সময় বাড়ানোর সঙ্গে এক্সপোজারের সংজ্ঞাও পাল্টাতে হবে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইবিএ থেকে লেখাপড়া শেষ করে কর্মজীবন শুরু করেন মো. গোলাম সারোয়ার ভূইয়া। কর্মজীবনের বেশির ভাগ সময়ই শেয়ারবাজার সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে রয়েছেন তিনি। বর্তমানে এআইবিএল ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের নির্বাহীর দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সক্রিয় সদস্যও। সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে বাজারের বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন তিনি। সেখান থেকে চুম্বক অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো। সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন জাগো নিউজের প্রতিবেদক শফিকুল ইসলাম।
জাগো নিউজ : এক্সপোজার লিমিটেড নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কী করণীয়? যে ধরনের আলোচনা হচ্ছে বিষয়টি নিয়ে বলুন।
গোলাম সারোয়ার : এক্সপোজার লিমিট নিয়ে অনেক দিন ধরেই কথাবার্তা হচ্ছে। আসলে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাংকগুলোই খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ২০১০ সালের আগে এক্সপোজার লিমিটের সংজ্ঞাটা ছিল লাইভেলিটির (মোট দায়ের) ১০ শতাংশ। নতুন আইনে ইক্যুয়িটির ২৫ শতাংশ শেয়াবাজারে বিনিয়োগের কথা বলা হয়েছে, এর বেশি হবে না। ইক্যুয়িটি অনেক কম। ইক্যুয়িটি ১ হাজার কোটি টাকা হলে ব্যাংক বিনিয়োগ করতে পারবে ২৫০ কোটি টাকা। কিন্তু লাইভেলিটি যেখানে একটা ব্যাংকের ৩০ হাজার ৪০ হাজার কোটি টাকা। এর ১০ শতাংশ ৩ হাজার ৪ হাজার কোটি টাকা হয়। সে হিসেবে, বিনিয়োগ ৩ হাজার কোটি টাকা থেকে ২৫০ কোটি টাকায় চলে এসেছে। যাদের লাইভেলিটি বেশি তাদের এক্সপোজার বেশি ছিল। এখানে ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী সময় দেয়া হলো ৩ বছরের অর্থাৎ জুলাই ২০১৬ সালের মধ্যে সমন্বয় করতে হবে।
এক্সপোজার সংজ্ঞায় শুধু সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগ নয়। এখানে যদি প্লেসমেন্ট শেয়ারের বিনিয়োগ, ব্যাংক যে সাবসিডিয়ারি মাচেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজে যে ইক্যুয়িটি দেয় তা এক্সপোজার লিমিটে চলে আসছে, মার্জিন লোন (ঋণ) তো আছেই। তাছাড়া নন লিস্টেট কোম্পানিতে বিনিয়োগের বিষয়ও চলে আসছে। তাই শুধু শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ যে তা না। ব্যাংক যখনই কোনো প্রতিষ্ঠানে ইক্যুয়িটিতে পাটিসিপেট করছে তা এক্সপোজার লিমিটেড চলে আসছে।
এরমধ্যে পর্যায়ক্রমে কিভাবে বিনিয়োগ সমন্বয় করবো তা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে আমাদের পরিকল্পনা জানিয়েছি। আর এ কারণে বিনিয়োগ করতে পারছে না। সুযোগ পেলেই ব্যাংক ও আথিক প্রতিষ্ঠান শেয়ার বিক্রি করে। তাই দাবি আসছে, এক্সপোজার লিমিটের সময় বাড়ানো হউক। এ দাবি ডিএসই, সিএসইসহ সকল স্টেক হোল্ডারদের মধ্য থেকে ওঠে আসছে।
ব্যাংকের ইক্যুয়িটি ইনভেস্টমেন্টের বিষয়ে এক্সপোজার লিমিটের সময় বাড়ানো ছাড়াও আমাদের আরেকটি দাবি রয়েছে। সেটা হলো- এক্সপোজার লিমিট বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এর সংজ্ঞাও পাল্টাতে হবে। অর্থাৎ নন লিস্টেট কোম্পানির বিনিয়োগ ও সাবসিডিয়ারি কোম্পানির ইক্যুয়িটি বিনিয়োগে আমাদেরকে এক্সপোজার লিমিটে না ফেলার জন্য। এটা যদি করা হয় তাহলে শেয়ার মার্কেটে কোনো ধরনের চাপ সৃষ্টি হবে না। এ বিষয়ে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে একগুচ্ছ প্রস্তাবও দেয়া হয়েছে।
প্রাইভেট কোম্পানি এবং তালিকা বহির্ভূত কোম্পানির সিকিউরিটিজকে এক্সপোজারে না রাখা। মার্চেন্ট ব্যাংক এবং ব্রোকারহাউজের মতো সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মূলধন ও বিনিয়োগকে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের মোট বিনিয়োগে অন্তর্ভূক্ত না করে তা বাইরে রাখা উচিৎ।
জাগো নিউজ : এসব কারণে কী প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা নিস্ক্রিয়?
গোলাম সারোয়ার : আমি নিক্রিয় বলবো না। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ বাড়ছে। কারো কারো বাড়ানোর সুযোগ নেই, কারণ অনেকের বিনিয়োগ ওভার এক্সপোজার লিমিট হয়ে আছে। তাই তারা বিনিয়োগ করতে পারছে না। তবে দুই বছর সময় পেলে তা অনেকটা সমন্বয় হয়ে যাবে।
জাগো নিউজ : বাজার স্থিতিশীলতায় কী করণীয়?
গোলাম সারোয়ার : আমাদের নিয়ম-নীতি বিষয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। এ অনিশ্চয়তা কাটাতে হবে। এক্সপোজার লিমিট বাড়ানোর বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, তা কার্যকর করতে হবে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই), নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বাংলাদেশ ব্যাংক রেগুলেটরদের সঙ্গে সমন্বয় বাড়তে হবে। যার মাধ্যমে একটা স্থিতিশীল পুঁজিবাজার আশা করতে পারি।
জাগো নিউজ : প্রাতিষ্ঠানিক সুদহার নিয়ে অভিযোগ রয়েছে বিনিয়োগকারীদের, এ সর্ম্পকে আপনার মতামত কী?
গোলাম সারোয়ার : অনেক সময় অভিযোগ করার জন্য করা হয়। এক সময়ের সুদহার ১৭ থেকে ১৮ শতাংশ থেকে এখন ১২ থেকে ১৪ শতাংশে নেমে এসেছে। আসলে মার্চেন্ট ব্যাংক তাদের পেরেন্ট কোম্পানি থেকে অর্থ নিয়ে তহবিল বড় করে। মার্কেটের যে পজিশন তাতে বলবো এই ব্যাবসার লোন (ঋণ) না নেয়াই ভালো।
জাগো নিউজ : স্টক ডিভিডেন্ড ও ক্যাশ ডিভিডেন্ড কোনটা বিনিয়োগকারীদের জন্য মঙ্গল?
গোলাম সারোয়ার : যদি কোম্পানির ক্যাশ টাকা প্রয়োজন হয়। তখন সে ব্যাংক লোন না নিয়ে বিনিয়োগকারীদের নিকট থেকে নেয়। এ টাকা দিয়ে সে ব্যাংক লোন পরিশোধ করে। ইক্যুয়িটি বাড়ানোর জন্য স্টক ডিভিডেন্ড দেয় সে। তবে ক্যাশ ডিভিডেন্ড বিনিয়োগকারীর জন্যও ভালো কোম্পানির জন্যও ভালো। ক্যাশ টাকা দিলে কোম্পানির স্বচ্ছতা বাড়ে। মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি বোনাস দেয় না, ক্যাশ দেয়। ভালো মৌল ভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানিও সহজে বোনাস দেয় না, ক্যাশ টাকা দেয়।
জাগো নিউজ : বর্তমান অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের প্রতি আপনার পরামর্শ কী?
গোলাম সারোয়ার : আমাদের বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারে নিয়ম-কানুন বুঝতে পারছেন না। অনেকে হুজুগে বা গুজবে শেয়ার কেনা-বেচা করেন। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এখানে অনেকে আজকে বিনিয়োগ করে দুই একদিনের মধ্যে মুনাফা করতে চায়। এটা ঠিক না। তাই বলবো শেয়ারবাজারের নিয়ম-কানুন, গতি প্রকৃতি বুঝতে হবে। শেয়ারবাজারের হিসাব, ফান্ডামেন্টার, কোম্পানির ইপিএস, পিই, কোম্পানির ইতিহাস ইত্যাদি দেখে পরেই বিনিয়োগ করতে হবে।
শেয়ারবাজার একটা শিল্প। শিল্পে বিনিয়োগ করলে মুনাফা হঠাৎ করে আসে না, এটা সময় সাপেক্ষ বিষয় বলেও জানান তিনি।
জাগো নিউজ: এআইবিএল ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে কিছু বলুন?
গোলাম সারোয়ার : ২০১৩ সালে থেকে মূলত আমরা অপারেশনে আছি। ২০১২-তে লাইসেন্স হয়েছে। ইস্যু ম্যানেজারের কাজ করছি। বেশ কিছু আইপিও নিয়ে কাজ করছি। পোটফোলিও ম্যানেজম্যান্টের কাজ করি।
জাগো নিউজ : ব্যস্ততার মাঝে মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য জাগো নিউজের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।
গোলাম সারোয়ার : আপনাকে ও জাগো নিউজকেও ধন্যবাদ।
এসআই/আরএস/এআরএস/পিআর