এখন টাকা ইনকাম করাটাই মুখ্য হয়ে উঠেছে : খায়রুল আলম সবুজ

বিনোদন প্রতিবেদক
বিনোদন প্রতিবেদক বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:৪৯ পিএম, ১৭ আগস্ট ২০২০

খায়রুল আলম সবুজ। বাংলাদেশের অভিনয়ের উজ্জ্বল এক নক্ষত্র। ১৯৪৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার পূর্ব নারায়ণপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬৭ সালে করাচির বাংলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং ১৯৬৯ সালে বাঙলা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে ১৯৭২ সালে স্নাতক সম্মান এবং ১৯৭৩ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

১২ বছর বয়স থেকে বরিশালে থাকাকালীন অভিনয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। তখন মঞ্চদল করে নাটকে অভিনয় করতেন। তার অভিনীত প্রথম মঞ্চ নাটক ছিল ‘সূর্যমুখী’। এরপর পড়াশোনা করতে পাকিস্তানের করাচিতে চলে যান। সেখানে গান এবং অভিনয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন।

পিটিভিতে (পাকিস্তান টেলিভিশন) তিনি ১৯৭০ সালে প্রথম গান পরিবেশন করেন। ১৯৭১ সালের ১৮ মার্চ খায়রুল আলম সবুজ ঢাকায় চলে আসেন। এসে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে। সেখানে ম. হামিদের সঙ্গে ডাকসু নাটক বিভাগ ‘নাট্যচক্র’ গড়ে তোলেন। ম. হামিদ ছিলেন সভাপতি আর সবুজ ছিলেন সাধারণ সম্পাদক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ‘নাট্যচক্র’র মাধ্যমেই তার কর্মজীবন শুরু হয়।

মঞ্চে তিনি পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়, এখানে এখন, ওথেলো, সেনাপতিসহ একাধিক নাটকে অভিনয় করে দর্শক মাতিয়েছেন। টেলিভিশনে তার প্রথম কাজ ছিল বিটিভির নাটক ‘জলের রঙে লেখা’। টিভিতে তার অভিনীত প্রথম ধারাবাহিক নাটক ‘ঢাকায় থাকি’। হুমায়ূন আহমেদের ‘কোথাও কেউ নেই’ ধারাবাহিকে মামুন চরিত্রে অভিনয় করে নজর কেড়েছিলেন। এই অভিনেতা চলচ্চিত্রেও কাজ করেছেন। তার অভিনীত প্রথম সিনেমা পুনে ইনস্টিটিউট থেকে নির্মিত ‘উজান’।

স্বর্ণলতার বৃক্ষ চাই, বুড়ো বট ও শকুন, মমতাজ গায়েন, পবিত্র ও আড্ডাবাজ কয়েকজনসহ বেশ কিছু গল্পগ্রন্থও রয়েছে তার। বহুল প্রতিভার অধিকারী এ অভিনেতা দীর্ঘদিন ধরেই গৃহবন্দী হয়ে সময় পার করছেন করোনার কারণে। সবশেষ শুটিং করেছেন মার্চ মাসে। সমসাময়িক দিনযাপন ও শিল্প ভাবনা নিয়ে কথা
খায়রুল আলম সবুজ কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। লিখেছেন অরণ্য শোয়েব-

জাগো নিউজ : কেমন কাটছে দিনকাল?
খায়রুল আলম সবুজ : ব্যস্ততা নেই, ঘরেই আছি। বই পড়ার খুব নেশা। তাকের উপরে যেসব বই ছিল যেগুলো পড়া হয়নি সেসব পড়ছি এখন। সঙ্গে কিছু লেখালেখিও চলছে ও গান বাজনা। এসব নিয়েই কেটে যাচ্ছে দিনকাল। ভালো আছি, সুস্থ আছি।

জাগো নিউজ : করোনার মধ্যেও নাটকের শুটিং শুরু হয়েছে। আপনি ফিরবেন কী?
খায়রুল আলম সবুজ : আমার পেশা তো এটাই। ফিরতে তো হবেই। মাঝে বিটিভিতে একটি করেছি। একটি সরকারি ডকুমেন্টরিতেও কাজ করেছি। তবে এই মুহূর্তে শুটিং করছি না। এই মাসটি পুরো ভাববো যে কাজ করবো কিনা। হয়তো কয়েকদিন পর থেকেই আবার শুরু করবো কাজ।

জাগো নিউজ : বয়সের কারণে অভিনয়ে আপনার ব্যস্ততায় কী প্রভাব ফেলেছে?
খায়রুল আলম সবুজ : বয়সটা তো বাড়ছেই। চাইলেই তো আর এখন সবকিছু করা যায় না। শরীর ও মন দুটোই অনুকূলে থাকতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে কাজ করতে গেলে এখন বাছাবাছিরও একটি ব্যাপার থাকে। সব কাজ করাও যায় না। এখন এমন কাজ করার চেষ্টা থাকে যেগুলো লোকে মনে রাখবে। নিজের যেন আফসোস না হয় যে এই কাজটা কেন করলাম! তবে আমি নিয়মিতই কাজ করছি। হয়তো সবাই সেটা জানে না প্রচারের অভাবে।

জাগো নিউজ : এদেশে মঞ্চ নাটক বিকশিত হওয়ার প্রথম দিকের শিল্পী আপনি। অনেক লম্বা সময় আপনাকে মঞ্চে দেখা যায় না। মিস করেন না মঞ্চকে?
খায়রুল আলম সবুজ : মঞ্চ নাটক তো আমি প্রায় ২০ বছর থেকে করছি না। হ্যাঁ, মিস তো করি। খুব মিস করি।
মঞ্চে আমি অভিনয় এবং নির্দেশনা দুটোই দিতাম। অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে, অনেক স্মৃতি আছে। দেখি সময় সুযোগ হলে আরও একবার ফিরবো। যেখান থেকে শুরু সেখানে ফিরে যেতে আনন্দ পায় মানুষ।

জাগো নিউজ : আপনি একাধারে অভিনেতা, নির্মাতা, গায়ক ও লেখক। শিল্প আঙিনার কোন জায়গাটি আপনাকে তৃপ্তি দেয়?
খায়রুল আলম সবুজ : আমার কাছে এরা আলাদা কিছু নয়। সবগুলোই শিল্প। যে যাই করুক না সে আসলে ওই শিল্পচর্চাই করে। একটি বাড়ির অনেক রুম থাকে। সব রুমেই মানুষকে যেতে হয়। তেমনি শিল্পবাড়ির অনেক শাখা আছে। সবগুলোতেই বিচরণ করতে ইচ্ছে করে। আমি গান-বাজনা, অভিনয়, লেখালেখি, আড্ডাবাজি সবগুলোই পছন্দ করি। আড্ডা বলতে কথা বলাটাকেও আমি শিল্প মনে করি।

জাগো নিউজ : এখনকার নাটকের মান নিয়ে অনেক প্রশ্ন থাকে। কি বলবেন এই ব্যাপারে ?
খায়রুল আলম সবুজ : এ প্রশ্ন সবারই আছে, আমরাও আছে (হাসি দিয়ে )। আসলে একটা জিনিস জানতে হবে আমি কে? আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু থেকে শুরু করেছি ১৯৭২ থেকে। মানে স্বাধীন বাংলাদেশ শুরু হয়েছে এবং আমার অভিনয় শুরু হয়েছে একইসঙ্গে। আমি ডাকসু নাট্যচক্ররের সেক্রেটারি ছিলাম। মুক্তিযুদ্ধের পর আমার মনে হয় আমিই প্রথম অভিনেতা। অভিনয়ে আমার দীর্ঘ পথ চলা হয়েছে।

আমরা যখন নাটক করেছি তখন আমাদের মধ্যে একটি মানসিক জোর ছিল যে আমরা একটি কিছু করবো যা সবাইকে শিল্পের দিকে টানবে। আমরা দায়িত্বশীল ছিলাম গান-অভিনয় নিয়ে। এগুলোকে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছি সবার মাঝে যাতে সবাই শিল্প উপভোগ করতে পারে এবং নিজেদের রুচি বদলে নিতে পারে।

আজকে কিন্তু সেটি নেই। শিল্পের ভালোবাসায় আসে না কেউ। শোবিজে এখন টাকা ইনকাম করাটাই মুখ্য হয়ে উঠেছে। যেহেতু এটা একটা পেশা টাকার প্রশ্ন থাকবেই। কিন্তু শিল্পটাকে সামনে রাখতে হবে। কাজের প্রতি, কাজের সহযোগীর প্রতি দায়িত্বশীল হতে হবে। যারা শিল্পকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করছে দেরিতে হলেও তারা ভালো করছে, ফল পাচ্ছে। যাদের চিন্তা ওই টাকার দিকে তাদের কাজে মান থাকবে না এটাই স্বাভাবিক।

জাগো নিউজ : নাটকে এই মুহূর্তে কোন বিষয়টির ঘাটতি আছে বলে মনে করেন?

খায়রুল আলম সবুজ : আমার কাছে মনে হয় শিক্ষার ঘাটতি রয়েছে। তবে সবার না। শিক্ষার দরকার আছে যেটি শুধু অভিনয় সেক্টরেই নয় সব সেক্টরেই দরকার। একাডেমিক শিক্ষা, অভিনয়ের শিক্ষা, গানের শিক্ষা।

জাগো নিউজ : নাটকে এখন নায়ক ও নায়িকার বাইরের চরিত্রগুলো খুব একটা দেখা যায় না। থাকলেও সেগুলো কদর পায় না। এর কারণে কি ?
খায়রুল আলম সবুজ : আমার কথা হচ্ছে এই চরিত্রগুলো কেন হারিয়ে যাবে? এখন যারা নাটক প্রযোজনা করছে তাদের অনেক ডিমান্ড থাকে পরিচালকের কাছে। সেসব পূরণ করতে গিয়ে ভালো করে নাটক নির্মাণ হয় না। অনেকে আবার পরিচালককে আদেশ-নির্দেশ দেয় ‘একে নাও আর ওকে নিও না। এ চরিত্রটা দরকার নেই, খরচ বাড়বে।’ এসব বলে নাটক থেকে পরিবার, জীবনের ক্রাইসিসগুলো হারিয়ে যাচ্ছিলো। তবে সেসব আবার ফিরে আসছে।

এলএ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।