প্রস্থানের এক বছর পেরিয়ে অভিনেতা খলিল


প্রকাশিত: ০৯:২৯ এএম, ০৭ ডিসেম্বর ২০১৫

ঢাকাই ছবির শক্তিমান অভিনেতা খলিল উল্যাহ খান। খলিল নামেই পরিচিত ছিলেন তিনি। আজ তার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। গেল বছরের এই দিনের (৭ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান খলিল।

ষাটের দশকের চলচ্চিত্রের নায়কের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নানা আয়োজন হাতে নিয়েছে বেশ কিছু সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন। তার মধ্যে খলিলের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সোমবার বাদ জোহর পারিবারিক উদ্যোগে কোরআন খতম ও দোয়া মাহফিলেরও আয়োজন করা হয়েছে।

এদিকে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অমিত হাসান জানান, সোমবার বাদ আছর এফডিসির শিল্পী সমিতির অফিসেও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।

পাশাপাশি শৈশব মেলা নামের একটি সংগঠনের আয়োজনে সোমবার দুপুর ২টায় তার বিদেহি আত্মার শান্তিকামনা করে বিকাল সাড়ে ৩টায় মোহাম্মদপুর কবরস্থানে তার কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ, কবর জিয়ারত ও ফাতেহা পাঠ করা হবে।

প্রসঙ্গত, খলিল উল্লাহ খান ১৯৩৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ভারতের মেদিনিপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈত্রিক বাড়ি সিলেটের কুমারপাড়ায়। তার পিতা মরহুম শফিউল হক খান ও মা মেহেরুন্নেছা। তার বাবা পুলিশ অফিসার ছিলেন বলে তাকে মেদিনিপুর, কৃষ্ণনগর, বগুড়া, বর্ধমান, নোয়াখালী যেতে হয়। খলিলের শৈশব জীবন কেটেছিল এসব জেলাতেই।

১৯৪৮ সালে সিলেট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন খলিল। এরপর ১৯৫১ সালে মদনমোহন কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দেন।

সে বছরই সেনাবাহিনীতে যোগদানের জন্য পরীক্ষা দিলেও শেষ পর্যন্ত চাকরি করার সৌভাগ্য হয়নি খলিলের। তবে ১৯৫৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর তৎকালীন আনসার বাহিনীতে অ্যাডজুটেন্ট হিসেবে যোগ দেন। দীর্ঘদিন আনসার ডিপার্টমেন্টে চাকরী করার পর বয়সের কারণে ১৯৯২ সালে তিনি চাকরি থেকে অবসর নেন।

ছবির নায়ক হওয়ার মাধ্যমে রূপালি পর্দায় অভিষেক হয় তার। পরে এসএম পারভেজ পরিচালিত ‘বেগানা’ ছবিতে প্রথমবার খলনায়ক হিসেবে অভিনয় করেন খলিল। নেতিবাচক চরিত্রেও তার অভিনয় প্রশংসিত হয়। এরপর খলনায়ক হিসেবেই নিয়মিত কাজ করতে থাকেন তিনি। ফলে নায়ক চরিত্রে আর ফেরা হয়নি।

প্রায় আটশতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। খলিল অভিনীত ছবির তালিকায় আরও উল্লেখযোগ্য ‘আলোর মিছিল’, ‘অশান্ত ঢেউ’, ‘সমাপ্তি’, ‘তানসেন’, ‘নদের চাঁদ’, ‘মাটির ঘর’, ‘পাগলা রাজা’, ‘অলংকার’, ‘মিন্টু আমার নাম’, ‘ফকির মজনু শাহ’, ‘বেঈমান’, ‘কন্যাবদল’, ‘যৌতুক’, ‘সোনার চেয়ে দামি’, ‘বদলা’, ‘মেঘের পর মেঘ’, ‘মধুমতি’, ‘ওয়াদা’, ‘ভাই ভাই‘, ‘বিনি সুতোর মালা’, ‘মাটির পুতুল’, ‘সুখে থাকো’, ‘অভিযান’, ‘গুণ্ডা’, ‘পুনর্মিলন’, ‘কার বউ’, ‘বউ কথা কও’, ‘দিদার’, ‘আওয়াজ’, ‘নবাব’, ‘দ্বীপ কন্যা’, ‘আয়না’ প্রভৃতি। উর্দু ছবিতেও অভিনয় করেছেন তিনি। এ তালিকায় উল্লেখযোগ্য ‘ক্যায়সে কহু’, ‘পুনম কি রাত’, ‘উলঝান’ প্রভৃতি।  রাজ্জাকের সঙ্গে ‘বাপ বড় না শ্বশুড় বড়’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন তিনি। এরপর আর নতুন কোনো ছবিতে দেখা যায়নি তাকে।

চলচ্চিত্র পরিচালনা না করলেও দুটি চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছিলেন তিনি। একটি ‘সিপাহী’ অন্যটি ‘এই ঘর এই সংসার’। দুটি ছবিই ছিলো ব্যবসা সফল।

দীর্ঘ জীবনের অভিনয় ক্যারিয়ারে এই গুনী মানুষটি রূপালি পর্দা ছাড়াও টিভি-মঞ্চ নাটকেও রেখে গেছেন অভিনয় দক্ষতা। তার অভিনীত নাটকের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় বিটিভিতে প্রচারিত আব্দুল্লাহ আল মামুনের ধারাবাহিক নাটক ‘সংশপ্তক’।

কর্মজীবনের স্বীকৃতিস্বরুপ কবরী প্রযোজিত ও আলমগীর কুমকুম পরিচালিত ‘গুন্ডা’র জন্য পেয়েছিলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এছাড়া চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১২ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন। তার হাতে এই সম্মাননা তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মৃত্যুর আগে প্রধানমন্ত্রী অসুস্থ খলিলের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছিলেন।

অভিনেতা খলিল বাংলাদেশ চলচিত্র শিল্পী সমিতির দ্বিতীয় সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

এলএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।