না.গঞ্জের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে নেই পর্যাপ্ত লোকবল


প্রকাশিত: ০৪:০১ এএম, ০৬ নভেম্বর ২০১৫

নারায়ণগঞ্জ জেলার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে পর্যাপ্ত লোকের অভাবে রোগীরা উপযুক্ত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। প্রতিটি ক্লিনিকে লোকবল কম থাকায় সেবার মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তাই সরকার যে পরিকল্পনা দিয়ে প্রকল্প চালু করেছে তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না।

আবার অনেক ক্লিনিকে কমিউনিটি ক্লিনিক হেলথ প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) আসলেও নিয়মিত ক্লিনিকে আসেন না ফ্যামিলি ওয়েল ফেয়ার অ্যাসিসটেন্ট (এফডাব্লিউএ) ও হেলথ অ্যাসিসটেন্ট (এইচএ)। একমাত্র কর্মী হওয়ায় সঠিকভাবে সেবা প্রদান করাও সম্ভব হচ্ছে না বলে অনেক ক্লিনিকের সিএইচসিপিরা অভিযোগ করেছেন। আর তারা তাদের চাকরি নিশ্চয়তা নিয়েও হতাশা প্রকাশ করছেন। ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসা সেবার মান নিশ্চিত করাসহ সরকারভাবে তদারকি বাড়ানোর প্রয়োজন মনে করছেন ভুক্তভোগীরা।         

এদিকে কমিউনিটি ক্লিনিকে আসা রোগীদের মধ্যে বেশির ভাগই জ্বর, আমাশায়, সর্দি, কাশি, গ্যাস্ট্রিকের রোগী। তারা প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে এসব ক্লিনিকে আসেন। বড় কোনো সমস্যা হলে ক্লিনিকের প্রতি আশা না করে শহরের সরকারি হাসপাতাল ও বেসরকারি ক্লিনিকে চলে যান। তবে গুরুত্বপূর্ণ রোগী এসব ক্লিনিকে গেলে সেবা না দিয়ে সরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়।

আর এসব ক্লিনিকে প্রসূতি মায়েদের চিকিৎসা সেবা নিতে খুব একটা দেখা যায় না। আসলেও আসেন হত-দরিদ্র পরিবারের নারীরা। তাতেও সব ক্লিনিকে পরিবার পরিকল্পনার লোকজন না থাকায় তারা আসে না। এছাড়া সকাল ৯টার দিকে ক্লিনিক খোলার নিয়ম থাকলেও বেশির ভাগ ১০টার পর খোলার অভিযোগ রয়েছে। আর অনেক ক্লিনিক দুপুর হতে না হতেই তা বন্ধ করে দেয়া হয়। রোগীর সংখ্যা হয় অনেকটা কম। ছোটখাটো অসুখ হলেই মানুষ এখানে আসেন। বাকিরা শহরের হাসপাতাল থেকেই চিকিৎসা সেবা নেন।

অনেকে অভিযোগ করেন সঠিকভাবে সেবা দেয়া হয় না। তাছাড়া এখানে কোনো পরীক্ষা নিরীক্ষার ব্যবস্থাও নেই।

নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে জানা গেছে, জেলায় মোট ১৩০টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। পাঁচটি উপজেলার মধ্যে সদরে ১৫টি, বন্দর উপজেলায় ১৪টি, সোনারগাঁওয়ে ৩৪টি, আড়াইহাজারে ৩৬টি রূপগঞ্জে ২৯টি। ক্লিনিকে সিএইচসিপি পদে লোক নিয়োগ রয়েছে। ক্লিনিকগুলোতে সিএইচসিপি পদে লোক ছাড়া অন্য কোনো পদে লোক নিয়োগ না থাকায় একটু সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। প্রতিটি ক্লিনিকে রোগীদের সঠিকভাবে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। আর এ সকল ক্লিনিকে ৩০ রকমের ওষুধ প্রদান করা হয়। পর্যাপ্ত ওষুধের মজুদ রয়েছে। কিন্তু প্রতিটি ক্লিনিকে দিন দিন ওষুধের চাহিদা বাড়ছে।

Clinic-Narayanganj

সদর উপজেলার বক্তাবলীর মধ্যনগর ক্লিনিকে সেবা নিতে আসা হাজেরা বেগম জাগো নিউজকে জানান, ক্লিনিকে সেবা ভালোভাবে পাওয়া যায়। কিন্তু সকল রোগের ওষুধ পাওয়া যায় না। প্যারাসিটামল, হিস্টাসিন, এন্টাসিড, ক্যালসিয়ামের ওষুধ ছাড়া অন্যকোনো ভালো ওষুধ পাওয়া যায় না।

এই ক্লিনিকে সেবা নিতে আসা ছোট মধ্যনগরের আলেয়া বেগম জাগো নিউজকে জানান, বাড়ির কাছে ক্লিনিকটি হওয়ায় চিকিৎসা পাবার জন্য মাঝে মাঝেই বাড়ির শিশুসহ সকল বয়সের লোকদের এখানে নিয়ে আসি। টাকা পয়সার অভাবে শহরে গিয়ে ভালো চিকিৎসা নিতে পারি না। সর্দি-কাশি অনেক দিন ধরে। এখান থেকে ওষুধ খেয়ে ভালো হচ্ছি না। ভালো ডাক্তার থাকলে ভালো চিকিৎসা পাওয়া যেতো, সুস্থ হয়ে যেতাম।  


সিদ্ধিরগঞ্জ গোদনাইল এলাকার ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসা জোবেদা বেগম জাগো নিউজকে জানান, বেশ কয়েকদিন ধরেই মাজার ব্যাথায় ভুগছি। কয়েকদিন আগে এখানে চিকিৎসা নিতে এসেছিলাম। ক্লিনিক থেকে ওষুধ দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু ব্যাথা না কমায় আবারো আসতে হয়েছে। শেষবারের মতো এসে দেখি কোনো পরিবর্তন হয় কী না।   

বন্দর উপজেলার সালেনগর থেকে কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসা জিএম সুমন জাগো নিউজকে জানান, বাড়ির কাছে এমন একটি ক্লিনিক হওয়ায় দ্রুত সেবা নিতে পারছি। বড় ধরনের কোনো চিকিৎসা না পেলেও ছোটখাটো অসুখের চিকিৎসা পেয়ে এলাকার মানুষ খুবই উপকৃত হচ্ছেন। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

 
সদর উপজেলার মধ্যনগর কমিউনিট ক্লিনিকের হেলথ প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) বাদশা জাগো নিউজকে জানান, এই ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসাগুলো দেয়া হয়। যেসব রোগী আসেন তাদেরকে গুরুত্ব সহকারে সেবা প্রদানের চেষ্টা করি। এমনকি কাউন্সিল ও স্বাস্থ্য সচেতন করে থাকি। এখানে ৩০ আইটেমের ওষুধ রোগীদের দেয়া হয়। পর্যাপ্ত পরিমাণের ওষুধ রয়েছে। আর জরুরী রোগীদের রেফার্ড করে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে প্রেরন করা হয়। তিনি আরো জানান, আমরা যারা সিএইচসিপি পদে রয়েছি চাকরি নিয়ে অনিশ্য়িতা দেখা দিয়েছে। হতাশা নিয়ে চাকরি করে রোগীদের সেবা দিতে হচ্ছে।

নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. আশুতোষ দাশ জাগো নিউজকে জানান, জেলার প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো ভালোভাবেই গরীব মানুষকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করে আসছে। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে ওষুধের কোনো অভাব নেই। চাহিদামতো ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে। আর প্রতিনিয়ত ক্লিনিকগুলো মনিটরিং করা হয়ে থাকে। মাসিক মিটিংয়ের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান ও চিকিৎসা সেবার নিশ্চিত করা হয়।

বর্তমান সরকার স্বাস্থ্য সেবার উপর অনেক গুরুত্ব দিচ্ছেন। আর আমি বিশ্বাস করি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাস্থ্যখাতে সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে কমিউনিটি ক্লিনিকের উপর। এ প্রজেক্ট জনগণ গ্রহণ করলে ভবিষ্যতে  উন্নয়নের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাবেন।
 
এমজেড/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।

আরও পড়ুন