দায়িত্ব ছাড়ছেন কোচ মারুফুলও


প্রকাশিত: ০১:১১ পিএম, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৫

সাফ বিপর্যয়ের পর যেন পদত্যাগের হিড়িক পড়ে গেছে বাংলাদেশের ফুটবলে। অধিনায়ক মামুনুল ইসলামের আগেই অবশ্য বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের কোচ হিসেবে আর দায়িত্ব পালন না করার ঘোষণা দিয়েছেন মারুফুল হক। ইউরোপ থেকে কোচিংয়ে সর্বোচ্চ ট্রেনিং (উয়েফা ‘এ’ লাইসেন্স) নিয়ে আসার পরই ইতালিয়ান ফ্যাবিও লোপেজকে সরিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল মারুফুলকে। তবে প্রথম চুক্তিটা তার ছিল শুধুমাত্র সাফ ফুটবল পর্যন্তই।

সাফে সাফল্য তো দুরে থাক, নু্ন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বীতাও দেখাতে ব্যার্থ হলো বাংলাদেশ দল। আফগানিস্তান এবং মালদ্বীপের কাছে ৭ গোল হজম করে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছে বাংলাদেশ দল। শেষ ম্যাচে ভূটানের বিপক্ষে শুধুই আনুষ্ঠানিকতা। তার আগেই কোচ মারুফুল হক ঘোষণা দিলেন, সাফ শেষ করে এসে আর জাতীয় দলের দায়িত্বে থাকবেন না। এমনকি এটাও বলেছেন তিনি, বাফুফে চাইলেও তিনি আর কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন না।

ইতালিয়ান ফ্যাবিও লোপেজকে বরখাস্ত করে মারুফুল হককে জাতীয় দলের কোচ নিয়োগ দিয়েছিল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। ঘরোয়া ফুটবলের অন্যতম সফল কোচ প্রথম বারের মতো লাল সবুজ জার্সিধারীদের দায়িত্ব পেয়েছিলেন সাফ সুজুকি কাপ পর্যন্ত। স্বাভাবিক ভাবেই সাফের পর তার মেয়াদ বৃদ্ধি পাবে কিনা তা নির্ভর করছিল বাফুফের আগ্রহের উপর; কিন্তু তার আগেই দায়িত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে বসলেন মারুফুল হক।

নিয়োগ পাওয়ার পর সাফ ফুটবলকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলেন মারুফুল। বলেছিলেন, তিনি বাংলাদেশকে ফিরিয়ে এনে দেবেন দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব; কিন্তু টানা দুই ম্যাচ হেরে ভারতের কেরালায় সমাধি হয়েছে মারুফুলের স্বপ্নের। ঠিক সে আক্ষেপেই তিনি জানিয়ে দিয়েছেন সাফ পর্যন্ত দায়িত্ব ছিল তার, থাকবেন সাফ পর্যন্তই। বাফুফে আগ্রহ দেখালেও তিনি থাকবেন না। এমন কি সাফের ব্যর্থদার দায় দায়িত্বও নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন তিনি। ব্যর্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন।

কেরালায় মিডিয়াকে মারুফ বলেছেন, ‘আমার সঙ্গে বাফুফের চুক্তি ছিল এই সাফ পর্যন্ত। জানি না, এই চুক্তি নবায়ন করা হবে কি না। তবে আমার উপলব্ধি হচ্ছে, আমার সময়েই সাফে বাংলাদেশ সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা দেখিয়েছে। তাই বাফুফে চাইলেও কোচের পদে আমার আর না থাকাটাই ভাল। আমি না থাকারই পক্ষে।’ আশা পূরণ করতে না পেরে দেশবাসীর কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন মারুফ, ‘বড় আশা নিয়ে বাফুফে আমাকে কোচের দায়িত্ব দিয়েছিল; কিন্তু আমি ব্যর্থ হয়েছি। তাই দেশবাসীর কাছে আমি ক্ষমা চাইছি।’

২০০৮ সালে ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেডের হয়ে কোচিং ক্যারিয়ার শুরু মারুফুলের। দুই বছরে ক্লাবটির হয়ে জিতেছেন দুটি ফেডারেশন কাপ ও একবার সুপার কাপ। আর প্রিমিয়ার লিগে দল হয় অপরাজিত রানার্সআপ। এরপর ২০১০ সালে চলে যান মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রে। লিগে দল হয় রানার্সআপ। ২০১২ সালে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের হয়ে কিছু জিতলে না পারলেও ২০১৩ সালে ঐতিহাসিক ‘ট্রেবল’ (প্রিমিয়ার লিগ, ফেডারেশন কাপ ও স্বাধীনতা কাপ) জেতার স্বাদ পান তিনি।

এর আগে ১৯৮২ সালে মোহামেডান এমন ট্রেবল জয়ের নজির গড়েছিল। চতুর্থ শিরোপাটিও জিততে পারতো রাসেল; কিন্তু সুপার কাপের ফাইনালে টাইব্রেকারে হেরে গেলে আর ইতিহাস গড়তে পারেনি মারুফুলের শিষ্যরা। ২০১৪ সালে শেখ জামাল ধানমন্ডির হয়ে প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জেতার পর ভুটানে গিয়ে জেতেন কিংস কাপের শিরোপা। এরপর জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব পান। তাঁর আসল এ্যাসাইনমেন্ট ছিল-সাফ সুজুকি কাপ। বহুল আলোচিত এই আসরে বাংলাদেশকে এক যুগ পর শিরোপা জেতানো দূরে থাক, গ্রুপ পর্বেই বাদ পড়ে মারুফুল হকের বাংলাদেশ দল।

আইএইচএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।