কারাগারে যেভাবে সময় কাটছে পরীমনির
মাদক মামলায় গ্রেফতার হয়ে দুই দফা রিমান্ড শেষে কারাগারে ঢাকাই চলচ্চিত্রের আলোচিত নায়িকা পরীমনি। গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারের রজনীগন্ধা ভবনে নেয়ার পর তাকে রাখা হয়েছে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে। সেখানে অনেকটা নীরবে সময় কাটছে এই অভিনেত্রীর। এছাড়া বই পড়ে, শুয়ে-বসেও সময় কাটছে তার। কোয়ারেন্টাইনে তিনি সুস্থ ও স্বাভাবিক আছেন বলেও জানা গেছে।
কারা সূত্রে জানা গেছে, কারাগারে বেশিরভাগ সময় পরীমনিকে চিন্তিত থাকতে দেখা যায়। কারও সঙ্গে তেমন কথা বলেন না। তবে স্বাভাবিক খাবার খাচ্ছেন তিনি। অন্য বন্দিদের জন্য যেসব খাবার, পরীমনির জন্যও সেসবই দেয়া হচ্ছে। এভাবেই পরীমনির কোয়ারেন্টাইনের চারদিন চলে গেছে।
গত শুক্রবার সন্ধ্যায় কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে কাশিমপুর মহিলা কারাগারে নেয়া হয় পরীমনিকে। এরপর থেকে তিনি ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে আছেন। কোয়ারেন্টাইনে থাকাকালীন যদি কোনো শারীরিক সমস্যা হয় তাহলে কারাবিধি অনুযায়ী স্বাস্থ্যসেবা পাবেন তিনি। এখন পর্যন্ত তিনি স্বাভাবিক ও সুস্থ রয়েছেন বলে সূত্রটি জানিয়েছে।
পরীমনির বিষয়ে জানতে চাইলে কাশিমপুর কারাগার-২ এর জেল সুপার ও মহিলা কারাগারের ভারপ্রাপ্ত জেল সুপার আব্দুল জলিল বলেন, পরীমনি এখন সুস্থ আছেন। কোয়ারেন্টাইন শেষে তাকে সেলে পাঠানো হবে। এর মধ্যে যদি কোনো অসুস্থতা দেখা দেয় তাহলে কারাবিধি অনুযায়ী তাকে চিকিৎসাসেবা দেয়া হবে। তবে এখন পর্যন্ত তিনি সুস্থ ও স্বাভাবিক আছেন।
এদিকে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় কারাবন্দি নায়িকা পরীমনিকে ফের ৫ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
রিমান্ড আবেদনে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক কাজী গোলাম মোস্তাফা উল্লেখ করেন, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের শেষ দিকে আসামি মামলার ঘটনা ও ঘটনার নেপথ্যে মূল হোতাদের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। মাদক মজুত, উদ্ধারসহ ব্যবসার পেছনে অর্থের জোগানদাতাদের খুঁজে বের করতে পুনরায় তার পাঁচদিনের পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ একান্ত প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, গত ৪ আগস্ট সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে পরীমনিকে তার বনানীর বাসা থেকে আটক করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। অভিযানে নতুন মাদক এলএসডি, মদ ও আইস উদ্ধার করা হয়। পরীমনির ড্রয়িংরুমের কাভার্ড, শোকেস, ডাইনিংরুম, বেডরুমের সাইড টেবিল ও টয়লেট থেকে বিপুল পরিমাণ মদের বোতল উদ্ধার করা হয়।
এরপর রাত ৮টা ১০ মিনিটে পরীমনিকে তার বাসা থেকে একটি সাদা মাইক্রোবাসে র্যাব সদর-দফতরে নিয়ে যাওয়া হয়। রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে গাড়িটি কুর্মিটোলায় র্যাব সদর-দফতরে পৌঁছায়। সেখানে রাত ১২টা পর্যন্ত পরীমনিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে র্যাব। পরদিন ৫ আগস্ট বিকেল ৫টা ১২ মিনিটে র্যাব সদরদফতর থেকে পরীমনি, রাজ ও তাদের দুই সহযোগীকে কালো একটি মাইক্রোবাসে নিয়ে বনানী থানার উদ্দেশে রওনা দেয় র্যাবের একটি টিম।
এরপর র্যাব বাদী হয়ে রাজধানীর বনানী থানায় পরীমনি ও তার সহযোগী বিপুর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলায় করে। মামলার পর রাত ৮টা ২৪ মিনিটে পরীমনি ও তার সহযোগীকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর বনানী থানার মামলায় তাদের চারদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
একই দিন ঢাকা মহানগর হাকিম মামুনুর রশীদের আদালত মামলার এজাহার গ্রহণ করে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেন। এরপর সিআইডির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ মামলায় গত ১০ আগস্ট পরীমনি ও তার সহযোগী দিপুর দুদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
মামলা সূত্রে জানা যায়, পরীমনি ২০১৬ সাল থেকে মাদক সেবন করতেন। এমনকি এলএসডি ও আইসও সেবন করতেন তিনি। এজন্য বাসায় একটি ‘মিনিবার’ তৈরি করেন। তিনি বাসায় নিয়মিত ‘মদের পার্টি’ করতেন। চলচ্চিত্র প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজসহ আরও অনেকে তার বাসায় অ্যালকোহলসহ বিভিন্ন প্রকার মাদকের সরবরাহ করতেন ও পার্টিতে অংশ নিতেন।
পরীমনি ২০১৪ সালে সিনেমা জগতে আসেন। এ পর্যন্ত ৩০টি সিনেমা ও পাঁচ-সাতটি টিভিসিতে অভিনয় করেছেন। প্রযোজক রাজ তাকে পিরোজপুর থেকে ঢাকায় সিনেমা জগতে নিয়ে আসেন।
টিটি/এআরএ/এমকেএইচ