বিশ্বজুড়ে বড়দিন
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব বড়দিন (ক্রিসমাস) আজ। এই দিনে যিশু খ্রিস্ট পৃথিবীতে আসেন। বিশ্বজুড়ে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় এই উৎসব উদযাপন করা হচ্ছে।
বাইবেলের তথ্য অনুযায়ী, জেরুজালেম থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণের বেথলেহেম শহরে জন্ম নেন যিশু। বড়দিন উদযাপনে এই শহরের রাস্তাগুলো আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে আজ। উৎসবের আমেজ মেতে উঠেছে নারী-পুরুষ, শিশুসহ সব বয়সী মানুষ। এবার ক্রিসমাস উদযাপনে শহরটিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পর্যটকরা আগেই চলে এসেছেন। চার্চ অব ন্যাটিভিটিতে ভিড় জমাচ্ছেন তীর্থযাত্রীরা।
বাংলাদেশে মাত্র ০.০৪ শতাংশ খ্রিস্টানের বসবাস। সংখ্যায় কম হলেও দেশের বিভিন্ন স্থানে আজ বড়দিন উদযাপনে মেতে উঠেছে ক্রিস্টান ধর্মালম্বীরা। এবছর বড়দিনে গির্জাগুলোতে এবং খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের জন্য বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে প্রশাসন। নিরাপত্তা প্রশ্নে যাজকদের বিশেষ নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। বড় গির্জাগুলোতে স্থায়ী পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কোথাও দুজন, তিনজন অথবা চারজন পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও সাদা পোশাকে টহল দিচ্ছেন।
গত ১৩ নভেম্বর ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ভয়াবহ জিঙ্গি হামলার পর শোক কেটে উঠে দেশটির মানুষ বড়দিন উদযাপন করছেন। দেশটিতে ক্রিসমাসকে নোয়েল বলা হয়। সান্তা ক্লজকে বলা হয় পেরি নোয়েল। ক্রিসমাস ট্রি বড়দিনের অন্যতম অনুসঙ্গ। দেশে দেশে নিত্য নতুন রুপে ক্রিসমাস ট্রি সাজানো হলেও ফ্রান্সে পুরনো স্টাইলেই সাজানো হয়। ট্রির ওপর লাল রঙের রিবন মুড়িয়ে তার সঙ্গে সাদা মোম বাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে।
এদিকে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি হিন্দুধর্মাবলম্বীদের আবাস ভারতে হলেও বড়দিন উদযাপন করা হচ্ছে। এছাড়া দেশটিতে মুসলিম ধর্মাবলম্বীরাও রয়েছেন। সে হিসেবে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী মানুষ খুবই কম। তারপরও খ্রিস্টানদের বড়দিন বেশ ঘটা করেই পালন করা হচ্ছে। ভারতে ক্রিসমাস ট্রি সাজানো হয়েছে আমগাছ বা কলাগাছ দিয়ে। দক্ষিণ ভারতে, তামিলনাড়ু কেরালা-কর্ণাটক- অন্ধ্রপ্রদেশের সবার ঘরের ছাদে ছোট ছোট মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখা হয়েছে। ভারতে সান্তা ক্লজকে ক্রিসমাস বাবা নামে ডাকা হয়।
বিশ্বের যেকোনো শহরের মতোই নিউইয়র্ক শহরের আনাচকানাচে বড়দিনের আনন্দের হাওয়া বইছে। নিউইয়র্কের আকাশ-বাতাস বিদীর্ণ করে বড়দিন নিয়ে মাতামাতি চলছে। শহরের আনাচকানাচে ক্রিসমাস নিয়ে সব বয়সীদের আনন্দে মেতে উঠেছে।
ইতালিতে ৮ ডিসেম্বর থেকে বড়দিন উদযাপন শুরু হয়েছে। বড়দিন এ উৎসব চলবে ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত। ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনের পাশাপাশি ২৬ ডিসেম্বর সেইন্ট স্টিফেনস ডে পালন করা হয় দেশটিতে।
বিশ্বজুড়ে ২৫ ডিসেম্বর ক্রিসমাস পালন করা হলেও ইতালির মতো রাশিয়ায় ৭ জানুয়ারি থেকে পালন করা হচ্ছে। রাশিয়ার অর্থোডক্স চার্চ ধর্মীয় অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারণের ক্ষেত্রে পুরোনো জুলিয়ান ক্যালেন্ডারকে বেশি প্রাধান্য দেয়ায় দেশটিতে আগে থেকেই উদযাপন শুরু হয়েছে। তবে অনেকেই ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন পালন করছেন। রাশিয়ায় ক্রিসমাসের চেয়ে নববর্ষ উদযাপনে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়।
ব্রাজিলের সাও পাওলো, রিও ডি জেনিরোর মতো বড় বড় শহরগুলো সহ দেশটিতে বড়দিন উদযাপনে মাতোয়ারা হয়ে উঠেছে সব বয়সী মানুষ। তুষারপাত না হওয়ায় ক্রিসমাস ট্রি’র উপরে তুলো দিয়ে বরফের মতো বানিয়ে রাখা হয়েছে। সান্তা ক্লজকে পাপাই নোয়েল নামে ডাকা হয় দেশটিতে। এই দিনে চকলেট ও কনডেন্সড মিল্ক দিয়ে ব্রিগেডেইরো নামে এক ধরনের খাবার দেশটিতে বেশ জনপ্রিয়। ২৫ ডিসেম্বর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চার্চগুলোতে ‘মিসা দ্য গ্যালো’ উদযাপনে মেতে উঠবে সব বয়সীরা।
এসআইএস/এমএস