করোনায় বেকার, সিনেমা ছেড়ে গ্রামমুখী অনেক শিল্পী-কলাকুশলী
অডিও শুনুন
করোনার কারণে দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে স্থবির হয়ে আছে ঢাকাই সিনেমার ইন্ডাস্ট্রি। মুক্তি পায়নি উল্লেখ করার মতো সিনেমা। যেগুলো মুক্তি পেয়েছে সাফল্যের মুখ দেখেনি বলা চলে কোনোটাই।
করোনায় হল বন্ধ থেকেছে মাসের পর মাস। বিভিন্ন সময় লকডাউন উঠে গিয়ে হল খুললেও দর্শক নেই। করোনা সংক্রমণের ভয়ে মানুষ হলে আসতে চান না। তাছাড়া ওয়েব প্লাটফর্মের এ যুগে সবাই ঘরে বসেই বিনোদন খুঁজে নিচ্ছেন।
স্বভাবতই এর মন্দ প্রভাব পড়েছে সিনেমা শিল্পে। কাজ নেই, অর্থের উপার্জনও নেই। অভাবে অমানবিক জীবন কাটাচ্ছেন চলচ্চিত্রের নিম্ন আয়ের শিল্পী ও কলাকুশলীরা। যারা বড় পারিশ্রমিকের তারকা তারা কোনোমতে টিকে থাকলেও মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের ঘরে ঘরে হাহাকার।
সেই হাহাকার নিয়ে অনেকেই সিনেমা ছেড়ে গ্রামে ফিরে গেছেন। অনেকে যাবেন বলে ভাবছেন। এমন তথ্যই পাওয়া গেলো চলচ্চিত্রপাড়ায়।
ঠিক কতজন শিল্পী ও কলাকুশলী হতাশায় স্বপ্নের শহর ঢাকা ত্যাগ করেছেন, চলচ্চিত্র পেশাকে বিদায় জানিয়েছেন তার অবশ্য কোনো সঠিক তালিকা নেই। কিন্তু চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি, শিল্পী সমিতিসহ সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো থেকে তথ্য পাওয়া গেছে প্রায় শতাধিক শিল্পী ও কলাকুশলী রয়েছেন এ তালিকায়।
এর মধ্যে রোজ হিসেবে পারিশ্রমিক পাওয়া অভিনয় শিল্পী যেমন আছেন তেমনি টেকনিশিয়ানসহ নানা কুশলীরা রয়েছেন। কেউ কেউ বলছেন এ সংখ্যা দুই শতাধিকও হতে পারে। কোনো সমিতির সদস্য নন এমন অনেকেই চলচ্চিত্রে কাজ করেন। তারা দিনে এনে দিনে খান। করোনার কারণে দীর্ঘ সময় কাজহীন থেকে শহরে বাসা ভাড়া দিতে হিমশিম খাচ্ছিলেন তাদের অনেকে।
সংসার চালাতে গিয়ে হতাশায় নিমজ্জিত ছিলেন। তাই গ্রামে ফিরে গেছেন। কেউ আবার অন্য পেশা খুঁজে নিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে কথা বলতে গেলে পরিচালক সমিতির মহাসচিব শাহীন সুমন এক আড্ডায় বলেন, ‘কতজন চলচ্চিত্র ছেড়ে অন্য পেশায় বা গ্রামে ফিরেছেন তার সঠিক কোনো নথি দিতে পারবো না। তবে আমিও শুনেছি বেশ অনেকেই আছেন। উপার্জন না থাকায় তারা বাধ্য হয়েছেন এ সিদ্ধান্ত নিতে।
এমন অনেকেও হয়তো আছেন যুগের পর যুগ ধরে চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন। কিন্তু পরিবারের ব্যয় মেটানোর মতো কাজ ও উপার্জন না থাকায় গ্রামে চলে গেছেন। সমিতিগুলো চেষ্টার ত্রুটি রাখছে না। সবাই সবার মতো করে নিজ নিজ সদস্যদের দেখাশোনার চেষ্টা করছে। কিন্তু প্রায় দেড় বছর এত শিল্পী কলাকুশলীর পাশে কি করে থাকা সম্ভব।
হয়তো ঈদে বা কোনো উপলক্ষে এককালীন একটা সহায়তা করা যায় কিংবা বছরজুড়েই হয়তো একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ ভাতার ব্যবস্থা করা যায়। কিন্তু তাতে করে সবার প্রয়োজন মিটছে না কি না সে প্রশ্ন তো থেকেই যায়। সবার পরিবারের সদস্য তো একরকম নয়। সবার জীবনযাপন ও ব্যয়ও একরকম নয়।’
পরিচালকদের এই নেতা মনে করেন, করোনার আগে থেকেই সিনেমা কম ছিল। চলচ্চিত্রে কাজের অভাব ছিল। করোনার সময় সেটা করুণ আকার ধারণ করেছে। বেশি বেশি সিনেমার বিকল্প নেই ইন্ডাস্ট্রি সচল রাখতে।
বেশি বেশি সিনেমার জন্য চাই বেশি প্রযোজক ও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু সময় যাচ্ছে যতো ততোই লক্ষ করা যাচ্ছে নানা সংকটে আক্রান্ত চলচ্চিত্রে শিল্পে অর্থ লগ্নি করার আগ্রহ কমছে প্রযোজকদের। অনেক নামি প্রযোজক ও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানও হাত গুটিয়ে নিয়েছে চলচ্চিত্র থেকে। দু-একজন যারা এখানে টাকা ঢালছেন তারাও অনিয়মিত।
এলএ/এমকেএইচ