এখনো আমাদের ফিল্মে সালমান শাহ ওয়ান অব দ্য বেস্ট : তানভীন সুইটি

বিনোদন প্রতিবেদক
বিনোদন প্রতিবেদক বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:২৫ পিএম, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২০

বাংলাদেশের সিনেমার ইতিহাস সৃষ্টিকারী নায়ক সালমান শাহ। মৃত্যুর দু’যুগ পরও আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা তার। এখনও টিভি পর্দায় তার অভিনীত ছবি প্রচার হলে দর্শক আগ্রহ নিয়ে দেখেন। আজ ৬ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যুবার্ষিকী। আজকের এই দিনে ১৯৯৬ সালে তিনি না ফেরার দেশে পাড়ি জমান।

ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী তানভীন সুইটি মঞ্চ নাটকের গন্ডি পেরিয়ে টিভি নাটকে অভিষেকেই সহশিল্পী হিসেবে পেয়েছিলেন অমর নায়ক সালমান শাহকে। ‘স্বপ্নের পৃথিবী’ নাটকে দেখা গেছে তাদেরকে। নাটকটি প্রচার হয় ১৯৯৬ সালে। ওই বছরই রহস্যজনকভাবে মারা যান সালমান। তার সঙ্গে কাজ করার স্মৃতি ২৪ বছর পরও জনপ্রিয় এই মডেল ও অভিনেত্রীর কাছে উজ্জ্বল।

সালমান শাহের সাথে প্রথম স্ক্রিন শেয়ার করার প্রসঙ্গে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘২৪ বছর হয়ে গেল! আমারও মিডিয়াতে ২৪ বছর হলো তাহলে। সালমানের সঙ্গে অভিনয় করে ক্যারিয়ার শুরু করেছি এটা আজ ভাবতে দারুণ লাগে। আমি যখন তার সঙ্গে কাজ করি সে তখন সিনেমার নায়ক হিসেবে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ছিল। কনফিউজড ছিলাম যে আমি এডজাস্ট করতে পারবো কিনা। নাটকের আগের দিন রিহার্সেল ছিল। আমি যখন সালমানকে দেখলাম এতো নরমাল ছিল আমি দেখে বেশ আশ্চর্য হলাম।

সবশেষ করলাম। শুটিংয়ে গেলাম। সালমান আমাকে ম্যাডাম ম্যাডাম বলছিলো। আমি বললাম 'ম্যাডাম ম্যাডাম কেন বলছো?' তখন সালমান উত্তর দিলো, ‘এটা আমাদের ফিল্মের সিস্টেম। নারী শিল্পীকে এই সম্মানটা দিই আমরা।’ আমার সঙ্গে ওর ব্যবহার সত্যি ভোলবার নয়। একটা মানুষ জনপ্রিয়তার তুঙ্গে যাওয়ার পরও এতটা অসাধারণ হতে পারে এমনটা খুব একটা দেখিনি।

মন খারাপের ব্যাপার হলো নাটকটি শেষ হওয়ার আগেই সালমান মারা গেল। সে পুরো কাজটি সমাপ্ত করে যেতে পারেনি। তাকে ছাড়াই নাটকটি শেষ করা হলো। সালমানের চলে যাওয়ার পর নাটকটি অন এয়ারে যায়। দারুণ রেসপন্স ছিলো।’

‘আমাদের নাটকের কস্টিউম ডিজাইন করেছিল সালমানের স্ত্রী সামিরা’- যোগ করেন সুইটি।

সালমানের সঙ্গে নাটকের আগেই পরিচিত ছিলেন জানিয়ে এই অভিনেত্রী বলেন, ‘আমি সালমানকে আগে থেকেই চিনতাম। ও ফিল্মে যাবার আগে আমরা একই সময়ে মডেলিং করেছি। বিটপি নামে একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থা ছিল। ওখানে আমি স্ক্রিন টেস্ট দেবার জন্য গিয়েছিলাম। সেখানে সালমানও গিয়েছিলো। ওর ডাক নাম ছিল ইমন। হাই-হ্যালো হতো। তারপর ফিল্মে ওর দীর্ঘ ব্যস্ততা। আমিও মঞ্চ-নাটক-মডেলিংয়ে ব্যস্ত।’

আপনার চোখে সালমান কেমন ছিল জানতে চাইলে সুইটি বলেন, ‘দারুণ ভালো মানুষ। ওর সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে আমি আসলে বুঝতেই পারিনি যে সেটা তারকা নাকি আমি! মনে হয়েছে আমার বহুদিনের পুরনো একজন কলিগ। এমনও হয়েছে কোথাও শুটিং হচ্ছে আমি দাঁড়িয়ে আছি বা বসে আছি। সালমান নিজে ছাতাটা না নিয়ে বলতো ‘ম্যাডামকে ছাতাটাও দাও, তার যত্ন নাও’।

আমি এখনো মনে করি সালমান শাহ আমাদের সিনেমায় বেস্ট হিরো। আর বেস্ট কোন সেন্সে বলছি, তার ফ্যাশন। সেই বিশ-পঁচিশ বছর আগে যে কস্টিউম ছিল তার সেটা তো মোটামুটি অনেকেই ফলো করতো। আজকালও করে। এখন যারা আছেন নায়ক তাদের কারোর সঙ্গে আমি তুলনা করবো না। শাকিব খান, শুভ, নিরব, ইমন- ওরা ওদের মতো। কাউকে জাজ করবো না। আমি যেহেতু সালমান শাহের সঙ্গে কাজ করেছি আমি ওকে নিয়েই বলবো। এখন পর্যন্ত আমার চোখে ফিল্ম ইন্ড্রাস্টিতে সে বেস্ট, ওয়ান অব দ্য বেস্ট। আমি কাউকে খারাপ বলছি না। বাট সালমান যেভাবে সব শ্রেণির দর্শককে ছুঁয়ে গিয়েছিলো স্টাইল-ফ্যাশনে এমনটা আর কাউকে দেখিনি।

সালমান শাহের সঙ্গে সিনেমার প্রস্তাব পেয়েছিলেন সুইটি। সে কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ক্যারিয়ারের শুরুতে অনেক সিনেমার অফার এসেছিলো। সালমানের সঙ্গেও কাজের প্রস্তাব ছিলো। কিন্তু তখন তো নাটক নিয়ে অনেক ব্যস্ত ছিলাম। কাজ করা হয়নি।’

সালমানের সঙ্গে সুযোগ এসেও সিনেমা করা হলো না। এ নিয়ে কখনো কি খারাপ লাগা তৈরি হয়? জবাবে সুইটি বলেন, ‘আমার মনে হয় কি নাটক তো মানুষ ভুলে যায়। কিন্তু ফিল্ম ভুলতে পারে না। খুব কম নাটকেই দর্শক মনে রাখে। কিন্তু একটি সিনেমা দর্শক মনে রাখে বা আর্কাইভে চলে যায়। আর একজন অভিনয় শিল্পীর স্বপ্ন থাকে সিনেমা করার। বলা চলে অভিনয়ের শেষ জার্নি বা ডেস্টিনেশন সিনেমাই। আমি শুরুতে প্রস্তাব পেয়েছিলাম। তখন করা হয়নি। হয়তো ডিসিশনটা ভুল ছিল। সালমান এতো বড় তারকা। তার সঙ্গে সিনেমাটি করলে সেটি আর্কাইভে থাকতো। সিনেমাটি দেখে আজ খুব ভালো লাগতো।’

‘আজ সে নেই। আল্লাহ যেন থাকে ওপারে ভালো রাখেন এই দোয়া করি। সবাই তার জন্য দোয়া করবেন’- সবশেষে যোগ করেন তানভীন সুইটি।

অরণ্য শোয়েব/এলএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।