মান্নাকে হারিয়ে আজও অভিমানী ঢালিউড
যেখানে অন্যায়, অনিয়ম, অবিচার কিংবা দুর্নীতি সেখানেই হানা দিয়েছেন তিনি। নানা বেশে, নানা চরিত্রে। সিনেমার পর্দায় নায়ক মান্নাকে দেখা গেছে কখনো বঞ্চিত যুবক, কখনো অসহায় সন্তান, ভাই, প্রেমিক বা স্বামীর চরিত্রে। অসহায় পিতার চরিত্রেও মান্নার অভিনয় হাহাকার তৈরি করেছে দর্শকের অন্তরে।
নানা গল্প-প্রেক্ষাপটে তিনি প্রতিবাদে সোচ্চার চরিত্রে হাজির হতেন অনিয়মের দেয়াল ভেঙ্গে নিয়ম আর ন্যায়ের প্রতিষ্ঠায়। সেসব চরিত্র আজও তার ভক্তদের মুগ্ধ করে। নস্টালজিক করে তুলে। হৃদয়ে জাগায় বেদনা। কারণ পৃথিবীর মায়া ছেড়ে মান্না চলে গেছেন আজ ১৩ বছর হলো।
চিত্রনায়ক মান্না ২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। তার মৃত্যুতে চলচ্চিত্রশিল্পের যে ক্ষতি হয়েছিলে, তা আজও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি।
মান্নার স্ত্রী শেলী মান্না স্বামীর মৃত্যুবার্ষিকীতে প্রতি বছরই কুরআন খতম ও মিলাদ মাহফিলসহ নানা রকম আয়োজন করে থাকেন। এবারেও হচ্ছে। তবে সীমিত পরিসরে। শেলী বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করেই এবার সীমিত পরিসরে কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। মান্নার গড়া প্রযোজনা সংস্থা কৃতাঞ্জলি পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে স্মরণ করে আলোচনা ও দোয়া মাহফিলে আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া বাসায় বিশেষ মিলাদ মাহফিল ও কোরআন খতম করা হবে।’
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির উদ্যোগেও আজ বাদ আসর এফডিসিতে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
টাঙ্গাইলের সন্তান মান্না এ জেলার কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গায় জন্মগ্রহণ করেন ১৯৬৪ সালে। তার আসল নাম এস এম আসলাম তালুকদার। ১৯৮৪ সালে বিএফডিসি আয়োজিত নতুন মুখের সন্ধানের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় মান্নার। এরপর একে একে প্রায় সাড়ে তিন শ ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। উপহার দিয়েছেন অনেক সুপারহিট সিনেমা।
ঢাকাই সিনেমার মেগাস্টার বলা হত মান্নাকে। অসম্ভব সফল ও জনপ্রিয় নায়ক ছিলেন তিনি। ফোক, সামাজিক, রোমান্টিক, অ্যাকশন- সব ঘরানার সিনেমায় নিজেকে তিনি অন্যতম প্রধান নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিলেন একজন ডাইনামিক অভিনেতা হিসেবে। অকালে তাকে হারিয়ে ফেলার অভিমান আজও যেন বয়ে বেড়াচ্ছে ঢালিউড।
চলচ্চিত্র বিশ্লেষকরা মনে করেন, মূলত ব্যবসায়ের হিসেবে তুমুল সুপারহিট মান্নার মৃত্যুর পর থেকেই এ দেশের সিনেমা হলভরা দর্শকের দিন হারিয়েছে।
মান্না অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবি হচ্ছে- সিপাহী, যন্ত্রণা, অমর, পাগলী, ত্রাস, জনতার বাশা, লাল বাদশা, আম্মাজান, আব্বাজানা, রুটি, দেশ রী, অন্ধ আইন, স্বামী-স্ত্রীর যুদ্ধ, অবুঝ শিশু, মায়ের মর্যাদা, মা-বাবার স্বপ্ন, হৃদয় থেকে পাওয়া ইত্যাদি।
২০০৬ সালে সেরা অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান জনপ্রিয় এ অভিনেতা।
এলএ/এমএস