বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের প্রথম দিন মাতালেন যারা
চতুর্থবারের মতো শুরু হয়েছে পাঁচ দিনব্যাপি বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব-২০১৫। এই উপমহাদেশের তথা বিশ্বের সর্বাধিক বড় পরিসরের উচ্চাঙ্গসংগীতের আসরের এবারের পর্বটি প্রয়াত চিত্রশিল্পী কাইয়ূম চৌধুরীকে উৎসর্গ করা হয়েছে।
গেল শুক্রবার, ২৭ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় পর্দা উঠেছে প্রায় দুইশ জন সংগীত ও নৃত্যশিল্পীর অংশ নেয়া উৎসবের।
রাজধানীর বনানীতে অবস্থিত আর্মি স্টেডিয়ামে মিনু হকের পরিচালনায় পল্লবি ড্যান্স সেন্টারের ভরতনাট্যম নৃত্য পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় প্রথমদিনের অনুষ্ঠান।
তারপর পণ্ডিত সুরেশ তালওয়ালকারের তত্ত্বাবধানে বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষার্থী চিন্ময় ভৌমিক, ফাহমিদা নাজনীন, এম জে জেসাস ভুবন, মীর নকিবুল ইসলাম, নুসরাত ই জাহান, পঞ্চম স্যানাল, প্রশান্ত ভৌমিক এবং সুপান্থ মজুমদার পরিবেশন করেন তবলা কীর্তন। তাদের সঙ্গে হারমোনিয়ামে লহরা বাজিয়েছেন অজয় যোগলেকর।
তার পরের পরিবেশনা নিয়ে আসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের ধ্রুপদ। পরিবেশনাটি পরিচালনা করেন বিভাগের অধ্যাপক ড. অসিত রায়, পরিচালকের সহযোগী হিসেবে ছিলেন সহকারি অধ্যাপক শলোক হোসেন।
ধ্রুপদ পরিবেশনায় ছিলেন অনামিকা সরকার, অর্পিতা চক্রবর্তী, হুমায়ূন কবীর, মনিশ বিশ্বাস, মৌসুমী বিশ্বাস, শুভেন্দু সরকার এবং তনুশ্রী সেন। তাদের সঙ্গে পাখওয়াজে সংগত করেন সংগীত বিভাগের লেকচারার আলমগীর পারভেজ।
এরপর আয়জনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী, ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম আর.এফ. হোসেন এবং রবি আজিয়াটা লিমিটেডের চীফ অপারেটিং অফিসার মাহতাব উদ্দিন আহমেদ।
প্রথম দিনের আয়োজনে এছাড়াও সঙ্গীত পরিবেশন করলেন জয়াপ্রদা রামমূর্তি। ভারতীয় উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের কর্নাটকী ধারার বিখ্যাত বংশীবাদক জয়াপ্রদা রমামূর্তি। বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী প্রেমা রমামূর্তির কন্যা জয়াপ্রদা কানে শুনেই সঙ্গীতে তার প্রাথমিক দক্ষতার বিকাশ ঘটান। এর অনেক পরে, এই স্ব-শিক্ষিত শিল্পী সঙ্গীত গুরু এন রমানি, সুদর্শনাচর্যা এবং বি আর সি আইয়েঙ্গার এর তত্ত্বাবধানে বাঁশি বাদনের ওপর তালিম নিয়ে তার প্রতিভাকে ঝালিয়ে নেন। দেশি বিদেশি বিভিন্ন সঙ্গীত উৎসবে অংশ নেওয়া জয়াপ্রদা রমামূর্তি উগাদি পুরস্কার অর্জন করেছেন।
তারপরই মঞ্চে আসেন কৌশিকী চক্রবর্তী। বিশ্বখ্যাত সংগীতশিল্পী পন্ডিত অজয় চক্রবর্তীর কন্যা কৌশিকী ১৯৮০ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং আইটিসি সংগীত রিসার্চ একাডেমির সংগীতময় পরিবেশে বেড়ে ওঠার সুযোগ পান। মা চন্দনা চক্রবর্তীর কাছে কণ্ঠসংগীতে হাতেখড়ি হলেও আনুষ্ঠানিক তালিম শুরু হয় সাত বছর বয়সে প্রবাদপ্রতিম পন্ডিত জ্ঞান প্রকাশ ঘোষের শিষ্যত্ব গ্রহণের মাধ্যমে। এরপর এসআরএ স্কলার হিসেবে ১৯৯২ সালের নভেম্বর থেকে ২০০৪ সালের জুন পর্যন্ত কৌশিকী তার পিতা এবং গুরু পন্ডিত অজয় চক্রবর্তীর তত্ত্বাবধানে ছিলেন।
শিল্পী কৌশিকীর পরিবেশনায় তাঁর বয়সের চেয়ে অনেক বেশি পরিপক্বতা, সংগীত সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা এবং নজর কাড়া স্বতঃস্ফূর্ততার স্বাক্ষর থাকে। অসাধারণ পরিবেশনার জন্যে বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এর মধ্যে যদুভট্ট পুরস্কার,আউটস্ট্যান্ডিং ইয়াং পারসন অ্যাওয়ার্ড, বিবিসি পুরস্কার, উস্তাদ বিসমিল্লাহ খান যুব পুরস্কার (সঙ্গীত নাটক আকাদেমি পুরস্কার), জিআইএমএ, সেরা মহিলা কণ্ঠশিল্পী হিসেবে মিরচি সঙ্গীত পুরস্কার এবং আদিত্য বিড়লা কালাকিরন পুরস্কার উল্লেখযোগ্য। কৌশিকী চক্রবর্তী-র পরিবেশনা শেষ হল বাংলা গানের মধ্য দিয়ে।
প্রথমদিনের আয়োজনে আরও সংগীত পরিবেশন করেন পণ্ডিত কুশল দাস (সেতার) এবং বিদুষী বম্বে জয়শ্রী (কর্ণাটকি সংগীত)।
আজ শনিবার দ্বিতীয় দিনের উৎসব শুরু হবে সন্ধ্যা ৭টায়। চলবে পরদিন ভোর ৫টা ১০ মিনিট পর্যন্ত। দ্বিতীয় দিনের উৎসবে অংশ নেবেন অভিজিৎ কুণ্ডু (ধ্রুপদ), জয়ন্তী কুমারেশ (সরস্বতী বীণা), সুস্মিতা দেবনাথ (খেয়াল, বেঙ্গল পরম্পরা), পণ্ডিত উদয় ভাওয়ালকার (ধ্রুপদ), পণ্ডিত সুরেশ তালওয়ালকার (একক তবলা), ড.বালমুরালী কৃষ্ণ (কর্ণাটকী সংগীত) ও তার সঙ্গে বাঁশিতে থাকবেন পণ্ডিত রণু মজুমদার, শুভায়ূ সেন মজুমদার (এস্রাজ) এবং পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী খেয়াল)।
উৎসবের দ্বিতীয় দিন আজ শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হবে অনুষ্ঠান। চলবে পরদিন ভোর ৫টা ১০ মিনিট পর্যন্ত। দ্বিতীয় দিনের উৎসবে অংশ নেবেন অভিজিৎ কুণ্ডু (ধ্রুপদ), জয়ন্তী কুমারেশ (সরস্বতী বীণা), সুস্মিতা দেবনাথ (খেয়াল, বেঙ্গল পরম্পরা), পণ্ডিত উদয় ভাওয়ালকার (ধ্রুপদ), পণ্ডিত সুরেশ তালওয়ালকার (একক তবলা), ড.বালমুরালী কৃষ্ণ (কর্ণাটকী সংগীত) ও তার সঙ্গে বাঁশিতে থাকবেন পণ্ডিত রণু মজুমদার, শুভায়ূ সেন মজুমদার (এস্রাজ) এবং পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী খেয়াল)।
এলএ