যোগাযোগ রেখে কাজ খুঁজে নেয়া আমি পারি না : আমিরুল হক চৌধুরী

বিনোদন প্রতিবেদক
বিনোদন প্রতিবেদক বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:৪৫ পিএম, ১৬ আগস্ট ২০২০

আমিরুল হক চৌধুরী। দর্শকপ্রিয় অভিনেতা এবং পরিচালক। মূলত মঞ্চ এবং টেলিভিশন পর্দায় অভিনয় করলেও তিনি বেশ কিছু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। অল্প কিছু বিজ্ঞাপনেও মডেল হয়েছেন। অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি কিছু টেলিছবি নির্মাণও করেছেন। বেশ অনেদিন আগে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রাগৈতিহাসিক গল্প অবলম্বনে তার প্রথম টেলিফিল্ম নির্মাণ।

পরবর্তীতে তিনি ‘একজন গণি মিয়া’ নামের একটি টেলিফিল্ম নির্মাণ করে প্রশংসিত হন। দুটো টেলিফিল্মেরই চিত্রনাট্য তার।

তবে আগের মতো এই মুক্তিযোদ্ধা অভিনেতাকে এখন আর খুব একটা দেখা যায় না। কেন? বয়স তাকে থামিয়ে দিয়েছে নাকি অন্য কোনো কারণ, জাগো নিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপে জানালেন সেই কথা। লিখেছেন অরণ্য শোয়েব-

জাগো নিউজ : শরীরটা কেমন আছে?
আমিরুল হক চৌধুরী : আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি। এই বয়সে শরীর যেমন থাকার কথা তারচেয়ে সুস্থ-সবল আছি।

জাগো নিউজ : আগের মতো পর্দায় দেখা যায় না। ভক্তরা ভাবেন আপনি বুঝি অসুস্থ....
আমিরুল হক চৌধুরী : না না, তেমন কিছু নয়। আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। এই ঈদে কিছু কাজ করেছি। সাত পর্বের একটি সিরিয়াল করেছি আল হাজেন পরিচালিত। ‘শিয়াল বাড়ি’। বিটিভির একটি নাটকে কাজ করলাম, ‘নিরুদ্দেশ হওয়ার আগে’ নাম।

কাজের প্রস্তাব আসে। গল্প-চরিত্র পছন্দ হয় না। নতুনত্ব খুবই কম। সেজন্য কিছু কাজ আবার বাদও দিয়ে দিয়েছি। তাছাড়া এখন করোনার আতঙ্ক তো আছেই। পরিবারের সবাই ভয় পায়। যতোই সোশাল ডিসটেন্স মেনে কাজ হোক। ঝুঁকি কিন্তু থাকেই। ঈদের আগে অনেককেই দেখলাম শুটিং করতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এসবের জন্য একটু দূরে আছি। কারণ আমাদের যাদের বয়স বেশি তাদের নিয়ে শুটিং স্পটেও অনেক সচেতন থাকতে হয়, ঝামেলা পোহাতে হয়।

জাগো নিউজ : তাহলে লম্বা সময় বিরতি পড়বে আবারও?
আমিরুল হক চৌধুরী : এই মুহূর্তে তো তাই মনে হচ্ছে। যদিও কিছু কাজের কথা হচ্ছে। কিছু মানুষ তো থাকে খুব কাছের। তারা কেয়ার করে, সম্মান করে। তাদের সঙ্গে কাজ করতেই হয়। দেখা যাক কী হয়।

জাগো নিউজ : করোনার আগেও কিন্তু আপনাকে খুব একটা নিয়মিত দেখা যেত না নাটকে.....
আমিরুল হক চৌধুরী : আমি আসলে সবসময়ই একটু কম কাজ করেছি। সম্পর্ক বা যোগাযোগ রেখে কাজ খুঁজে নেয়া আমি পারি না। যখন বিটিভিতেও কাজ করেছি অল্প বয়সে তখনও কোনো প্রযোজককে বলিনি যে আমাকে একটি কাজের সুযোগ দেন। কিন্তু কাজ আমি পেয়ে গেছি।

যে চরিত্রটা আমার সেটা প্রযোজক বা পরিচালক আমাকে দিয়েই করাবেন এটাই আমি মনে করি। আমি যদি ওভাবে যোগাযোগ করে কাজ ভাগিয়ে নিতাম তাহলে সেইসময় চারগুণ কাজ করতে পারতাম। তাই যেই সিস্টেমে সারাজীবন চলে এসেছি সেটা এখনো মানছি। আমি কিন্তু এটা অহংকার করে বলছি না। আমি নিজের অভ্যাসটার কথা বলছি।

জাগো নিউজ : অনেকদিন সিনেমাতেও নেই আপনি....
আমিরুল হক চৌধুরী : সিনেমার ক্ষেত্রেও আমি একই কথা বলবো। ‘চাকা’ সিনেমা করেছি। সেই সিনেমায় অভিনয়ের জন্য ১৯৯৫ সালে এশিয়ান টেলেন্ট হিসেবে আমাকে ইনভাইট করে নিয়ে যায় সিঙ্গাপুরে। এরপর আরও কিছু কাজ করেছি। বিশেষ পছন্দের মানুষ হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে সিনেমাতে কাজ করেছি। যাদের সঙ্গে কাজ করা হয়েছে সবাই মনে করেছেন ওই চরিত্রগুলো আমার, তাই ডেকেছেন।

আমিও চলেছি নিজের যোগ্যতায়। আমাকে ডাকলে আমি সাড়া দিয়েছি। সে ঝড় তুফান যাই থাকুক। না ডাকলে কেন যাবো! কেউ কাছের মানুষ বলে কনসিডার কিংবা দয়া করে ডাকলে আমি যাবো না।

তাছাড়া এখন তো সিনেমাই কমে গেছে। মানুষ হলে যায় না। আমি কাজ করলাম কি করলাম না সেটা নয়, আমি চাই আমাদের সিনেমার স্বর্ণযুগ আবার ফিরে আসুক। খুব ভালো দিন ছিলো কিন্তু আমাদের সিনেমার।

জাগো নিউজ : আজকালের নাটকের মান নিয়ে রয়েছে অনেক অভিযোগ এ-ব্যাপারে কি বলবেন ?
আমিরুল হক চৌধুরী : আসলে যখন একটি চ্যানেল অল্প বাজেটের মধ্যে কাজ করতে বলে তখন কিন্তু একজন নির্মাতাকে তার পরিকল্পনার অনেককিছু ছেটে ফেলতে হয়। সঠিকভাবে কোনো পপস করা যায় না, পর্যাপ্ত টেকনিশিয়ান টিম বা ভালো শিল্পীদের পাওয়া যায় না। অনেককিছুই স্যাক্রিফাইস করতে হয়। স্বাভাবিকভাবে মানটাকেও আপনার স্যাক্রিফাইস করতে হবে।

আমি বেশ কিছু নাটক করেছি। আমারও কিন্তু লস হয়েছে। মূল ব্যাপারটি হচ্ছে বাজেট। এর অনেক সমস্যা রয়েছে। ভালো কিছু করতে গেলে খরচটা একটু বেশিই হবে। কিন্তু আশা জাগানিয়া ব্যাপার হচ্ছে এই অল্প বাজেটেও আমাদের এখানে অনেক অনেক ভালো কাজ হচ্ছে। এই যেমন গেল ঈদের অনেক নাটকের কথা শুনছি। দর্শক পছন্দ করেছেন।

পাশাপাশি এটাও বলবো, আজকাল অনেকেই নির্মাতা হয়েছেন খুব অল্প মেধা নিয়ে। কিছু শিল্পীকে যোগার করে ক্যামেরার সামনে দাঁড় করাতে পারলেই কিন্তু নাটক হয় না। নাটকের চরিত্র যাকে ডিমান্ড করে, গল্পে যাকে চাইছে তাকে দিয়েই কাজটি করাতে হবে। আজকাল খুব অসামঞ্জস্যতা দেখি গল্প ও চরিত্রে। অবাক হই। ব্যথিত হই এরা নাটকটাকে টাকা কামানোর হাতিয়ার ভেবেছে, শিল্প ভাবতে পারছে না। আমি কাউকে দোষ দিতে চাই না। তবে কিছু সিস্টেমের সমস্যা আছে। সেগুলো নিয়ে ভাবা জরুরি। চ্যানেল কর্তৃপক্ষকে এক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে।

জাগো নিউজ : বর্তমান প্রজন্মের অভিনয়শিল্পীদের সাথে কাজ করছেন আপনি। তাদের সম্ভাবনা ও ঘাটতি নিয়ে আপনার মূল্যায়ণ জানতে চাই.....
আমিরুল হক চৌধুরী : প্রথম কথা হলো মেধাবী ও সৃষ্টিশীল মানুষেরাই শিল্পচর্চায় যুক্ত হয়। যারা এখানে কাজ করছেন সবারই সৃষ্টিশীল মন আছে। তাই আমি সবাইকেই সম্ভাবনাময় বলবো। এখন সেই সম্ভাবনা কতোটা সাফল্যের মুখ দেখবে তা নির্ভর করছে মেধা, পরিশ্রম, দায়িত্ববোধ, ব্যবহারের সমন্বয়ের উপর। আমি অনেক নতুন ছেলেমেয়ের সঙ্গে কাজ করেছি। তাদের অনেকের সঙ্গে কাজ করে আমি আপ্লুত হয়েছি। আনন্দ হয় ভেবে যে
এতো প্রতিভাবান ছেলেমেয়ে আমাদের আছে।

তবে সবার সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না। যদি এদের দিকে একটু ভালো খেয়াল করা যেতে পারতো তাহলে এরা আরো ভালো কিছু করে দেখতে পারতো।

জাগো নিউজ : আপনি অভিনেতা। পাশাপাশি লেখক ও নির্মাতাও। ব্যক্তিগতভাবে কোনটাকে বেশি উপভোগ করেন আপনি?
আমিরুল হক চৌধুরী : শিল্পের প্রতি যার দায়বদ্ধতা আছে, প্রেম আছে সে শিল্পের সকল জায়গাগুলোকেই উপভোগ করে। সবখানেই সে বিচরণ করতে চায়। এটা শিল্পমনা মানুষের একটা গুণ আমি বলবো। অনেকেই বলে একজন অভিনয় করে ভালো। সে কেন লিখবে, কেন গাইবে, কেন পরিচালনা করবে। সে যদি কাজটি ভালো করে করতে পারে তাতে কারোর তো ক্ষতি নেই। বরং একজন অভিজ্ঞ মানুষ শিল্পকে সমৃদ্ধ করছে এটা স্বস্তির।
আমার কাছে শিল্পচর্চা করাটাই মূল। যখন যে জায়গাগুলোতে কাজ করতে যাই প্রতিটি জায়গাকেই চ্যালেঞ্জিং মনে হয়। আমি সবগুলো কাজ উপভোগ করি।

জাগো নিউজ : অভিনেতা না হলে কি হতেন ?
উত্তর : হা হা হা হা। অভিনেতাই হতাম। অভিনেতা হওয়ার জন্যই এতদূর এসেছি।

এলএ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।