মন্দায় কেটেছে কলকাতার ছবির বাজার

বিনোদন ডেস্ক
বিনোদন ডেস্ক বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:৩৭ পিএম, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৫

ভাষাটা বাংলা বলেই কলকাতার চলচ্চিত্রের প্রতি এদেশের মানুষের অন্য রকম একটা ভালো লাগা কাজ করে। আর তাই নানা সময়ে দুই বাংলা মিলে নির্মাণ করেছে বেশ কিছু সফল ছবি। একটা সময় ঢাকাই ছবির থেকে সবকিছুতেই পিছিয়ে থাকলেও বর্তমানের প্রেক্ষাপটটা ভিন্ন। কলকাতা এখন ভিন্ন ঘরনার চলচ্চিত্র নির্মাণের আতুর ঘর।

অল্প বাজেটে সেখানে নির্মিত হচ্ছে মন মাতানো সব গল্পের ছবি। যেখানে বাণিজ্যিক ও বিকল্পধারা- দুটি ক্ষেত্র থেকেই প্রযোজকরা টাকা লগ্নি করছেন, পরিচালকরা ছবি বানাচ্ছেন, কলাকুশলীরা পর্দায় আসছেন। পাশাপাশি বিগ বাজেটেও নির্মিত হচ্ছে গতানুগতিক বাণিজ্যিক ধারার চলচ্চিত্র। প্রসেনজিত, জিৎ, দেব ও সোহম, অঙ্কুশ, আবির, শ্রাবন্তী, শুভশ্রী, মিমি, পায়েল, রাইমাদের অভিনয়ে এইসব ছবগিুলো পাচ্ছে তুমুল জনপ্রিয়তা। যদিও চলতি বছরটা একেবারেই ভালো যায়নি বলে দাবি পশ্চিম বাংলার সিনে সাংবাদিকদের।

পুজা নির্ভর ছবির বাজার
কলকাতার বাঙালিরা নাকি বছরের একটা সময়েই ছবি দেখে! সেটা হলো দুর্গাপূজা। তাই চলতি বছরের পুজায় গুঁতোগুঁতি করে পাঁচখানা বাংলা ছবি মুক্তি পেল। সেগুলো হলো- ‘রাজকাহিনি’, ‘শুধু তোমারই জন্য’, ‘কাট-মুণ্ডু’, ‘ব্যোমকেশ বক্সী’ এবং ‘ক্রস কানেকশন টু’। ব্যবসায় এগিয়ে আছে রোমান্টিক ছবি ‘শুধু তোমারই জন্য’।

ছবির বাজারে মহাপতন
টালিগঞ্জের বড় বড় প্রযোজনা হাউজগুলো এ ব্ছরে একদম ব্যবসা করতে পারেনি। তাদের ঝুলিতে নেই হিট ছবি। বিশেষ করে শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মস বছরের শুরু থেকেই ফ্লপ ছবি ভূমিষ্ঠ করেছে। তারপর সারা বছরে ‘হিরোগিরি’, ‘ছোটদের ছবি’, ‘নির্বাক, ‘রোগা হওয়ার সহজ উপায়’, ‘অমানুষ টু’ ফ্লপের তালিকা বেশ লম্বা। তবে ‘শুধু তোমারই জন্য’ এবং ‘হর হর ব্যোমকেশ’ শেষমেশ তাদের খানিক মান রেখেছে।

সুপারস্টারদের চিতপটাং
প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়-জিৎ-দেবরা ওপার বাংলার সুপারস্টার। কিন্তু তাদের কেউই এ বছরে ভেলকি দেখাতে পারেননি। প্রসেনজিতের ‘লড়াই’ মুক্তি পেয়েছিল জানুয়ারি মাসে। যেটা বক্স অফিসে কোনো লড়াই করতে পারেনি। জিতের মোটে একটাই ছবি মুক্তি পেয়েছে ‘বেশ করেছি প্রেম করেছি’। কিন্তু জিৎ যে মাপের স্টার সে তুলনায় ‘বেশ করেছি...’কে সফল বলা যায় না। দেবের একটি হিট, একটি ফ্লপ। সুপারস্টারদের এমন করুণ অবস্থা হলে বাংলা ইন্ডাস্ট্রি কাদের মুখ দেখে বাঁচবে সে প্রশ্ন টালিগঞ্জের পথে পথে।

এক পলকে ব্যবসা সফল ছবিগুলো
শত মন্দার ভিতরেও বেশ কিছু ছবি মান রক্ষা করেছে টলিপাড়ার। বেশ কিছু ছবি হলে মানুষ টেনেছে। গল্প, নির্মাণ, তারকার শক্তিতে ভর করে ছবিগুলো পার পেয়েছে লোকসান থেকে। এক পলকে সেই ছবিগুলোর তালিকাটা দেখে নেয়া যাক-

বেলাশেষে
শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও নন্দিতা রায়ের এ ছবি এবছরের সেরা ছবি। মেইনস্ট্রিম ও আর্টহাউসের দ্বন্দ্ব বেশ কিছুদিন আগে থেকেই মুছে যাচ্ছিল সাম্প্রতিক বাংলা সিনেমার দুনিয়ায়। এ ছবি যেন স্পষ্ট করে দেখিয়ে দিয়েছিল সে পথ। এ ছবিতেও ছিল অনসম্বল কাস্টিং। ‘ঘরে বাইরে’র পর আবার একসঙ্গে পাওয়া গিয়েছিল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও স্বাতীলেখা সেনগুপ্তকে। ছবিতে ছিলেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, খরাজ মুখোপাধ্যায়, ইন্দ্রাণী দত্ত, মনামী ঘোষের মতো একঝাঁক তারকা। সবার উপরে ছিল সম্পর্কের এক গভীর কথা। দাম্পত্যের অভ্যাস আর প্রেমের দ্বন্দ্ব ও মীমাংসা সুচিত্রা ভট্টাচার্যের কাহিনির অক্ষর থেকে অসামান্য মুনশিয়ানায় পরদায় তুলে এনেছিলেন পরিচালক জুটি।

রাজকাহিনী
এ বছরের সর্বাধিক আলোচিত ছবি। পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়।  দেশভাগের প্রেক্ষিতে পতিতা রমণীদের যন্ত্রণার বয়ানে প্রান্তিক মানুষের লড়াইয়ের কাহিনি তুলে এনেছিলেন পরিচালক। ছবিতে অসাধারণ অভিনয় করেছিলেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। তার অভিনীত বেগম জান বাংলা সিনেমার ভাঁড়ারে সেরা প্রাপ্তি সন্দেহ নেই। তবে পরিচালনার বেশ কিছু ত্রুটি ক্ষুব্ধ করেছিল সমালোচকদের।

নির্বাসিত
অভিনেত্রী চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়ের পরিচালক হিসেবে অভিষেক হল এ ছবিতে। বাংলাদেশি লেখিকা তসলিমা নাসরিন আর তার আদরের বিড়াল মিনুকে বাংলা ছবির অন্দরমহলে হাত ধরে নিয়ে এসে বাংলা ছবির জরির আঁচলে তিনি এঁকে দিলেন নিজের ঘরানার নকশা। প্রথম পরিচালিত ছবিতেই এসেছিল জাতীয় পুরস্কার। তবে এ ছবি কোনোভাবেই বায়োপিক নয়। নারী স্বাধীনতার পাশাপাশি, বাক স্বাধীনতার পক্ষেও জোরদার সওয়াল ছিল এ ছবিতে। বাংলা সিনেমার ইতিহাসে নিঃসন্দেহে এ ছবি এ বছরের সেরা সংযোজন।

ছোটদের ছবি
মায়ামাখা পরদায় যারা উচ্চতায় ছোট তাদের অস্বস্তি, তাদের প্রেম-দুঃখ না পাওয়ার যন্ত্রণা এঁকেছিলেন পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। একইরকম বিষয় বাংলা সিনেমার দর্শক দেখেছিলেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর ‘উত্তরা’ ছবিটিতেও। তবে কৌশিক স্বতন্ত্র তার নিজস্ব সিনেমার ভাষায়, আঙ্গিকে৷ ছবিতে যারা অভিনয় করেছিলেন- দুলাল সরকার ও দেবলীনা রায়-দুজনেই ব্যক্তিগত জীবনে পেয়েছেন এই অভিজ্ঞতা। আর এ ছবিতে তাই যেন জীবনের বাস্তবতা আর ছায়াছবির বাস্তবতা কোথাও মিলে গিয়েছিল এক বিন্দুতে। জাতীয় পুরস্কার তো বটেই।  এ ছবিই দেশে প্রথম টালিগঞ্জকে এনে দিয়েছে ইউনেসকোর ফেলিনি পুরস্কার।

ওপেন টি বায়োস্কোপ
ফেলে আসা ছোটবেলা, নস্ট্যালজিয়া, পাড়ার পুরনো গন্ধ-পরদায় যেন মন কেমনের কবিতা লিখেছিলেন অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়। প্রথম ছবিতেই বাংলা সিনেমাকে তিনি দিয়েছেন এ অসাধারণ উপহার। এ ছবি যেমন বাঙালির মন ও মননের, তেমনই সফল বক্স অফিসেও। আর এ ছবিতেই বাংলা ছবি পেয়েছে একঝাঁক তরুণ প্রজন্মের অভিনেতাকে। ঋদ্ধি সেন, ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়রা যে আগামীদিনে বাংলা ছবিকে অভিনয়ে ভরিয়ে রাখবেন তার ইঙ্গিত দিয়ে গেল এ ছবিই।

শুধু তোমারই জন্য
টলিউডের এবারের অন্যতম বাণিজ্যসফল ছবি। বীরসা দাশগুপ্তর এ ছবির ইউএসপি ছিলেন দেব। সুপারস্টারের কাঁধেই ছিল বাণিজ্য-তরণী পার করানোর ভার। তিনি তা করেছেন সফলভাবেই। ছবিতে দেব থাকলেও, আসলে এ ছবির কাস্টিং অনসম্বল। ছবিতে ছিলেন আরও এক নায়ক সোহম। ছিলেন দুই নায়িকা শ্রাবন্তী ও মিমি। প্রেমের গভীরতাকে সম্বল করেই এ ছবি বাজিমাত করেছিল।

নাটকের মতো
নাট্যবক্তিত্ব কেয়া চক্রবর্তীর জীবনের ছায়ায় তৈরি এ ছবি। যদিও এ ছবি কোনো বায়োপিক নয়। ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রের নাম ছিল খেয়া। দেবেশ চট্টোপাধ্যায়ের প্রথম ছবিতে উঠে এসেছিল বাংলা থিয়েটার দুনিয়ার এক বহু আলোচিত ইতিহাস। অভিনেত্রী পাওলি দামকে পাওয়া গিয়েছিল একেবারে অন্য রূপে। জীবন-কল্পনা-বাস্তবের মেলবন্ধনে সিনেমা ও নাটকের মতো দুটো ভিন্ন ফর্মকে অসামান্য দক্ষতায় মিলিয়ে দিয়েছিলেন পরিচালক। বাংলা সিনেমায় নিঃসন্দেহে এ ছবি এক ল্যান্ডমার্ক।

জামাই ৪২০
মজার ছবি। মেইনস্ট্রিম বাংলা ছবির আরো সাফল্যের কান্ডারি। তিন যুবকের প্রেম আর পরিবারের বড়দের ঠিক করে দেওয়া বিয়ের পাত্রী- এই সমীকরণেই নানা মজা জমেছিল পরদায়। রবি কিনাগীর পরিচালনায় এ ছবিতে ছিলেন সোহম, হিরণ, অঙ্কুষ, মিমি, নুসরত ও পায়েল। সপরিবারে দেখার মতো মজার উপাদান ছবিতে রেখেছিলেন পরিচালক, আর তাতেই বক্স অফিসে বাজিমাত হয়েছিল।

এবার শবর
অরিন্দম শীলের এ ছবিতেই এ বছরটা শুরু হয়েছিল। লালাবাজারের গোয়েন্দা শবর দাশগুপ্তকে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের কাহিনি থেকে পরদায় তুলে এনেছিলেন পরিচালক। বাংলা ছবিতে পাওয়া গেল আরও এক গোয়েন্দাকে। শবর হয়ে দেখা দিয়েছিলেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়কে। নতুন গোয়েন্দার হাত ধরে বছরের শুরুতেই জোরদার সাফল্য এসেছিল বাংলা সিনেমার ইন্ডাস্ট্রিতে।

ব্যোমকেশ বক্সি
কলকাতার ছবি বাজারে গতবছরটা ছিল গোয়েন্দাদের দখলে। এবারও তারা ছিলেন স্বমহিমায়। তবে এবার ফেলুদা নেই। পরিবর্তে পাওয়া গেল দুই ব্যোমকেশকে। অঞ্জন দত্তের ব্যোমকেশ হয়ে ছবিতে দেখা গিয়েছিল যীশু সেনগুপ্তকে। অজিত হিসেবে অপরিবর্তিত ছিলেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়৷ তার অভিনয়ে ব্যেমকেশ নতুন মাত্রা পেল৷ তবে ছবির ভালোমন্দ নিয়ে নানারকম সমালোচনা ছিল।

সূত্র : অনলাইন

এলএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।