সামিরার কাছে রঙিন সালমান শাহের পাঁচটি জন্মদিন
চোখের দেখায় তিনি নেই। তিনি আছেন কোটি দর্শকের অন্তরে। বলছি সবার প্রিয় নায়ক সালমান শাহ। রোমান্টিকতা, স্টাইলের জন্য এদেশের সিনেমায় কালজয়ী নায়ক তিনি। মৃত্যুর ২৪ বছর পেরিয়েও তার আবেদন বা গ্রহণযোগ্যতায় এতটুকু ভাটা পড়েনি। বরং সেটা বেড়েছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে।
আজ শনিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর সালমানের জন্মদিন। বেঁচে থাকলে এবার হয়তো হৈচৈ করে পালন করতেন দিনটি। চারদিকে তার ঘিরে থাকতো রঙিন দুনিয়ার মানুষেরা। ভক্তদের নানা আয়োজনে আপ্লুত হতেন। প্রিয়তমা স্ত্রী সামিরার কাছ থেকে পেতেন নতুন কোনো সারপ্রাইজ। কারণ এভাবেই কাটতো নায়ক সালমানের জন্মদিনগুলো, বলছিলেন সামিরা।
তিনি জাগো নিউজকে আজ শনিবার বলেন, ‘ইমনের (সালমানের পারিবারিক নাম) সঙ্গে আমার পরিচয় ১৯৯০ সালে। সে মারা যায় ১৯৯৬ সালে। জন্মদিনের ১৩ দিন আগে। সেবারের জন্মদিনটা তো পাইনি। তার পাঁচটি জন্মদিন আমার সঙ্গে কেটেছে। কত আয়োজন থাকতো তার জন্মদিন ঘিরে। কার্ড আর চিঠি দেয়ানেয়া হতো দুজনের মধ্যে। ও খুবই রোমান্টিক। ও খুব ইন্টিলিজেন্টও। সহজেই চমকে দেয়া যেত না। তবুও কীভাবে তাকে চমকে দেয়া যায় ভাবতাম সারাক্ষণ। সেইসব স্মৃতি আজ শুধুই বেদনার।’
‘একবার ওকে চমকে দিতে পেরেছিলাম। তখন ইস্কাটনের বাসায় থাকি আমরা। ইমনের ছোট ভাই বিল্টুও থাকে আমাদের সঙ্গে। ও গেস্ট রুমে থাকতো। ডাইনিং রুমের পাশে। বিল্টু আর আমি মিলে গেস্ট রুমে বেলুন দিয়ে ভরিয়ে দিয়েছিলাম সাজিয়ে। সুন্দর একটা কেক রাখা ছিলো। কিছু মোমবাতি। ইমন বাসায় ফিরে আয়োজন দেখে চমকে গিয়েছিলো। ওর চোখে মুখে ভিষণ আনন্দ দেখেছিলাম সেদিন’- যোগ করেন সামিরা।
তিনি আরও বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে ওর চেয়ে আমার জন্মদিনেই আয়োজন হতো বেশি। আমি তো মেয়ে মানুষ। খুব একটা বাইরে যাওয়া হতো না। যা ইচ্ছে তাই কিনতে পারতাম না, আনতে পারতাম না ওকে চমকে দেবো বলে। সাধারণত আমি ওর জন্য কাপড়, ফ্যাশনের বিভিন্ন জিনিসপত্রই আনতাম। আমি তো জানতাম সিনেমার জন্য ওর কোন জিনিসটা কাজে লাগবে। কিন্তু আমার জন্মদিনগুলোতে ও যখন বাসায় ফিরতো দারুণ সব গিফট আনতো। চমকে যেতে একেবারে। সেসবের সঙ্গে থাকতো চমৎকার রোমান্টিক সব লেখা।
একবার মনে আছে। আমার জন্মদিনে চোখ বন্ধ করিয়ে বাসার নিচে নিয়ে গেল। তারপর বললো চোখ খুলতে। চোখ খুলে দেখি গাড়ি। সেটা পুরোটাই র্যাপিং করা। আনন্দে চোখে জল এসেছিলো। ভালোবাসায় ভরা ওর পাগলামিগুলো খুব মিস করি।’
সালমান শাহ’র জন্মদিনে দেশের নানা স্থানে তার ভক্তরা নানারকম আয়োজন করে থাকেন। প্রতি বছরের মতো এবারেও অনেক আয়োজন দেখা যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে সামিরা বলেন, ‘দেখুন ওরাই তো ইমনকে বাঁচিয়ে রেখেছে ভালোবাসা আর শ্রদ্ধায়। ইমন হয়তো হিট নায়ক ছিলো, জনপ্রিয় ছিলো। কিন্তু মৃত্যুর এত এত বছর পরও ওর যে আবেদন পৃথিবীর আর কোন দেশের কোন নায়কের বেলায় এমনটি ঘটেছে? এটা শুধুমাত্র ইমনের ভক্তদের জন্যই সম্ভব হয়েছে। তারা আজও ইমনের জন্য কাঁদে। ওর মৃত্যুটাকে মেনে নিতে পারে না। ওর মৃত্যুর রহস্যের তদন্তের জন্য ব্ছরের পর বছর আন্দোলন করে যাচ্ছে। ওর জন্মদিনে নিজেদের পয়সায় মিলাদ পড়াচ্ছে, কেক কাটছে।
ইমন যদি আজ বেঁচে থাকতো ভক্তদের এই পাগলামিগুলো কীভাবে গ্রহণ করতো সেইটা দেখতে আমার খুব লোভ হয়। ও যা ভালোবাসার কাঙ্গাল ছিলো, যা আবেগী ছিলো। ভক্তদের নিয়ে নিশ্চয়ই দেখতেন এমন কিছু করে বসতো যা কেউ ভাবতেও পারতো না।
ভক্তদের কাছে আমার নতুন করে বলার কিছু নেই। শুধু বলবো যাই করুন ইমনের জন্য, আপনাদের প্রিয় স্বপ্নের নায়ক সালমান শাহ’র আত্মার জন্য দোয়া করবেন। ও যেন শান্তিতে থাকে। সেইসঙ্গে এটাও বলবো সময় হয়েছে নতুন করে সবকিছু বিবেচনা করার, ভাবার। অন্যের প্ররোচনায় কাউকে গালি দিয়ে নিজের পাপ বাড়ানোর চেয়ে নিজের বিবেক খাটানো উত্তম। সালমানের জীবনে আমি কতোটা গুরুত্বপূর্ণ ছিলাম, আমার কাছে সে কতোটা প্রিয় ছিলো, ভালোবাসার মানুষ ছিলো সেটা আশা করি গেল কয়েক বছরে সবাই কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছেন যখন থেকে মিডিয়ায় আমি কথা বলতে শুরু করেছি।
আমরা প্রেম করেছি, ঝগড়া করেছি, আবার প্রেমে পড়েছি। আমাদের দুজনের পরিবার, সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির লোকজন সেটা জানতো, আজও জানে। আইনি জটিলতার কারণে দীর্ঘদিন আমাকে চুপ থাকতে হয়েছে। সেই সুযোগে কিছু মানুষ, কিছু পক্ষ আমাকে নিয়ে যা তা বলেছে। আমাকে খুনি বানিয়েছে, ডাইনি বানিয়েছে রুপকথার গল্প ছড়িয়ে। সেসব শুনে শুনে ভক্তরাও সেটাকে বিশ্বাস করেছেন। যদিও আজকাল অনেকের ভুল ভেঙেছে। আরও ভাঙবে। সত্য চিরকাল সত্যই। তাকে চাপা দিয়ে রাখা যায় না। আজকাল অনেক ভক্তরাই ইমনের জন্ম ও মৃত্যু দিনে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন, ইমন সম্পর্কে অনেক কিছু জানার চেষ্টা করেন। আমিও মনের আনন্দে তাদের সঙ্গে কথা বলি।’
‘জন্মদিন বা মৃত্যুদিন নয়, ইমন আমার কাছে প্রতিদিন জীবন্ত। ও বেঁচে থাকতে ভালোবাসায় প্রাণবন্ত করে রাখতো। মরে গিয়েও তার ছায়ায় আমাকে আটকে রেখেছে। ছয়টা বছর আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসেছে। জানিনা ওর কেমন লাগে আজ তার সবচেয়ে প্রিয় মানুষটিকে যখন তারই মৃত্যুর জন্য দায়ী করা হয়, কটুকথা বলা হয়। (দীর্ঘশ্বাস) তবুও ও ভালো থাকুক অদেখা ভুবনে। আল্লাহর কাছে সেই দোয়া করি। শুভ জন্মদিন ইমন.....’ - ভারী হয়ে ওঠা কণ্ঠে সালমান শাহকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালেন তার প্রিয়তমা সামিরা।
এলএ/এমএস