নায়ক রিয়াজের সেরা যত সিনেমা
নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়টা ছিলো রোমান্টিক নায়কদের জয়জয়কার। অনেক নায়কের আগমন ঘটেছে। প্রায় সবাই সফল সিনেমার নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। তবে অনেকেই ধারাবাহিক হতে পারেননি দীর্ঘ সময়।
তাদের ভিড়ে লাভারবয় বা রোমান্টিক হিরো তকমা নিয়ে এক দশকের বেশি সময় পার করা নায়কের নাম রিয়াজ। ১৯৯৫ সালে তিনি চলচ্চিত্রে আগমন করেন। নিজের স্টাইল, অভিনয়ের সাবলীলতা আর কাজের প্রতি ভালো লাগার সূত্রে নামের সাথে জনপ্রিয়তার তকমা লাগতে বেশিদিন সময় লাগেনি চিত্রনায়ক রিয়াজের। সালমান পরবর্তী সময়টাতে তিনি হয়ে উঠেছিলেন নির্মাতাদের প্রথম ও সেরা পছন্দ।
শাবনূরের সাথে জুটি বেঁধে তিনি উপহার দিয়েছিলেন বেশ কিছু সুপারহিট ছবি। পরবর্তীতে আরো অনেকের সাথেই জুটি বেঁধেছেন। তবে সবচাইতে বেশি সফল হয়েছেন পূর্ণিমার সঙ্গে। দীর্ঘ দুই দশকের ক্যারিয়ারে রিয়াজ অসংখ্য ব্যবসা সফল ছবি উপহার দিয়েছেন।
আজ ২৬ অক্টোবর তার জন্মদিন। এই উপলক্ষে তার অভিনীত সেরা কিছু চলচ্চিত্রের উপর নজর দেয়া যাক-
প্রাণের চেয়ে প্রিয়
১৯৯৫ সালে চলচ্চিত্রে পা রাখলেও রিয়াজ সফলতা পান ১৯৯৭ সালে। মোহাম্মদ হান্নান পরিচালিত ‘প্রাণের চেয়ে প্রিয়’ তার প্রথম হিট ছবি। এই সিনেমায় তার বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন রাভিনা। এই সিনেমায় আরও অভিনয় করেছেন ববিতা, রাজিব, হুমায়ূন ফরীদি, আবুল হায়াত প্রমুখ। এর আগেই সালমান শাহ এর সঙ্গে ‘প্রিয়জন’ সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি। তবে ‘প্রাণের চেয়ে প্রিয় সিনেমার মাধ্যমেই চলচ্চিত্রে নিজের শক্ত আসন হয়ে যায়।
পৃথিবী তোমার আমার
১৯৯৭ সালে প্রয়াত পরিচালক আবিদ হাসান বাদল সালমান শাহ-শাবনূর-রিয়াজ এই তিনজনকে নিয়ে মহরত করেছিলেন ‘তুমি শুধু তুমি’ সিনেমার। সালমানের অকালপ্রয়াণে সেই চরিত্রে স্থলাভিষিক্ত হন অমিত হাসান। এটাই রিয়াজ-শাবনূরের একসাথে প্রথম ছবি, তবে এই ছবি বাণিজ্যিকভাবে ব্যর্থ। অন্যদিকে মতিন রহমানের ‘মন মানে না’ ছবিতে প্রায় ৫০ ভাগ কাজ করেছিলেন সালমান-শাবনূর। পরবর্তীতে এই ছবিতে সালমানের জায়গায় স্থলাভিষিক্ত হন রিয়াজ। জনপ্রিয় একটি হিন্দি ছবির অনুকরণে নির্মিত এই ছবিটির গান দর্শকপ্রিয়তা পেলেও ছবিটি বাণিজ্যিক সফল হয়নি। ১৯৯৮ সালে বাদল খন্দকার এই জুটিকে নিয়ে নির্মাণ করেন সুপারহিট ছবি ‘পৃথিবী তোমার আমার’, এই ছবির বাণিজ্যিক সফলতার উপর ভর করেই চলচ্চিত্র জগতে শাবনূর-রিয়াজ জুটি দাঁড়িয়ে যায়, ছবিটিও বেশ উপভোগ্য। এ সিনেমার পর রিয়াজ-শাবনূর চুক্তিবদ্ধ হন বেশ কয়েকটি ছবিতে। এই বছর তাদের একটি ছবিই মুক্তি পায়, পরবর্তীতে কলকাতায় এই ছবিটি রিমেক হয়।
বিয়ের ফুল
১৯৯৯ সালে ব্যবসা সফল একটি ছবি ছিল মতিন রহমানের ‘বিয়ের ফুল’। এই ছবিতে জুটি ছিলেন শাবনূর-রিয়াজ। পাশাপাশি নায়ক শাকিল খানও অভিনয় করেছিলেন এই ছবিটিতে। একটি হিন্দি ছবির অনুকরণে নির্মিত এই ছবির গান বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল, ব্যবসায়িক দিক দিয়েও ছবিটি স্থান করে নিয়েছিল সেরা পাঁচে। ১৯৯৯ সালে রিয়াজ- শাবনূর অভিনীত মুহম্মদ হান্নানের ‘ভালোবাসি তোমাকে’ ও আজাদী হাসানাত ফিরোজের ‘কাজের মেয়ে’ ছবি দুটিও সুপারহিট ব্যবসা করে।
মনের মাঝে তুমি
২০০৩ সালে বাংলা চলচ্চিত্রের রেকর্ডসংখ্যক ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র মতিউর রহমান পানু পরিচালিত যৌথ প্রযোজনার ছবি ‘মনের মাঝে তুমি’। শাবনূরের সাথে জুটি ভেঙ্গে গেলে পুর্নিমার সাথে জুটি বেঁধে এই সুপারহিট ছবি উপহার দেন রিয়াজ। এই ছবিটি দেখেছিল সেই সময়ের প্রায় সকল সিনেমা প্রেমীরাই। এই ছবির গানগুলি ভীষণ জনপ্রিয় হয়,যা এখনো জনপ্রিয়। বাংলা চলচ্চিত্রে সেরা প্রেমের ছবিও এটি।রিয়াজ-পুর্নিমা জুটি এই ছবির মাধ্যমেই সকলের কাছে প্রিয় হয়ে উঠে।
হৃদয়ের কথা
২০০৬ সালে রিয়াজ যে আধুনিক রুচিশীল দর্শকদের প্রিয় নায়ক সেটা আবারও প্রমাণ হয় এস এ হক অলিকের হৃদয়ের কথা চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। এই ছবিটি রিয়াজ ও পুর্নিমা জুটিকে আরও জনপ্রিয় করে তোলে। এই ছবির মাধ্যমে রিয়াজ প্রযোজক হিসেবে আত্বপ্রকাশ করেন। এই ছবিটি যখন মুক্তি পায় তখনো বাংলা চলচ্চিত্রে অশ্লীলতার জোয়ার,সেখানে এই ছবিটি রুচিশীল দর্শকদের হলমুখী করে। গায়ক হাবিব ওয়াহিদ এই ছবির ‘ভালোবাসবো ভালোবাসবো রে’ গানটির মাধ্যমে ভীষণ জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন।
দুই দুয়ারী
২০০০ সালে জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব হুমায়ুন আহমেদ রিয়াজকে নিয়ে নির্মাণ করেন ‘দুই দুয়ারী’। বানিজ্যিক ছবির সফল নায়ককে ভিন্নধারার ছবিতে অভিনয় করিয়ে হুমায়ূন আহমেদ প্রমাণ করেন রিয়াজ আসলেই সেরা অভিনেতাদের মধ্যে একজন। ভিন্নধারার হলেও ছবিটি জনপ্রিয় হয়, এবং গানগুলিও শ্রুতিমধুর হয়।এই ছবিতে এক রহস্য মানব চরিত্রে অসাধারন অভিনয়ের জন্য রিয়াজ প্রথমবারের মত জাতীয় পুরষ্কার অর্জন করেন।
হাজার বছর ধরে
২০০৫ সালে জহির রায়হানের জনপ্রিয় উপন্যাস অবলম্বনে কৌহিনূর আক্তার সুচন্দা নির্মান করেন ‘হাজার বছর ধরে’। ছবিটি ব্যবসাসফল না হলেও সরকারি ভাবে অনুদানপ্রাপ্ত এই ছবিটি সর্বমহলে বেশ প্রশংসিত হয়। মন্তু চরিত্রে রিয়াজ নিজের সেরাটা দিয়ে অভিনয় করেন। বলা বাহুল্য এই ছবির মন্তু চরিত্রটির প্রতি আকর্ষণ থাকায় পারিশ্রমিক নেন মাত্র ১০১ টাকা।একটি গ্রাম্য জীবনে মন্তু টুনির ভালোবাসা সবার মন ছুঁয়ে যায়। ছবিটি জুরি বোর্ডের রায়ে সেরা চলচ্চিত্র সহ বেশ কয়েকটি শাখায় পুরষ্কার অর্জন করে।
মোল্লা বাড়ির বউ
২০০৫ সালে মুক্তি পেয়েছিল ‘মোল্লা বাড়ির বউ’। জনপ্রিয় নির্মাতা সালাউদ্দিন লাভলু এই ছবিটি পরিচালনা করেন এবং এই ছবিটি পরিচালনার মধ্যে দিয়েই তিনি চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন। সম্পূর্ণ পারিবারিক ও সামাজিক কুসংস্কার বেড়াজালের গল্প নিয়ে নির্মিত হয় এই ছবিটি। ছবিতে প্রধান চরিত্রগুলোতে অভিনয় করেছেন রিয়াজ, অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামান, মৌসুমী, রিয়াজ, শাবনূর ও প্রাণ রায় । সুপার হিট হয়েছিল ছবিটি।
শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ
২০০২ সালে মুক্তি পেয়েছিল ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’ সিনেমাটি। এ ছবিতে রিয়াজের বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন শাবনূর। দুই তারকা জুটি তখন ঢালিউডে সুপারহিট। সেই জুটির সুনাম বজায় রেখেছিলো এই ছবিটি। সারাদেশের সিনেমাপ্রেমীদের কাছে তুমুল সাড়া পেয়েছিলো জামাই-শাশুরির মজার যুদ্ধ। সেইসঙ্গে মনে দাগ কেটেছিলো রিয়াজ-শাবনূরের দুষ্টু-মিষ্টি প্রেম। দেবাশীষ বিশ্বাস পরিচালিত এই ছবিতে আরও অভিনয় করেছেন বুলবুল আহমেদ, রীনা খান, সোনিয়া, এটিএম শামসুজ্জামান প্রমুখ।
দ্বারুচিনি দ্বীপ
২০০৭ সালে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের কাহিনী অবলম্বনে তৌকির আহমেদ নির্মাণ করেন ‘দ্বারুচিনি দ্বীপ’ চলচ্চিত্রটি। ইমপ্রেস টেলিফিল্ম প্রযোজিত এই সিনেমাটি বেশ আলোচিত হয়েছিল। শুভ্র চরিত্রে রিয়াজ অসাধারন অভিনয় করেন।সর্বমহলে রিয়াজের অভিনয় প্রশংসিত হয়েছিল। লাক্স সুপারস্টার মম এই ছবিতে রিয়াজের বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন। ছবিটি সেরা চলচ্চিত্রসহ বেশ কয়েকটি শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার অর্জন করে। সেরা অভিনেতা হিসেবে রিয়াজ ও পুরষ্কৃত হন।
রিয়াজ অভিনীত জনপ্রিয় সিনেমার তালিকাটা বেশ দীর্ঘ। এই ছবিগুলোর মধ্যে আরও উল্লেখ করা যায় ‘নারীর মন’, ‘লাভারবয়’, ‘প্রেমের তাজমহল’, ‘সাবধান’, ‘মাটির ফুল’, ‘লাল দরিয়া’, ‘হৃদয়ের আয়না’, ‘নিশ্বাসে তুমি বিশ্বাসে তুমি’, ‘এ বাঁধন যাবে না ছিঁড়ে’, ‘সুন্দরী বধূ’, ‘ভালোবাসি তোমাকে’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘কৃষ্ণপক্ষ’, ‘কি জাদু করিলা’, ‘শাস্তি’ ইত্যাদি ছবিগুলোর নাম।
এলএ/এমএস