অভিমানে দেশ ছেড়ে যাওয়া বেদের মেয়ে জোসনা কেমন আছেন?
সিনেমা ছেড়েছেন অনেকদিন হয়। দেশও ছেড়েছেন ১৯৯৮ সালে। কেটে গেছে ২৩ বছরেরও বেশি সময়। তিনি এখন ভারতের নাগরিক। থাকেন কলকাতার সল্টলেকে। দীর্ঘ এ সময়টাতে বাংলাদেশে এসেছেন হাতে গোনা দুই একবার। তবে এ দেশের মানুষ তাকে আজও ভোলেনি। চলচ্চিত্রপ্রেমীদের অন্তরে আজও তিনি সবার প্রিয় সেই ‘বেদের মেয়ে জোসনা’। যেখানে ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে তার প্রেম দোলা দিয়েছিলো দর্শকের মনে।
তিনি অঞ্জু ঘোষ। আজ এ নায়িকার জন্মদিন এমন দাবি করে অনেক ভক্ত-অনুরাগী তাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই অঞ্জু ঘোষের ছবি দিয়ে তাকে জন্মদিনে ভালোবাসা জানাচ্ছেন। যদিও এই অভিনেত্রীর জন্মদিন ১৮ সেপ্টেম্বর।
বাংলাদেশের এক সময়ের তুমুল জনপ্রিয় অভিনেত্রী অঞ্জু ঘোষ। তার প্রকৃত নাম অঞ্জলি ঘোষ। ফরিদপুরের ভাঙ্গায় জন্ম গ্রহণ করেন তিনি। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভোলানাথ অপেরায় যাত্রায় নৃত্য পরিবেশন করতেন ও গান গাইতেন এই নায়িকা।
১৯৭২ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামের মঞ্চনাটকে সুনামের সঙ্গে অভিনয় করেন। ১৯৮২ সালে চলচ্চিত্র নির্মাতা এফ কবির চৌধুরীর ‘সওদাগর’ সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে পা রাখেন। তবে তার ক্যারিয়ারের রাজকীয় উত্থান হয় ১৯৮৯ সালে। এ বছর অঞ্জু অভিনীত ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ মুক্তি পায়। সিনেমাটি মুক্তির পর আকাশচুম্বী দর্শকপ্রিয়তা পান অঞ্জু ঘোষ। নাচে, অভিনয়ে জয় করে নেন গ্রাম বাংলার কোটি দর্শকের হৃদয়।
এরপরই তার দর্শক চাহিদা দুই বাংলায় সমানভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে। দুই বাংলার দর্শকপ্রিয় হয়ে উঠেন অঞ্জু ঘোষ।
তারপর ‘মধুমালা মদন কুমার’, ‘কন্যা’ সিনেমার কাজ শেষ করেন। ১৯৯৫ সালে ‘নেশা’ সিনেমার কাজ শেষ হওয়ার আগেই ১৯৯৬ সালে কলকাতায় পাড়ি জমান তিনি। তখন কলকাতায় অঞ্জুর বেশ ভালো চাহিদা ছিল। এর পরে আর বাংলাদেশের সিনেমায় কাজ করেননি তিনি। ১৯৯৮ সালে একেবারেই কলকাতার উদ্দেশ্যে দেশ ছেড়ে যান তিনি।
জানা যায়, অভিমান করেই দেশ ছেড়েছেন অঞ্জু। তবে কী অভিমান তা নিয়ে কখনো কথা বলেননি এই অভিনেত্রী।
অঞ্জু ঘোষের দাবি ক্যারিয়ারে প্রায় তিন শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। চলচ্চিত্রবোদ্ধারা মনে করেন, অঞ্জু ঘোষকে বাঁচিয়ে রাখতে ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ -এই একটি সিনেমাই যথেষ্ট।
সিনেমায় অভিনয় করতে গিয়ে অঞ্জু সহশিল্পী হিসেবে পেয়েছেন রাজ্জাক, ওয়াসিম, জাফর ইকবাল, ইলিয়াস কাঞ্চনদের মতো মহাতারকাদের। ক্যারিয়ারের সেরা পরিচালক হিসেবে তিনি শ্রদ্ধা করেন তমিজ উদ্দিন রিজভী, এফ কবীর চৌধুরী, আলমগীর কুমকুমকে। অঞ্জু ঘোষের ভাষায়, ‘একটা বাচ্চাকে যেভাবে হাঁটাচলা শেখায়, সেভাবে এইসব পরিচালকেরা আমাকে হাতে ধরে শিখিয়েছেন। এমন গুণীদের স্নেহ পেয়ে আমি ধন্য হয়েছি।’
অভিনয় ও নাচই নয়, অঞ্জু ঘোষ বাংলা সিনেমায় চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবেন একজন গায়িকা হিসেবে। কালজয়ী গান ‘ওরে ও বাঁশিওয়ালা’র গায়িকা অঞ্জু ঘোষ।
ছোটবেলা থেকে গানে ভীষণ ঝোঁক ছিল অঞ্জু ঘোষের। শাস্ত্রীয় সংগীতের প্রতি দুর্বলতা ছিল অঞ্জু ঘোষের। ছোটবেলায় এসরাজ শিখতেন। চট্টগ্রামের শাস্ত্রীয় সংগীতের ওস্তাদ মানবেন্দ্র বড়ুয়া তাকে এসরাজ শিখিয়েছেন। জনপ্রিয় এই নায়িকার সংগীত পরিচালনায় রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমীন ও এন্ড্রু কিশোরও গান করেছেন।
অঞ্জু ঘোষ আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের সুর ও সংগীতে প্রথম সিনেমার গানে কণ্ঠ দেন। এরপর সুবল দাস, আলাউদ্দীন আলীর সুরেও গান গেয়েছেন। তার দুটি অ্যালবামও প্রকাশিত হয়েছিল।
২০১৮ সালে এসেছিলেন বাংলাদেশে। জানিয়েছিলেন মাঝে মাঝে যাত্রায় অভিনয় করেছিলেন। গেল বছর আলোচনায় এসেছিলেন বিজেপির রাজনীতিতে যোগ দিয়ে। বিতর্ক উঠেছিলো তার নাগরিকত্ব নিয়েও। এসব আলোচনা-বিতর্ক নিয়েই ভালো থাকার চেষ্টা করছেন অঞ্জু ঘোষ।
গেল বছর এক আলোচনায় জানিয়েছিলেন, বাবা-মা দুজনই মারা গেছেন। কলকাতার বাড়িতে তার সময় কাটে সংসার সামলে। রান্নাবান্না করতে পছন্দ করেন। তবে তার খুব পছন্দের স্থান বাড়ির বাগান। সেখানেই কাটে দিনের বেশিরভাগ সময়। গাছ দেখেন, ফুল দেখেন; ভাবেন সিনেমার সেইসব রঙিন দিনগুলোর কথা। মিস করেন পাগল সব ভক্ত আর দর্শকের ভালোবাসা।
এলএ/এএসএম