ভোটারদের মধ্যে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ


প্রকাশিত: ১২:১৮ পিএম, ২০ নভেম্বর ২০১৫

আসন্ন পৌরসভার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে সম্ভাব্য প্রার্থীরা এখন মাঠে নেমে পড়েছে। এলাকার ভোটারদের মধ্যে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ আর জল্পনা-কল্পনা। সরকারিভাবে নির্বাচনের তফসিল এখনো ঘোষণা করা না হলেও মেয়র পদে প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়ন পেতে নেতৃবৃন্দের কাছে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে।

বিশেষ করে সরকারি দল আওয়ামী লীগে এ দৌড়ঝাঁপ একটু বেশি মনে হচ্ছে। বিএনপির এখনও পর্যন্ত একক প্রার্থী থাকায় পৌর বিএনপি সভাপতি হাজি মো. শাহিন একমাত্র মেয়র প্রার্থী ধারণা করা হচ্ছে। তিনি ভৈরব পৌরসভার বর্তমান মেয়র।

আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হিসেবে যারা এখন মাঠে প্রচারণা চালাচ্ছে তারা হলো, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও ভৈরব পৌরসভার সাবেক দুই বারের মেয়র অ্যাড. ফখরুল আলম আক্কাছ ও শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি ইফতেখার হোসেন বেনু। এছাড়া নির্দলীয় মেয়র প্রার্থী হিসেবে সোহেল আহমেদ ও ইমতিয়াজ হোসেন কাজল মাঠে প্রচারণা চালাচ্ছে।

এদিকে, ১২টি ওয়ার্ডে সংরক্ষিত নারী আসনসহ সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীরা প্রচারণায় থেমে নেই। সকল প্রার্থীদের শুভেচ্ছা পোস্টার ও ব্যানারে ছেয়ে গেছে ভৈরব শহর। তারা ভোটারদের মন জয় করতে নানা কৌশল অবলম্বনসহ প্রতিশ্রুতি ও দোয়া চাইতে ঘরে ঘরে যাচ্ছেন। ভোটারাও হিসাব-নিকাশ করছেন কাকে ভোট দিয়ে জয়ী করলে শহর এলাকার উন্নয়ন হতে পারে।

ভৈরব এলাকাটি হলো প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল­্লুর রহমানের এলাকা। তিনি জীবিত থাকালে এক রকম হিসাব ছিল কিন্তু এখন অন্যরকম হিসাব করছে ভোটাররা। তার একমাত্র ছেলে নাজমুল হাসান পাপন এখন এলাকার সংসদ সদস্য। পিতার স্বপ্নের উন্নয়ন কাজ ও রাজনৈতিক পরিচালনা এখন দেখভালও করছেন তিনি। তাই দলের যে প্রক্রিয়াই হোক না কেন আওয়ামী লীগে দলীয় মনোনয়ন দেয়ার ব্যাপারটি তার উপর অনেকটা নির্ভর করছে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মেয়র অ্যাড. ফখরুল আলম আক্কাছ বেশ কয়েকমাস আগে থেকেই প্রার্থী হিসেবে জনসংযোগ ও প্রচারণায় নেমে পড়েছেন। তিনি এর আগে ১৯৯৯ সাল থেকে ২০১১ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত পরপর দুই বার ১২ বছর মেয়র পদে দায়িত্ব পালন করেছে।

২০১১ সালের পৌর নির্বাচনে তিনি বিএনপি প্রার্থী হাজি মো. শাহিন এর কাছে মাত্র ৬/৭শ` ভোটে পরাজিত হন। আর পরাজিত হওয়ার কারণ ছিল আওয়ামী লীগের তিন প্রার্থী। তখন আওয়ামী লীগের তিন প্রার্থী মোট ভোট পেয়েছিলো ৩১ হাজার ৮৬৫ ভোট। এ সুযোগে বিএনপি প্রার্থী হাজি মো. শাহিন ১২ হাজার ৩৮৩ ভোট পেয়ে জয়ী হয়ে যান। এবার ধারণা করা হচ্ছে, আওয়ামী লীগ প্রার্থী দুইজন ও বিএনপির একজন। তবে আওয়ামী লীগ থেকে দুইজনের মধ্যে কে মনোনয়ন পাবে এখনই বলা যাচ্ছে না। মাঠে প্রচারণায় এগিয়ে রয়েছেন অ্যাড. আক্কাছ।

এদিকে, গত ৯ নভেম্বর ভৈরব পৌর আওয়ামী লীগের একটি সভায় ১২ ওয়ার্ডের ২৪ জন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে ২১ জন উপস্থিত থেকে ইফতেখার হোসেন বেনুকে পৌরসভার মেয়র পদে নির্বাচন করতে সমর্থন জানিয়েছেন বলে দাবি করেছেন শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শেফাত উল­াহ।

আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী বর্তমান মেয়র হাজি মো. শাহিন দলীয় মনোনয়ন পাবেন এটা নিশ্চিত দাবি করেছেন তিনি। এ দাবির প্রমাণ মিলেছে মাঠে এখন তিনি ছাড়া দলের আর কেউ নেই। প্রচারণায় তিনি এখনও তেমনটা মাঠে না থাকলেও শহরে শুভেচ্ছা পোস্টার ও ব্যানার লাগিয়ে প্রাথমিক প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবে তিনি সুবিধাজনক অবস্থানে থাকলেও গত কিছুদিন আগে বিএনপির নতুন কমিটি নিয়ে দলটি বর্তমানে বিভক্তি হয়ে পড়েছে। এজন্য তিনি কিছুটা বেকায়দায় রয়েছেন।

শহরের কমলপুর এলাকার যুবক সোহেল আহমেদ এবার মেয়র পদে প্রার্থীর ঘোষণা দিয়ে এলাকায় প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি সাংবাদিকতাও করেন। গত কয়েক মাস আগে থেকেই শহরে তার মেয়র প্রার্থীর পোস্টার, ব্যানার লক্ষ্য করা গেছে। ইমতিয়াজ আহমেদ কাজল নামে এক যুবক স্ব-ঘোষিত মাদক বিরোধী আন্দোলনের নেতা মেয়র প্রার্থীর শহরে পোস্টার, ব্যানার লাগিয়ে হাস্যরসের সৃষ্টি করেছেন। তবে তিনি পোস্টার ব্যানারের মধ্যেই প্রচারণা সীমাবদ্ধ রেখেছেন।

এদিকে, সংরক্ষিতসহ সাধারণ পদে ১২টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রার্থীরা প্রচারণায় মাঠে রয়েছে। প্রতি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে একাধিক  প্রার্থী পোস্টার, ব্যানার লাগিযে প্রচারণা চালাচ্ছে। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট ও দোয়া প্রার্থনা করছে।

২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী হাজি মো. আনিছ উল­াহ জানান, আমি বিগত তিনবারের সফল কাউন্সিলর। এবারও প্রার্থী হয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। আমার প্রত্যাশা আমার ওয়ার্ডের ভোটাররা এবারও আমাকে ভোট দিয়ে জয়ী করবে।

এবার সরকারি দল আওয়ামী লীগ থেকে কে মনোনয়ন পায় এ নিয়ে ভোটারদের চিন্তা ভাবনার শেষ নেই। কেউ বলছে অ্যাড. আক্কাছ মনোনয়ন পাবে আবার কেউ বলছে শহর আওয়ামী লীগ সভাপতি ইফতেখার হোসেন বেনু মনোনয়ন পাবে। তবে কি প্রক্রিয়ায় প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হবে এটা দল থেকে এখনও সিদ্ধান্ত আসেনি। অনেকেই তাকিয়ে আছেন এলাকার সংসদ সদস্য নাজমুল হাসান পাপন কি সিদ্ধান্ত দেন। দুইজন প্রার্থীই তার সঙ্গে সর্বক্ষণ যোগাযোগ রক্ষা করছে বলে জানা যায়।

বিগত আমলে অ্যাড. ফখরুল আলম আক্কাছ মেয়র থাকাকালে ভৈরব শহরের রাস্তা ঘাট প্রশস্তসহ পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা, রাস্তার আলো, অন্যান্য কাজে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন যা স্বাধীনতার পর আর কোনো চেয়ারম্যানগণ ভৈরবে করতে পারেনি।

তিনি দায়িত্বকালে ভৈরব শহরকে আধুনিক শহরে রূপান্তরিত করেছেন। বর্তমানে বিরোধী দলের মেয়র থাকায় হাজি মো. শাহিন গত ৫ বছর তেমনটা উন্নয়ন করতে পারেননি বলে এলাকাবাসী মনে করছেন। তাই এবার ভোটাররা বিকল্প চিন্তা ভাবনা করছে। যিনি ভৈরব শহরকে আধুনিক শহরে রূপান্তরিত করে সকল উন্নয়ন করতে পারবেন তাকেই ভোটাররা ভোট দেয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে।

এ বিষয়ে মেয়র প্রার্থী অ্যাড. ফখরুল আলম আক্কাছ বলেন, আমি মেয়র প্রার্থী হিসেবে এলাকায় প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দলীয়ভাবে আমি মনোনয়ন চাইব।

তিনি আরো বলেন, আমার প্রত্যাশা দল আমাকে মনোনয়ন দিবে। পৌরবাসীর সুখ-দুঃখে আমি সব সময় তাদের পাশে আছি এবং কাজ করছি। তাই আমার প্রত্যাশা এবার ভোটাররা আমাকে ভোট দিয়ে জয়ী করবে।

মেয়র প্রার্থী হাজি মো. শাহিন বলেন, বিএনপি থেকে মৌখিকভাবে আমার মনোনয়ন নিশ্চিত করেছে। আমি পুনরায় জয়ী হলে ভৈরব পৌরবাসীর উন্নয়নের জন্য আবারও ব্যাপক চেষ্টা করবো।

মেয়র প্রার্থী ইফতেখার হোসেন বেনু বলেন, বিগত দুইটি নির্বাচনে আমার সঙ্গে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী থাকায় আমি পরাজিত হয়েছি। গত ৯ নভেম্বর পৌর কমিটির সভায় সর্বসম্মতিক্রমে আমাকে মেয়র পদে নির্বাচনের জন্য সমর্থন দিয়েছে। যদি দল আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে আমি মেয়র পদে নির্বাচন করে অবশ্যই জয়ী হবো। আমি নির্বাচনে জয়ী হলে পৌরবাসীর উন্নয়নের সবসময় কাজ করে যাবো।

আসাদুজ্জামান ফারুক/এআরএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।