ভক্তের শ্রদ্ধাঞ্জলি: সব শ্রেণির নায়ক ছিলেন সালমান শাহ

বিনোদন প্রতিবেদক
বিনোদন প্রতিবেদক বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:২২ পিএম, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২১

আমাদের দেশে একটা সময় সিনেমায় যাত্রার ঢংয়ে অভিনয় করতেন শিল্পীরা। ঝলমলে পোশাক পরে নিজেদের সিনেমার পর্দায় উপস্থাপন করতেন। একইরকম সিনেমা দেখতে দেখতে দর্শকরা যখন ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলেন। তখন ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমার মধ্য দিয়ে সালমান শাহ’র আগমন।

সালমান তার প্রথম সিনেমায় নিজেকে যেভাবে উপস্থাপন করেছেন- তার অভিনয়, আকর্ষণীয় চেহারা; সবকিছু ছিলো খানিকটা ভিন্ন। যা সচরাচর বাংলা সিনেমার দর্শক নায়কদের মধ্যে দেখতে পেতেন না। তার এ নতুনত্ব দিয়ে তিনি খুব দ্রুতই তরুণ প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। এরপর অভিনয় দিয়ে তিনি জায়গা করে নিয়েছেন সব প্রজন্মের কাছে।

তিনি যে আর সকলের চেয়ে আলাদা তা জানান দিয়েছেন, তার সাবলীল অভিনয়, শারীরিক সৌন্দর্য, ফ্যাশন সচেতনতা, পর্দায় নিজেকে উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে। তার সংলাপ বলার ঢংয়েও ছিলো নতুনত্ব, স্বাভাবিক স্বরে। এসব কারণে অল্প সময়ের ক্যারিয়ার দিয়েই সালমান শাহ মানুষের মনে মৃত্যুর ২৫ বছর পরও জীবন্ত হয়ে আছেন। অমর থেকে যাবেন চিরজীবনই।

সালমান শাহ আসলেই অন্যরকম একজন অভিনেতা। সিনেমার নায়ক বলতে যা বোঝায় আমরা সেটা তার চেহারায়, চলনে, বলনে এবং তার উপস্থাপনায় খুঁজে পাই। সালমান শাহ এমন একজন শিল্পী ছিলেন যিনি ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে অভিনয়ের অভিব্যক্তি যথাযথভাবে তুলে ধরতে পারতেন। নায়করাজ রাজ্জাকের পর সালমানই অভিনয়ের একটা আলাদা বলয় তৈরি করেছিলেন।

সালমান শাহ একজন স্টাইলিশ হিরো ছিলেন তা তার অভিব্যক্তিতে সবসময় প্রকাশ পেতো। খেয়াল করলে দেখা যায়- নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত সব শ্রেণিতেই তার গ্রহণযোগ্যতা ছিলো।

বলা হয়ে থাকে যে সালমান শাহের সবচেয়ে বড় গুণ তিনি সময়ের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন। আরেকটা বিষয়, অল্প সময়ের ক্যারিয়ারে আকাশ ছোঁয়া জনপ্রিয়তা পেয়েছেন, সবচেয়ে দামি নায়ক হয়েছেন কিন্তু তার মধ্যে সুপারস্টারসুলভ কোনো অহংবোধ ছিলো না। সবসময় একজন সাধারণ মানুষ হয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করেছেন তিনি। সবার সঙ্গে মিশতেন। সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতেন।

চলচ্চিত্রের মানুষদের সঙ্গে আলাপ করলে জানা যায়, কেউ সামনে পরলে সালমানই আগেই সালাম দিতেন। মানুষকে সহজেই খুব আপন করে নিতে পারতেন। বন্ধুবৎসল স্বভাব তার ভেতর ছিলো। মানুষ হিসেবে খুব অসাধারণ ছিলেন। বিশেষ করে এফডিসিতে যারা গরীব, অসহায় ছিলেন, এমনকি অনেক সাধারণ মানুষকেও বিভিন্নভাবে উপকার করেছেন, সাহায্য করেছেন।

ব্যক্তি সালমান আর সিনেমার সালমান আলাদা কেউ ছিলো না। আমরা তাকে সিনেমার পর্দায় যেভাবে দেখতাম এর বাইরেও তিনি সেভাবেই চলাফেরা করতেন। সিনেমায় দেখলে মনে হতো পাশের বাড়ির কোনো যুবক, যাকে আমি চিনি। অথবা এই যুবকটি হয়তো আমিই। যার কারণে মানুষ তাকে সহজেই গ্রহণ করেছে।

তার হাসি নিয়েও কথা হয় আজকাল। মেয়েরা তো বটেই, চমৎকার নিষ্পাপ হাসির প্রতি মুগ্ধ পুরুষ দর্শকও। অনেকে হয়তো আয়নায় দাঁড়িয়ে আজও সালমানের মতো করে হাসার চেষ্টা করেন। আর স্টাইলিশ সালমান শাহের অনুসারীর তো অভাবই নেই। বিশেষ করে মাথায় ব্যান্ড কিংবা গামছা বাঁধা এবং কখনো কখনো এসবের সঙ্গে সানগ্লাস পরার যে ট্রেন্ড তিনি রেখে গেছেন তা আজও চলমান। অনেক নায়কও নিজেকে এসব স্টাইলে হাজির করেন।

নানা স্টাইল নিয়ে গ্রামীন প্রেক্ষাপটের ‘সুজন সখী’র সুজন এবং শহুরে প্রেক্ষাপটের ‘আনন্দ অশ্রু’র খসরু চরিত্রে তার অভিনয় আজও মানুষের অন্তরে গেঁথে আছেন। সব চরিত্রেই তিনি ছিলেন অনবদ্য। বাজার ভর্তি ছিলো সালমান শাহের ভিউকার্ডে। অনেকের সংগ্রহে আছে হয়তো। আমার সংগ্রহেও আছে অনেক। সেগুলো দেখি আর ভাবি, একটা মানুষ কীভাবে এতটা নিখুঁত হয়! আমি তার ভেতর কোনো খুঁত পাই না। একজন আদর্শ নায়ক।

প্রিয় নায়কের ২৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। এই ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক নন্দিত, কিংবদন্তি, সুপারস্টারের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু একটা সময় গিয়ে দেখা গেছে মানুষ সেভাবে মনে রাখেনি বা তাকে ঘিরে চর্চাটা সে অর্থে কম। কিন্তু এই একজন সালমান শাহ অমর হয়ে আছেন। চলে যাওয়ার ২৫ বছর পরও তাকে ভুলে যায়নি মানুষ। তার আবেদন ফুরায়নি। যে প্রজন্ম তাকে চোখে দেখা তো দূর, হলে গিয়ে সিনেমা দেখারও সুযোগ পায়নি সেই প্রজন্মও সালমানকে হৃদয়ে লালন করে। জন্মদিন ও মৃত্যুদিনে তার ছবি ফেসবুক প্রোফাইল, কাভারে দেয়। এটা অনেক বড় কিছু একটা বিষয় বলে মনে করি। হয়তো তার প্রতি মানুষের এ আগ্রহটা সবসময়ই থাকবে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম তার প্রতি ভালোবাসা বয়ে বেড়াবে বাংলার সিনেমা পাগল মানুষ। অবেলায় চলে যাওয়া নায়কের প্রতি প্রকৃতির এ কেমন উপহার কে জানে!

লেখক : মাসুদ রানা নকীব
প্রতিষ্ঠাতা : সালমান শাহ স্মৃতি সংসদ ও টিম সালমান শাহ

এলএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।