‘লাল মোরগের ঝুঁটি’ স্বাধীনতার ৫০ বছরকে মহীয়ান করে তুলেছে
মো. কামরুল ইসলাম
বিজয়ের ৫০ বছরের পূর্তিতে ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’ সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। নূরুল আলম আতিকের অনন্য সৃষ্টি এটি। মহান মুক্তিযুদ্ধকে তার রচনায়, পরিচালনায়, সৃষ্টিকে করে তুলেছেন অনন্য। যতক্ষণ ছবি চলেছে ততক্ষণ মনে হচ্ছিল যুদ্ধক্ষেত্রে সব শোষিত বাঙালির এক একটি চরিত্রের মধ্যে নিজেকে খুঁজে পাচ্ছিলাম।
কত জীবন্ত, কত বাস্তবচিত্র ফুটে উঠেছে মুক্তিযুদ্ধকালের খণ্ডিত সময়ের একটি স্থানীয় মানুষের জীবনকালে, যা দিয়ে তুলে আনা হয়েছে পাকবাহিনী আর তাদের দোসরদের অমানবিক ঘটনার প্রবাহচিত্র। মুক্তিযুদ্ধের ওপর দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে অনেক ছবি, নাটক, খণ্ড নাটক, মঞ্চ নাটকসহ অনেক চিত্রনাট্য মঞ্চায়িত হয়েছে। কিন্তু কোথাও যেন পূর্ণতা পাচ্ছিলাম না। কিছুটা অতৃপ্তি, কিছুটা অসমাপ্ত গল্পের পরিসমাপ্তি দেখতে পেয়েছিলাম। কিন্তু নূরুল আলম আতিকের সৃষ্টি ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’ মুক্তিযুদ্ধের সব সৃষ্টিকে পাশ কাটিয়ে পূব আকাশের নতুন সূর্য উদয়ের পূর্বক্ষণে গ্রাম বাংলার মোরগের গলা ছেড়ে ডাক যেন বাঙালির গর্জে ওঠার প্রতিধ্বনিই শোনালো।
প্রতিক্ষণে, প্রতি মূহূর্তে প্রতিবাদের গর্জনের আওয়াজ বের হচ্ছিল। জয়বাংলা ধ্বনি বাঙালির হৃদয়ে ধারণ করা এক মহান কাব্যিক স্লোগানে পরিণত হয়েছিল, যা শত নীপিড়নে কেড়ে নিতে পারেনি। রেডিওতে ভেসে আসা বঙ্গবন্ধুর ইস্পাত কঠিন কণ্ঠে ধ্বনিত হতে দেখেছি বাঙালির লাখো কণ্ঠের সম্মিলন।
ছবিতে প্রতিটি শব্দচয়ন আর অভিব্যক্তি ছিল হৃদয়স্পর্শী। ছবিটি দেখতে গিয়ে মনে হচ্ছিল নিজেই পাক সেনাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলি। ধন্যবাদ নূরুল আলম আতিক, বর্তমান জেনারেশনের কাছে এ ধরনের একটি ছবি বিজয়ের ৫০ বছরে উপহার দেওয়ার জন্য।
দেশ স্বাধীনের ৫০ বছর পর আজ আমরা রঙিন বাংলাদেশের নাগরিক। ৫০ বছর আগে জেগে ওঠা বাংলাদেশের নতুন সূর্য সাদা-কালো বাংলাদেশের অবয়বে নির্মিত ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’। সেই সময়ে নিজের অস্তিত্বকে খুঁজে পাওয়ার, নিজেকে খুঁজে নেওয়ার কি সুন্দর উপস্থাপন। এ সিনেমা মনে করিয়ে দেয় স্পষ্ট করে- এদেশ হিন্দু মুসলমানসহ সবার।
নূরুল আলম আতিক তার দায়িত্ববোধ থেকে ব্যতিক্রমধর্মী একটি মুক্তিযুদ্ধের ছবি ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’ নির্মাণ করেছেন। আমাদের দায়িত্ববোধ থেকে ছবিটি প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে দেখা উচিত। নির্মাতা আরও বেশি দেশাত্মবোধ থেকে আরও সুন্দর সুন্দর বাস্তবধর্মী ছবি উপহার দিতে উৎসাহী হবেন।
আমাদের সবার মধ্যে ধারণাই হয়েছে, যুদ্ধের সব ছবি একইরকম। মুক্তিযুদ্ধকে নিজের মাঝে ধারণ করার মানসে আপনার উত্তরসূরিদের ইতিহাসের অংশীদার করে সময়টাকে ধারণ করুন- ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’ আপনার সন্তানের দেশত্মবোধ তৈরিতে ভূমিকা রাখবে।
বীরত্বগাথা নারীদের প্রতিবাদের এক মহান চিত্র ফুটে উঠেছে ‘লাল মোরগের ঝুঁটিতে। শত্রুসেনাদের শায়েস্তা করতে প্রয়োজনে অস্ত্র হাতে তুলে ধরতেও কার্পণ্য করেনি বাঙালি ললনারা। ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’ তা দেখিয়েছে।
ছবিটি অনেক ভিন্নতায় ভরা। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিকে করেছে মহীয়ান। স্রষ্টার সৃষ্টি থেকে যাবে। বাংলাদেশের শত বছরের পূর্তিতেও যেন নূরুল আলম আতিকের সৃষ্টি ‘লাল মোরগের ঝুটি’কে স্মরণ করতে পারি- সেই প্রত্যাশায় থাকলাম।
লেখক
মহাব্যবস্থাপক, জনসংযোগ
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স
এলএ/জিকেএস