চলুক নন্দিত সুবর্ণার মুগ্ধতার গান


প্রকাশিত: ০৮:০৯ এএম, ০২ ডিসেম্বর ২০১৫

নন্দিত অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি মুগ্ধতা ছড়িয়ে যাচ্ছেন অভিনয়ের আঙিনায়। বাংলাদেশের নাট্যজগতে সুবর্ণা এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছেন। আশির দশকে তিনি ছিলেন দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় টিভি অভিনেত্রী। বিশেষ করে আফজাল হোসেন এবং হুমায়ুন ফরীদির সাথে তার জুটি ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা পায় সেসময়।

সেইসাথে হুমায়ূন আহমেদের নাটক ও চলচ্চিত্রে দারুণ সব চরিত্রে কাজ করে সুবর্ণা পৌঁছে গিয়েছিলেন সব শ্রেণির মানুষের কাছে। আজ ২ ডিসেম্বর এই গুণী অভিনেত্রীর শুভ জন্মদিন। এবারে তিনি ৫৬ বছরে পা রাখলেন।

বিশেষ এই দিনটিতে প্রিয় অভিনেত্রীকে নানাভাবে নানা মাধ্যমে শুভেচ্ছায় সিক্ত করছেন তার ভক্ত-অনুরাগীরা। পাশাপাশি তার সহকর্মীরাও তাকে অভিনন্দিত করছেন। জানা গেছে, খুব সাধারণভাবেই নিজের জন্মদিন পালন করবেন সুবর্ণা মুস্তাফা।

রেডিও ভূমিতে প্রচার হওয়া সরাসরি ক্রিকেট ধারাভাষ্য টিমের ক্যাপ্টেন হিসেবে দায়িত্ব পালন করা এই অভিনেত্রী আজও হাজির থাকবেন স্টুডিওতে চলতি বিপিএল টুর্নামেন্ট নিয়ে। নিজেদের প্রিয় মানুষটির জন্মদিনকে ঘিরে সেখানেই বিশেষ আয়োজনের ব্যবস্থা করেছে চ্যানেল আই ও রেডিও ভূমির পরিবার।

প্রখ্যাত অভিনেতা গোলাম মুস্তাফার মেয়ে সুবর্ণা মুস্তাফা ১৯৫৯ সালের ২ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন।  তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকাতেই। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে শিক্ষা লাভ করেছেন। শৈশব থেকেই বাবার অনুপ্রেরণাতেই সংস্কৃতির প্রতি ঝোঁক তৈরি হয়। নিজেকে জড়িয়ে নেন মডেলিং আর অভিনয়ের সাথে। সম্মোহনের চাহনি আর অসাধারণ বাচনভঙিতে সুবর্ণা নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন চমৎকার ব্যক্তিত্বের এক অভিনেত্রী হিসেবে।

প্রথমে মঞ্চে কাজ করলেও আশির দশকে টিভিতে অভিষেক ঘটে তার। মঞ্চ ও টিভি- দুই মাধ্যমেই জনপ্রিয়তা পান সুবর্ণা। সেসময় তিনি বেশ কিছু বিজ্ঞাপনে মডেল হিসেবেও কাজ করেন। তবে সুবর্ণা আলোচনায় আসেন ১৯৯০ সালে বিটিভিতে প্রচার হওয়া হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস অবলম্বনে বরকত উল্লাহর পরিচালনায় ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকের। সে নাটকে আসাদুজ্জামান নূরের করা কালজয়ী চরিত্র বাকের ভাইয়ের নায়িকা হিসেবে মুনা চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সুবর্ণা। সেই চরিত্র দিয়েই বলা চলে তিনি বাজিমাত করে দিয়েছিলেন।

তারপর নিয়মিতভাবেই তাকে হুমায়ূনের নাটকে কাজ করতে দেখা যায়। তারমধ্যে দারুণ জনপ্রিয়তা পায় ‘আজ রবিবার’ নাটকটি। আর ১৯৯২ সালে মুক্তি পাওয়া হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত মুস্তাফিজুর রহমানের ‘শঙ্খনীল কারাগার’ ছবি দিয়েও দর্শকদের মনে দোলা দিয়েছিলেন তিনি। সেখানে আসাদুজ্জামান নূর ও ডলি জহুরের ছোট বোনের চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি।

তবে চলচ্চিত্রে সুবর্ণার অভিষেক ঘটে ১৯৮০ সালে সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী পরিচালিত ‘ঘুড্ডি’র মাধ্যমে। নাটকের পাশাপাশি চলচ্চিত্রে সাফল্য পেলেও তিনি নিয়মিত গড়পড়তা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেননি। কিছু জীবন ঘনিষ্ঠ চলচ্চিত্রে তার উপস্থিতি দেখা গেছে। তিনি অভিনয় করেছেন। তবে মূলধারার কিছু সিনেমাতেও তার উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়। ‘নয়নের আলো’ সিনেমাতে তার অভিনয় সব শ্রেণীর দর্শককে নাড়া দিয়েছিল। ১৯৮৩ সালে ‘নতুন বউ’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে তিনি শ্রেষ্ঠ সহ-অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় পুরস্কার পান।

মাঝখানে হঠাৎ করে কিছুটা আড়ালে চলে গেলেও গেল পাঁচ বছর ধরে আবারো নিয়মিতই অভিনয় করছেন সুবর্ণা মুস্তাফা। একক নাটকের পাশাপাশি বেশ কিছু ধারাবাহিকেও দেখা মিলছে তার। পাশাপাশি সম্প্রতি তিনি ঘোষণা দিয়েছেন চলচ্চিত্র নির্মাণের। আপাতত চলছে গল্প বাছাই ও অর্থ যোগানের কাজ।

সুবর্ণা মুস্তাফা ব্যক্তিজীবনে ভালোবেসে দাম্পত্য গড়েছিলেন প্রয়াত অভিনেতা হুমায়ূন ফরীদির সাথে। সেই সংসার ২০০৮ সালে ভেঙে গেলে তিনি পুনরায় বিয়ে করেন নির্মাতা ও চিত্রনাট্যকার বদরুল আলম সৌদকে। এই অভিনেত্রী মাতৃত্বের স্বাদ পাননি। তাই অভিনয়ের আঙিনায় নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা সুবর্ণাকে সম্মান করেন মায়ের মতোই। সুবর্ণাও তাদের সাথে মোয়ের মতোই মিশেন, ভালোবাসা দেন।

প্রিয় অভিনেত্রী, প্রিয় ব্যক্তিত্ব সুবর্ণা মুস্তাফাকে জাগো নিউজের পক্ষ থেকে ৫৬-তে অভিনন্দন। সামনের দিনগুলো আরো অনেক প্রাণবন্ত হোক, রঙিন হোক। চলছে; চলুক জীবনের জয়গান। 

এলএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।