মঞ্চে আজিজুল হাকিমের নতুন নাটক ‘জনকের অনন্তযাত্রা’
জাতীয় শিল্পকলা একাডেমির নিজস্ব প্রযোজনা ‘জনকের অনন্তযাত্রা’ মঞ্চস্থ হবে আজ রোববার ৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় একাডেমির মূল হলে। নাটকটি রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন মাসুম রেজা। অভিনয় করেছেন দেশের প্রথমসারির বেশ কয়েকটি নাটকের দলের সদস্যরা। এরমধ্যে আছেন আজিজুল হাকিম, মুনিরা ইউসুফ মেমী, কামাল বায়েজিদ, সায়েম সামাদ, শামছি আরা সায়েকা, রামিজ রাজু প্রমুখ।
এটি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কেন্দ্র করে তৈরি একটি নাটক। মূলত বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদযাপনের অংশ হিসেবে সরকারি অর্থায়নে নাটকটি নির্মিত হয়েছে।
এর গল্প ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু পরিবারের ওপর ঘটে যাওয়া ইতিহাসের নির্মমতার পর তাকে সমাধিস্থ করার ঘটনা নিয়ে।
নাটকে মৌলভী আব্দুল হালিমের চরিত্রে দেখা যাবে আরণ্যক নাট্যদলের আজিজুল হাকিমকে।
আব্দুল হালিমের স্ত্রীর চরিত্রে থিয়েটার, আরামবাগের মুনিরা বেগম মেমী, কনস্টেবল সিরাজ চরিত্রে ঢাকা থিয়েটারের সাজ্জাদ আহমেদ, লুলু ও আব্দুল হাই চরিত্রে দেশ নাটকের মাঈন হাসান, এসডিপিও নুরুল আলম চরিত্রে নাট্যকেন্দ্রের নিয়াজ মোহাম্মাদ তারিক, নুরুল আলমের স্ত্রী ও দিপালী চরিত্রে পদাতিক নাট্য সংসদ, টিএসসির সৈয়দা শামছি আরা সায়েকা, মেজর চরিত্রে পালাকারের শামীম সাগর, পোস্টমাস্টার আনোয়ার চরিত্রে ঢাকা পদাতিকের ড. খন্দকার তাজমি নূর, খন্দকার মুশতাক আহমদ চরিত্রে ঢাকা থিয়েটারের কামাল বায়েজীদ, চিফ চরিত্রে থিয়েটারের মারুফ কবির, মেজর হায়দার চরিত্রে প্রাঙ্গনেমোরের রমিজ রাজু, কর্নেল রউফ চরিত্রে পদাতিক নাট্য সংসদ, টিএসসির সায়েম সামাদ, ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন চরিত্রে প্রাচ্যনাটের সাইফুল জার্নাল, সালমান চরিত্রে দেশ নাটকের নাজমুল আলম লিমন, জ্ঞাতিচাচা মোশাররফ চরিত্রে দেশ নাটকের কামাল আহমেদ ও ঢাকা পদাতিকের তারেক আলী মিলন, ওসি আব্দুল জলিল চরিত্রে যশোরের বিবর্তন দলের সজীব বিশ্বাস, চাপরাসি চরিত্রে দেশ নাটকের শেখ নাইমুর রহমান অভিনয় করবেন।
সেনাদলে দেখা যাবে দেশ নাটকের ইব্রাহীম হোসেইন, আহমেদ ফারদিন, প্রাচ্যনাটের আরিফুল ইসলামকে।
দৃশ্যসজ্জা দলে আছেন দেশ নাটকের নাজমুল আলম লিমন, ইব্রাহীম হোসেইন, আরিফুল ইসলাম, আহমেদ ফারদিন শেখ নাইমুর রহমান, তাওহীদা ইসলাম তানহা।
নাট্যকার ও নির্দেশক মাসুম রেজার সঙ্গে আছেন সহকারী নির্দেশক অয়ন চৌধুরী, আলোক পরিকল্পনায় নাসিরুল হক খোকন, তার সহকারী ফারুক খান টিটু, মঞ্চ পরিকল্পনা ও প্রপস আলি আহমেদ মুকুল, তার সহকারী কাজী কোয়েল, পোশাক পরিকল্পনা ওয়াহিদা মল্লিক জলি, তার সহকারী মহসিনা আক্তার, সহযোগী রাশেদ কবির সৌমিক, কপোতাক্ষী নূপুরমা সিঞ্চি, সংগীত পরিকল্পনা ফোয়াদ নাসের বাবু, সহকারী ইমামুর রশিদ খান, সহযোগী শাহেদ নাজির হেডিস, রূপসজ্জা পরিকল্পনায় শুভাশীষ দত্ত তম্ময়, পোস্টার ডিজাইনার চারু পিন্টু, স্যুভেনির অলঙ্করণ আহসান হাবীব বিপু, প্রযোজনা ব্যবস্থাপক এহসানুল আজিজ বাবু, নির্মাণ ও মঞ্চায়ন নির্বাহী আলি আহমেদ মুকুল, প্রযোজনা তত্ত্বাবধান আফসানা করিম।
প্রযোজনা উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন লিয়াকত আলী লাকী।
নাট্যকার ও নির্দেশক মাসুম রেজা এ নাটক নিয়ে বলেন, ‘জনকের অনন্তযাত্রা রচনার অভিপ্রায় ইতিহাস সংরক্ষণ নয়। এ রচনার প্রকৃত অভিপ্রায় ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্টের ঘটনাবলিকে গল্পের আশ্রয়ে উপস্থাপন করা। ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে সংগঠিত হয় পৃথিবীর ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড। বাঙালির স্বাধীনতার ইতিহাসের প্রতিটা শব্দ, প্রতিটা পঙক্তি, প্রতিটা পাতার রচয়িতা যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাকে হত্যা করা হয় সেই ভয়াল রাতে।
হত্যা করা হয় তার পুরো পরিবারকে, যেখানে ছিল ১০ বছর বয়সী একজন শিশুও। পরদিন ভোরে পরিবারের সবাইকে সমাধিস্থ করা হয় রাজধানীর বনানী কবরস্থানে। কেবল বঙ্গবন্ধুকে কফিনে করে নিয়ে যাওয়া হয় তার চিরচেনা নিজভ‚মি টুঙ্গিপাড়ায়। একজন রাষ্ট্রপতিকে তার শেষ শয্যায় শায়িত করা হবে, অথচ নেই কোনো রাষ্ট্রীয় আয়োজন। কী নিদারুণ অবহেলা সবকিছুতে।
অন্তিম স্নান, কাফনের কাপড়, জানাজা, কোনো কিছুর যোগাড় নেই। তবু সমস্ত ভয়ভীতি উপেক্ষা করে সেদিন ছুটে এসেছিল আশপাশের সাধারণ মানুষ। একজন মুসলমানকে যেভাবে সমাধিস্থ করা হয়, সেভাবেই হয়েছিল পিতার অন্তিম শয়ান। যারা সেদিন সেই শোকার্ত আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন, তাঁদের মুখ থেকে শ্রæত ইতিহাস বিধৃত আছে নানান জায়গায়, নানানভাবে। যা অনেকাংশেই রয়ে গেছে ইতিহাসের অগোচরে। বঙ্গবন্ধুকে সমাধিস্থ করার পূর্বাপর ঘটনাসমূহ আমাদের অনেকের কাছেই অস্পষ্ট বা অজানা।
নানান তথ্য, তত্ত্ব ও গবেষণার মাধ্যমে ১৬ আগস্টের সারাদিনের খণ্ড খণ্ড চিত্র জোড়া দিয়ে সাজানো হয়েছে জনকের অনন্তযাত্রা নাটকের গল্প। তাতে হয়তবা সময়ের ক্রমানুসারে কিছুটা এদিক-ওদিক হয়েছে। এ নাট্যে সেদিনের ইতিহাস হয়ে উঠেছে গল্প নির্ভর, আর গল্পটা হয়েছে ইতিহাস নির্ভর। জনকের অনন্তযাত্রা ইতিহাসের নিংড়ানো নির্যাস, এক নির্মম বেদনাগাথা। নির্দেশক হিসেবে এই নাটক মঞ্চে আনার সবচেয়ে বড় দায়টা তাই আমার কাছে মনে হয়েছে, সেদিনের ঐতিহাসিক সত্যকে সমুন্নত রেখে তীব্র বেদনার গল্পটা দর্শকের সামনে মূর্ত করে তোলা। আমি মনে করি, ইতিহাস বিকৃতির চেয়ে ইতিহাস বিস্মৃতি অধিক গর্হিত কাজ। সেই দায়বদ্ধতা থেকেই এই নাটকের রচনা ও নির্মাণ।
'কালের বিবর্তনে যেন আমাদের মহাবিজয়ের মহানায়কের অনন্তযাত্রা আমরা বিস্মৃত না হই। এই নাট্যদর্শনে আমরাও যেন অংশ নিতে পারি তার অন্তিমযাত্রায়। জনকের অনন্তযাত্রা মুজিব শতবর্ষ পালনের উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির প্রযোজনা। শিল্পকলার আয়োজনে দেশের ৬৪ জেলায় ৬৪টি নাটক প্রদর্শিত হয়েছে।
‘জনকের অনন্তযাত্রা’ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির কেন্দ্রীয়ভাবে আয়োজিত নাটক। নাটকটি রচনা ও নির্দেশনার দায়িত্ব পেয়ে আমি অত্যন্ত আনন্দিত ও গর্বিত। শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী আমার সৃজনশীলতার প্রতি আস্থা রেখেছেন বিধায় তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এ নাটকের অভিনয় ও কারিগরি দিকে কাজ করেছেন তারা ঢাকার বিভিন্ন থিয়েটার দলের সদস্য। তাদের মেধা, ঘাম, নিষ্ঠা ও শ্রমে নির্মিত এই নাটক আপনাদের সমীপে নিবেদন করছি।’
এলএ/এমএ