বরিশালে বিএনপির প্রার্থীরা বেকায়দায়

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৫:৫১ পিএম, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৫

বরিশাল বিভাগের ১৭ পৌরসভায় বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এবং বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার নেতারা দলের মধ্যে ক্ষোভ-হতাশা আর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রচারণায় বাঁধা, হামলা এবং হুমকি-ধামকির অভিযোগ করেছেন।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে তারা অভিযোগ করেন, আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য বরিশাল বিভাগের ১৭ পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির শত্রু এখন বিএনপি। কেউ প্রকাশ্যে দল মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধাচারণ করছেন, আবার কেউ প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর হয়ে কাজ করছেন, আবার কোথাও কোথাও মান-অভিমান আর পাওয়া-না পাওয়ার হতাশায় নিজেকে নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন। এতে দল মনোনীত বিএনপি প্রার্থীরা অনেকটা বেকায়দায় পড়েছেন।

তবে সবগুলো পৌরসভায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে হামলা, প্রচারণায় বাঁধা এবং হুমকি-ধামকির অভিযোগও করেছেন ১৭ পৌরসভায় বিএনপি মনোনীত প্রার্থীরা।

শুক্রবার সন্ধ্যায় নগরীর সদর রোডের বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে বরিশাল বিভাগীয় পৌর নির্বাচন মনিটরিং সেলের প্রথম সভায় কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে এসব অভিযোগ করেন তারা।

তবে সব কিছু ছাপিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের অংশ হিসেবে এই পৌর নির্বাচনকে সবাইকে ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নামার আহ্বান জানান কেন্দ্রীয় নেতারা।  

মনিটরিং সেলের আহ্বায়ক বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি সেলিমা রহমানের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন সেলের সদস্য সচিব কেন্দ্রীয় বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি এবায়েদল হক চাঁন, উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি মেজবাউদ্দিন ফরহাদ, সাধারণ সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য মাহবুবুল হক নান্নু, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম নয়ন এবং কলাপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি এবিএম মোশাররফ হোসেন প্রমুখ।

সভায় মুলাদী পৌরসভায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী আসাদ মাহমুদ ও গৌরনদী পৌরসভায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী শরীফ শফিকুল ইসলাম স্বপন অভিযোগ করেন, তাদের স্ব-স্ব উপজেলা ও পৌর কমিটির বেশীরভাগ শীর্ষ নেতারা নির্বাচনের মাঠে নেই। ক্ষমতাসীনদের উৎপাতের পাশাপাশি নিজ দলীয় কর্মীদের সহায়তা না পাওয়ায় সভায় কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে ক্ষোভ আর হতাশা প্রকাশ করেন তারা।

আসাদ মাহমুদ বলেন, বিএনপির একটি অংশ গোপনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আতাত করেছে। এমনকি বেগম জিয়ার প্রার্থীকে স্বেচ্ছাসেবক দলের ব্যানারে এলাকায় অবাঞ্চিত করা হয়েছে।

জবাবে মুলাদী উপজেলা বিএনপি সভাপতি আব্দুস সাত্তার খান বলেন, তিনি গত পৌরসভায় মেয়র পদে এবং উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন, তখন আসাদ মাহমুদ তার বিরোধীতা করেছিল, এ কারণে দলের ক্ষুদ্ধ নেতাকর্মীরা আসাদ মাহমুদের পক্ষে নামছেন না।

গৌরনদীর শফিকুল ইসলাম স্বপন বলেন, নীরব থাকা নেতাদের মাঠে নামাতে তিনি কেন্দ্রের অনেক নেতার কাছে ধর্ণা দিয়েও সুফল পাননি।

বাকেরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হোসেন খান বলেন, তার পৌরসভার মেয়র প্রার্থী মতিউর রহমান মোল্লা আর্থিকভাবে দুর্বল হওয়ায় নির্বাচনী প্রচারণায় পিছিয়ে রয়েছেন।

ঝালকাঠী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম নুপুর বলেন, নলছিটি পৌরসভায় বিএনপির নেতাকর্মীরা দল মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন না। যারা দলের প্রার্থীর বিরোধীতা করছেন, তাদেরকে সাময়িক নয়, আজীবনের জন্য দল থেকে বহিস্কারের দাবি জানান তিনি।

বরগুনার পাথরঘাটা পৌরসভার মেয়র প্রার্থী আইয়ুব মল্লিক বলেন, তিনি ও তার কর্মী-সমর্থকরা প্রচার-প্রচারণায় নামতে পারছেন না। ক্ষমতাসীনরা তার পোস্টার ছিড়ে ফেলছে, প্রচারে বাধা দিচ্ছে, এমনকি দফায় দফায় হামলাও করছে। এ বিষয়ে কেন্দ্রের হস্তুক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

ভোলার দৌলতখান পৌরসভায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী আনোয়ার হোসেনও একই অভিযোগ করেছেন।

এদিকে পিরোজপুর সদর পৌরসভায় মেয়র পদে বিএনপি প্রার্থী দিতে না পাড়ায় সেখানকার জেলা বিএনপির নেতাদের সভায় প্রকাশ্যে ভৎসনা করেন মনিটরিং সেলের সদস্য সচিব মজিবর রহমান সরোয়ার।

বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি এবায়েদুল হক চাঁন বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা আন্দোলন করতে গিয়ে মামলা হামলায় বিপর্যস্ত-হতাশাগ্রস্থ। তারা মামলায় হাজিরা দিতে দিতে নিঃস্ব হয়ে গেছে। অনেক পৌরসভার মেয়র প্রার্থীর টাকা নেই। নেতাকর্মীরা নির্বাচনী প্রচারণার খরচ পর্যন্ত যোগাড় করতে পারছে না। তাই কেন্দ্রের কাছে নির্বাচনী তহবিল দেয়ার দাবি জানান তিনি।

সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন বলেন, অনেকেরই ধারনা বিএনপি নির্বাচনী মাঠ থেকে সরে দাঁড়াবে। কিন্তু বিএনপি চেয়ারপারসন এবং ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব স্পষ্ট করে বলেছেন, যুদ্ধ করে হলেও শেষ দিন পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থাকতে হবে।

মনিটরিং সেলের সদস্য সচিব ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, নেতাকর্মীরা হামলা-মামলায় বিপর্যস্ত। পৌর নির্বাচনে বিএনপির ঝিমিয়ে পড়া নেতাকর্মীদের জন্য ঐক্যবদ্ধ করার একটা সুযোগ সৃস্টি হয়েছে। ফলাফলে জয়-পরাজয় যা-ই হোক না কেন, নির্বাচন উপলক্ষে সব জায়গায় ফাইটিং ফোর্স তৈরি করতে হবে। আগামী দিনে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে এই ফাইটিং ফোর্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

প্রার্থী এবং তার কর্মীদের আর্থিকভাবে সহায়তা করার জন্য স্ব-স্ব নির্বাচনী এলাকায় আগামী জাতীয় নির্বাচনে দল থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের প্রতি আহ্বান জানান সাবেক মেয়র সরোয়ার।

তিনি বলেন, দলের মনোনয়ন পাওয়ার জন্য গুলশান অফিসে কিংবা বিভিন্নভাবে যারা তদবির লবিং করছেন, তারা স্ব-স্ব এলাকার পৌর মেয়র প্রার্থীদের সহায়তা করতে হবে। তা না করে দলের মনোনয়ন পাওয়া সহজ হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক।
 
বিভাগীয় মনিটরিং সেলের আহ্বায়ক ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সেলিমা রহমান বলেন, দলের নেতাকর্মীদের মাঝে অনেক ক্ষোভ-হতাশা আর শঙ্কা রয়েছে। যে কোনো সমস্যা মনিটরিং সেল সমাধান করবে। অভিমান, ক্ষোভ নিরসন করেই বিএনপি বিভাগের ১৭ পৌরসভায় জয় ছিনিয়ে আনবে।

সাইফ আমীন/একে

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।