বিড়াল নিয়ে নায়লা নাঈম
সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনার শীর্ষে থাকা জনপ্রিয় তারকা নায়লা নাঈম ফের ফেসবুকে আলোচনার ঝড় তুলেছেন। তবে এবার ভিন্নভাবে। সম্প্রতি তিনি বিড়ালের প্রতি তার সহমর্মিতার ছবি তুলে তার ফেসবুক পেজে আপলোড করে আবারও আলোচনার সূত্রপাত হন।
তার ওই ছবিতে ৫ হাজার সাতশ ৪২ জন লাইক, ২০৯ জন মতামত এবং ৬২ জন শেয়ার করেছেন।
জাগো নিউজ পাঠকদের জন্য নায়লা নাঈম -এর স্টেটাসটি তুলে ধরা হলো-
প্রায় ১ মাস আগের ঘটনা। সেদিন কাজের প্রেশার অনেক বেশি ছিল। দুইটা মিটিং শেষ করার পর চেম্বারে আসলাম। চেম্বারে রোগী দেখলাম। একটা বাচ্চার দাঁত তুললাম, বড় একটা পেশেন্টের সার্জারি করলাম। সারাদিন টানা কাজ করে মাথা ঝিমঝিম করছিল। তখন প্রায় রাত ১০টা। সারাদিনের কাজ শেষে বাসায় ফিরছিলাম। বাসার কাছাকাছি এসে রিক্সা ছেড়ে দিলাম। রিক্সা থেকে নেমে টমিকে (আমার এলাকার কুকুর) খাবার দিলাম। টমিকে খাবার দিয়ে বাসার গলিতে ঢুকছিলাম। গলির মুখে ঢুকতেই দেখলাম একজন ভদ্রলোক ও একজন ভদ্রমহিলা হেটে যাচ্ছেন। আমিও তাদের পেছেনে হেটে যাচ্ছি বাসার দিকে।
অবাক করা ব্যাপার হল- মহিলার কোল থেকে ম্যাও ম্যাও শব্দ আসছে। মনে হচ্ছে একটা বিড়ালের বাচ্চা কাঁদছে। আমি সাথেসাথে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করছি, কি ব্যাপার কোথায় বিড়ালের বাচ্চা কাঁদে? তখন মনে হল- বিড়ালের বাচ্চাটার কান্নার শব্দ ঐ মহিলার কোল থেকেই আসছে। আমি তাড়াতাড়ি হেটে তাদের সামনে গেলাম।
জিঞ্জেস করলাম- কি ব্যাপার ভাই, বাচ্চা কাঁদে মনে হয়। তারা একটু থতমত খেয়ে বললো- “না, আসলে বিড়ালের বাচ্চাটা আমার দোকানের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছিল। ওর মাকেও খুলে পেলাম না। আর আমার বাচ্চাটাও আবদার করেছে, সে বিড়ালের বাচ্চা পালবে। তাই, ওকে পালতে নিয়ে যাচ্ছি আমার বাসায়।“
আমার কাছেও ভালো লাগলো চিন্তা করে যে, যাইহোক বাচ্চাটা ভালো একটা ফ্যামিলি পেল থাকার জন্য, ও নিরাপদে থাকবে। আমি ভদ্রলোককে বললাম- ওকে বাসায় নিয়ে মাছ মাংস খেয়ে দিয়েন এবং সাথে বিড়ালের বাচ্চা কিভাবে পালতে হয় কিছু নির্দেশনা ও দিয়ে দিলাম। এরপর উনারা আমার বাসা থেকে ৪/৫ মিনিটের দূরত্বের একটা বাসায় গেলেন। তাদের যাওয়া পর্যন্ত আমি তাদের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
পরেরদিন সকাল বেলা প্রতিদিনের রুটিন অভ্যাসমত আমি হাঁটতে বের হলাম। হাঁটাহাঁটি শেষে টমিগুলোকে (আমার এলাকার কুকুরগুলো) খাবার দিলাম। ঐদিন আমি বাজার ও করেছিলাম। বাসার বিড়ালগুলোর জন্য কেনা মাছ, মাংস এবং বাজার নিয়ে বাসার সামনে ফিরলাম। বাসার সামনে ফিরে গেট খোলার জন্য নিচে অপেক্ষা করছিলাম। হঠাৎ দেখি আমার বাসার গেটের ভিতর থেকে একটা বিড়ালের বাচ্চা কাঁদছে- ম্যাও ম্যাও। ওমা, আমি অবাক হয়ে দেখি আগেরদিনের বাচ্চাটা। দেখেই খারাপ লাগলো এই ভেবে যে, মনে করেছিলাম বাচ্চাটা একটা ভালো পরিবার পেয়েছিল পোষার জন্য, কিন্তু তারা না পেলে, যেহুতো জানে আমি বিড়াল পেলে থাকি, তাই এখানে ছেড়ে দিয়ে গেলো বাচ্চাটাকে। যাইহোক, সবশেষে বাচ্চাটি আমার কাছেই আসলো। ওকে বাসায় নিয়ে আসলাম। পেট অনেক ফোলা ছিল। বোঝাই যাচ্ছিল, পেটভর্তি কৃমি। যাইহোক, ওকে খাওয়া-দাওয়া করালাম, গোসল করালাম, ওর গায়ের প্যারাসাইড গুলো পরিষ্কার করে দিলাম। এরপর কৃমির ওষুধ খাইয়ে দিলাম।
কৃমির ওষুধ খাওয়ার তিনদিন পর, ও মনে হয় কোন পোকা বা তেলাপোকা খেয়ে ফেলেছিল। এরপর থেকেই ও অনেকটা অস্বস্তিতে ছিল, কিছুই খাচ্ছিল না। দুপুরবেলা এমনকি রাতেরবেলাতেও কিছু খাচ্ছিল না। আমি স্বভাবতই ওকে রাইস স্যালাইন দেয়া শুরু করলাম মুখে। রাতে দেখলাম, ওর প্রচন্ড জ্বর আসছে। সাথে নিয়ে ঘুমালাম। বাচ্চাটাকে দেখলাম পাগল হয়ে যাচ্ছে জ্বরে। ওর এই অসুস্থ অবস্থা দেখে, আমার প্রচন্ড খারাপ লাগছিলো যা বলার মত না। আমি একটু পরপর পানির সাথে মিশিয়ে স্যালাইন এবং গ্লুকোজ মিশিয়ে খাওয়াচ্ছিলাম। ওর বমি এবং পাতলা পায়খানা হচ্ছিল। স্যালাইন এবং গ্লুকোজ পানির সাথে মিশিয়ে দুইদিন খাওয়ালাম। সাথে সাথে মেডিকেশন দেয়াও শুরু করলাম। এরপরও ওর অসুস্থতা কমছিলো না।
আমার কাছে মনে হল- আগে খাওয়া কোন পোকামাকড় থেকে ওর ফুড পয়েজনিং বা এইরকম কোন কিছু হয়েছে। দিনের পর দিন কষ্ট করা শুরু করলাম। তিনদিন অক্লান্ত পরিশ্রমের পর ওর জ্বর কমা শুরু হল, বমি বন্ধ হতে থাকলো এবং পাতলা পায়খানাও কমে আসলো। তিনদিনের আমার অমানষিক পরিশমের পর ও কিছুটা সুস্থ হয়ে চারনম্বর দিনে ও যখন দৌড়ে রান্নাঘরের দিকে গেলো এবং আমি যখন ওকে মাংস বের করে খেতে দেয়ার পর ও গপগপ করে খেতে লাগলো, আমি খুশিতে কেঁদে ফেলেছিলাম।
এর আগে আমার কাছে মনে হচ্ছিল বাচ্চাটিকে বাঁচাতে পারবো কিনা, সন্দেহ হচ্ছিল। কিন্তু ও যখন সুস্থ হয়ে খাচ্ছিল, বাচ্চাটিকে বাঁচাতে পারার আনন্দে আমি কেঁদে ফেলি। যাক, আল্লাহ হয়তো আমার উছিলায় বাচ্চাটিকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। Thanks to almighty.
বাচ্চাটি এখন নিরাপদে আছে, ভালো আছে, যদিও এখনো তার জ্বর আছে হালকা। তারপরও ও নিজে থেকে খাচ্ছে এবং আমিও ওকে রাইস স্যালাইন খাইয়ে যাচ্ছি। ইনশাল্লাহ ও পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবে। সবাই ওর জন্য শুভকামনা করবেন এবং দোয়া করবেন।
ফেসবুকে বিড়ালের প্রতি নাইলা নাঈমের সহমর্মিতার ছবি