হুমায়ূন আহমেদকে উপেক্ষা করে সমালোচিত লোকসংগীত উৎসব
লোকজ গানকে সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে এবং বিশ্বব্যাপি সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটাতে ঢাকায় আয়োজন করা হয়েছে প্রথমবারের মতো ‘আন্তর্জাতিক লোকসংগীত উৎসব-২০১৫’।
তিনদিন ব্যাপি এই আসেরর পর্দা উঠে গেল বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর। আজ শনিবার, ১৪ নভেম্বর দিন শেষে বিকেল ৫টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত গান পরিবেশনার মধ্য দিয়ে এর ইতি ঘটবে।
স্কয়ার গ্রুপের মাছরাঙা টেলিভিশন ও সান ইভেন্টস আয়োজিত এই অনুষ্ঠানটি লোক গানের মহা আয়োজনের দৃষ্টিতে অভিনন্দিত হলেও অব্যবস্থাপানাসহ বহু দোষে দুষ্ট হয়েছে। তার মধ্যে পাঠক নন্দিত কথাসাহিত্যিক ও দেশীয় লোকজ সংস্কৃতির একনিষ্ঠ ভক্ত ও প্রচারক হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনকে অবজ্ঞা ও উপেক্ষা করায় সমালোচনার আগুন উস্কেছে চরমে।
গেল শুক্রবার, ১৩ নভেম্বর ছিলো বাংলা সাহিত্যের প্রবাদ পুরুষ হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন। এই দিনটিকে মর্যাদা দিতে বর্ণাঢ্য আয়োজন হাতে নিয়েছিলো দেশের টিভি-রেডিও-গণ্যমাধ্যমসহ নানা সরকারি-বেসরকারি শিল্প সাহিত্য বিষয়ক সংগঠন। স্বভাবতই লোকসংগীতে আসা দর্শক-েশ্রোতারাও ভেবেছিলেন শুক্রবারের উৎসব প্রিয় লেখকের প্রতি উৎসর্গ করা হবে। কিন্তু বাস্তবতা ছিলো ভিন্ন।
উৎসর্গ করা তো দূরের কথা, উৎসবে উপেক্ষিত রইলেন গেল তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে জনপ্রিয়তার শীর্ষ এই সাহিত্যিক। এ নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেন উৎসবে আসা লোকজন। তারেক রায়হান নামে বুয়েটের এক শিক্ষার্থি বলেন, ‘আজ আমরা বন্ধুরা মিলে উৎসবে এসেছি দিনটি হুমায়ূন আহমেদকে স্মরণ করা হবে এবং তার লেখা ও প্রিয় গানগুলো শোনানো হবে ভেবে। কেননা, হুমায়ূন আহমেদ লোক গানের দারুণ ভক্ত ছিলেন। তিনি নিজে এসব গান লিখতেন এবং তার ছবিতে ব্যবহার করে অসংখ্য লোক গানকে জনপ্রিয়তা দিয়েছেন। কিন্তু উৎসব থেকে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে কোনো কথাই বলা হয়নি। কেবল রুবা নামের এক গায়িকা হুমায়ূনের ‘শুয়া উড়িল রে’ গানটি গেয়েছেন।’
উৎসব উপভোগ করতে আসা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নাট্য নির্মাতা বলেন, ‘এই উৎসবে অনিয়ম আর দোষের শেষ নেই। আসলে অভিজ্ঞতা না থাকলে এমনটা হবেই। তবে সবকিছু মেনে নেয়া গেলেও হুমায়ূন আহমেদকে এড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টি কখনোই কাম্য নয়। যেহেতু এটা লোকসংগীতের উৎসব তাই উচিত ছিলো এই লেখকের স্মরণে বিশেষ একটি পর্ব রাখা। কেননা, এ প্রজন্মের কাছে লোকজ সংস্কৃতি ও গানকে ভিন্ন মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছেন যিনি ; তিনি হুমায়ূন আহমেদ। তার সাহিত্য, নাটক, চলচ্চিত্র ও গানে বরাবরাই প্রাধাণ্য পেয়েছে লোক সংগীত।’
নুজহাত রেশমী শমী নামে মধ্যবয়স্ক এক নারী দর্শক বলেন, ‘এটা বেদনাদায়ক। আমাদের দেশে লোকসংগীত উৎসব হচ্ছে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় সাহিত্যিকের জন্মদিনে। সারা দেশ সেটি জানলে এবং পালন করলেও উৎসবে তিনি ছিলেন অবহেলিত। এমনকি হুমায়ূন আহমেদের ছবিতে গান গেয়ে জনপ্রিয়তা পাওয়া বারি সিদ্দিকীও তার নামটি উচ্চারণ করলেন না। গুণী মানুষের অপমান করা আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।’
এ বিষয়ে উৎসব তত্বাবধানের দায়িত্বে থাকা সান ইভেন্টস’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা নীরব থেকে বিষয়টি এড়িয়ে যান। তাই নিয়ে সমালোচনা চলেছে আর্মি স্টেডিয়ামে উৎসব উপলক্ষে তৈরি মিডিয়া সেন্টারেও। হুমায়ূন আহমেদকে এড়িয়ে উৎসব আয়োজন ও কদের এমন ভুল মেনে নিতে পারেননি গণমাধ্যমকর্মীরাও।
পাশাপাশি উৎসবের দ্বিতীয় দিনেও আয়োজকরা ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনতে পারেননি। যার ফলে শত শত দর্শককে ৫টায় লাইনে দাঁড়িয়ে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করতে হয়েছে রাত ৮টায়। ছিলো নিরাপত্তার নামে বারাবারি আর বিড়ম্বনাও। বিশেষ করে নিরাপত্তা কর্মীদের ব্যবহার আহত করেছে সবাইকে।
সেইসাথে আয়োজকদের অগোছালো সিদ্ধান্তে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন গণমাধ্যমকর্মীরাও। সাংবাদিকদের প্রবেশের জন্য কোনো গেইট নির্ধারিত ছিলো না। যার ফলে এই গেইট থেকে ওই গেইট ছুটোছুটি করতে হয়েছে। এমনকি উৎসবের এক পর্যায়ে মিডিয়া সেন্টার থেকে মঞ্চে যাওয়ার পথে সাংবাদিক প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। এ নিয়ে নিরাপত্তা কর্মী ও সাংবাদিকদের তর্ক-বিতর্ক হয়। একপর্যায়ে মিডিয়াকমের পরিচালক নিজে এসে সেটি মধ্যস্থতা করেন এবং সাংবাদিকদের প্রবেশের ব্যবস্থা করেন।
আর উৎসবে খাবার বিক্রির নামে ডাকাতি তো দুই দিন ধরেই চলছে প্রকাশ্যে। জেরোকেলের দোকান থেকে ৫টাকার চা বিক্রি করা হচ্ছে ২০ টাকায়। ৫০০ মি.লি মাম পানির দাম রাখা হচ্ছে ৬০ টাকা! অথচ বলা হয়েছিলো উৎসব উপভোগ করতে লোকজনের জন্য ফ্রি পানির ব্যবস্থা থাকবে স্টেডিয়ামের ভিতরে।
এলএ/আরআইপি