাক এটা ওটা হয়। ঠিক আছে। এটা নিজেদের ভেতরকার বিষয়। কিন্তু এবার যা হচ্ছে সত্যি অভাবনীয়। আমিও নির্বাচন করেছি। হেরে গেছি। এরপর প্রত্যাশা করেছিলাম শিল্পীবান্ধব ও চলচ্চিত্রবান্ধব একটা কমিটি আসবে। আমাদের উন্নয়ন হবে। কিন্তু শুরু হয়েছে কি! নির্বাচনের দিন চলচ্চিত্রের মানুষদের ঢুকতে দেয়া হয়নি। খুব খারাপ একটা দৃষ্টান্ত হলো কিন্তু। সবমিলিয়ে খুব বাজে একটা নির্বাচন দেখলাম এবার। নিজের ভেতরে লজ্জা বা আত্মসম্মানবোধ থাকা বেশি জরুরি। সবাই কি বলছে, ভাবছে আমাকে নিয়ে এসব যদি জেনে-শুনে-বুঝেও আমি এড়িয়ে যাই তাহলে তো বলার কিছু নেই। আমার প্রত্যাশা দ্রুত এসবের সমাধান হোক। শিল্পী ও চলচ্চিত্রের সম্মানের দিকে সবাই নজর দেবেন সেটাও আশা করছি।

জাগো নিউজ : প্রায়ই ভাইরাল টিকটক ভিডিওতে দেখা যায় আপনাকে। টিকটকে আইডি খুলেছেন নাকি?
ডন : একদম না। টিকটক আমি খুব অপছন্দ করি। আমার তো আইডি খোলার প্রশ্নই আসে না। হয়কি শুটিংয়ে গেলে অনেকের সঙ্গেই কাজ করতে হয়। সেখানে কেউ কেউ থাকেন যারা টিকটক ভিডিও বানান। তারা এসে অনুরোধ করে বলেন, ‘আপনাকে কিছু করতে হবে না। শুধু দাঁড়িয়ে থাকুন’। আমি দাঁড়িয়ে থাকি। ওরা ভিডিও করে নেয়। সেগুলো ভাইরাল হলে লোকে ভাবে আমি টিকটক করছি। এগুলো অনুরোধ রক্ষা করতে গিয়ে করা। আমাকে দেখিয়ে যদি কারও দুটো ভিউ বাড়ে বা উপকার হয় তবে হোক না। এত ভেবেচিন্তে কি হবে।

এলএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।