আলাউদ্দিন আলীর হাতে যে ৭টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার

বিনোদন প্রতিবেদক
বিনোদন প্রতিবেদক বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:৪৫ পিএম, ১০ আগস্ট ২০২০

বাংলাদেশের কিংবদন্তি গীতিকার, সুরকার, সংগীত পরিচালক আলাউদ্দিন আলী আর নেই। রোববার (৯ আগস্ট) বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটে রাজধানীর মহাখালীর আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

তার লেখা, সুর করা ও সংগীত পরিচালনায় অসংখ্য গান শ্রোতাপ্রিয় হয়েছে। চলচ্চিত্র, বেতার, টেলিভিশন মিলে প্রায় হাজার পাঁচেক গান তৈরি করেছেন তিনি। সেসব গান আজও মুখে মুখে ফেরে।

তবে চলচ্চিত্রের গানে বিশেষভাবে জড়িয়ে ছিলেন আলাউদ্দিন আলী। এখানে কাজ করা শুরু তার বেহালাবাদক হিসেবে সেই ১৯৬৮ সাল থেকে। এরপর নিজেই সংগীত পরিচালনা করেছেন। সুর করেছেন অসংখ্য কালজয়ী গানে। লিখেছেনও তিনি। সেসব কাজের ভিড়ে সাতবার জিতেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।

তারমধ্যে পাঁচবার জিতেছেন সংগীত পরিচালক হিসেবে, একবার জিতেছেন সুরকার হিসেবে এবং একবার গীতিকার হিসেবে।

চলচ্চিত্রের ইতিহাসে আলাউদ্দিন আলীই একমাত্র সংগীত পরিচালক যিনি ১৯৭৮, ১৯৭৯ এবং ১৯৮০ সালে টানা তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয় করে নেন। তার সঙ্গে তিনটি ছবিতে গান গেয়ে টানা তিনবার সেরা গায়ক হিসেবে আব্দুল হাদী ও সেরা গায়িকা হিসেবে সাবিনা ইয়াসমিনও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়ার গৌরব অর্জন করেন। আর তিনটি ছবিরই পরিচালক প্রয়াত আমজাদ হোসেন।

বলার অপেক্ষা রাখে না, টানা সাফল্যে ঢালিউডে চলচ্চিত্র পরিচালক, সংগীত পরিচালক, গায়ক ও গায়িকার এই চারজনের জুটি খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলো ‘গোলাপি এখন ট্রেনে’, ‘সুন্দরী’ এবং ‘কসাই’ ছবির মাধ্যমে।

১৯৭৮ সালে মুক্তি পায় ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ ছবি। এর জন্য সেরা সংগীত পরিচালক হিসেবে কাজ করে সর্বপ্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান আলাউদ্দিন আলী। এ ছবিতে তার সুর-সংগীতে ‘হায়রে কপাল মন্দ’ এবং ‘আছেন আমার মোক্তার’ গান দুটি পুরস্কৃত হয়। প্রথম গানে কণ্ঠ দিয়ে সেরা গায়িকা হিসেবে সাবিনা ইয়াসমিন, পরের গানের জন্য সেরা গায়ক হিসেবে আব্দুল হাদী জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। প্রথম গানের গীতিকার ছবির পরিচালক আমজাদ হোসেন। তিনিও এই গানের জন্য সেরা গীতিকারের পুরস্কার ঘরে তুলেন। আর আব্দুল হাদীকে প্রথমবারের মতো জাতীয় স্বীকৃতি এনে দেয়া ‘আছেন আমার মোক্তার’ গানটি লিখেছেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার।

১৯৭৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত আমজাদ হোসেনের ‘সুন্দরী’ ছবির জন্যও সেরা সংগীত পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয় করেন আলাউদ্দিন আলী। এ ছবিতে তার সুর-সংগীতে ‘কেউ কোনোদিন আমারে তো কথা দিলো না’ গানে কণ্ঠ দিয়ে আব্দুল হাদী ও সাবিনা ইয়াসমিন সেরা গায়ক ও গায়িকার স্বীকৃতি পান। সেরা গীতিকার হিসেবে
এই গান লিখে আমজাদ হোসেনও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয় করেন।

এরপর ১৯৮০ সালে মুক্তি পাওয়া আমজাদ হোসেনের ‘কসাই’ ছবিতেও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের স্বীকৃতি পান আলাউদ্দিন আলী। এখানে তার সুর-সংগীতে ‘ভালোবাসি বলিবো না আর’ গানের জন্য নারী কণ্ঠশিল্পী হিসেবে সাবিনা ইয়াসমিন পুরস্কার জিতে নেন। একই ছবিতে আলাউদ্দিন আলীর সুর-সংগীতে ‘আমার দোষে দোষী আমি’ গানের জন্য আব্দুল হাদী সেরা পুরুষ কণ্ঠশিল্পী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন। সে বছর অবশ্য গীতিকার হিসেবে পুরস্কার থেকে বঞ্চিত হন আমজাদ হোসেন। ‘ডানপিটে ছেলে’ ছবিতে ‘হায়রে আমার মন মাতানো দেশ’ শিরোনামের গানটি লিখে এই পুরস্কারটি জয় করে নেন প্রয়াত খান আতাউর রহমান।

উল্লেখ্য, পুরস্কার না পেলেও এ ছবিতে আলাউদ্দিন আলীর সুর-সংগীতে রুনা লায়লার গাওয়া ‘বন্ধু তিনদিন তোর বাড়ি গেলাম’ গানটি তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। আজও এই গান মানুষের মন ভরায়।

এরপর ১৯৮৫ সালে মুক্তি পাওয়া ‘প্রেমিক’ ছবিতে গান লেখার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ঘরে তুলেন আলাউদ্দিন আলী। এ চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা করেছেন আলাউদ্দিন আলী এবং তার সহকারী হিসেবে কাজ করেন ফুয়াদ নাসের বাবু। উইকিপিডিয়ায় পাওয়া তথ্যে জানা যায়, চলচ্চিত্রটির গানের রেকর্ডিং হয় কলকাতায়। ‘আমার মনে অনেক জ্বালা’ শিরোনামের গানটি লেখার কথা ছিল গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ারের। কিন্তু তিনি সময়মত কলকাতায় পৌঁছাতে না পারায় সংগীত পরিচালক আলাউদ্দিন আলী নিজেই গানটি লেখেন। এ গানে কণ্ঠ দিয়ে সাবিনা ইয়াসমিন ও গীতিকার হিসেবে আলাউদ্দিন আলী উভয়ই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।

১৯৮৮ সালে ‘যোগাযোগ’ ছবিতে সংগীত পরিচালনা করে ৫ম বারের মতো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান আলাউদ্দিন আলী। এখানে তার সহকারী হিসেবে ছিলেন অভিনেত্রী শবনমের স্বামী রবীন ঘোষ। মইনুল হোসেন পরিচালিত এ সিনেমার গানগুলোর কথা লিখেছেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন সাবিনা ইয়াসমিন, এন্ড্রু কিশোর, রুনা লায়লা, সৈয়দ আব্দুল হাদী, কুমার বিশ্বজিৎ ও শামীমা ইয়াসমিন দিবা।

সর্বশেষ সংগীত পরিচালক হিসেবে ১৯৯০ সালের ‘লাখে একটা’ ছবিতে জাতীয় স্বীকৃতি পান আলাউদ্দিন আলী। কাজী কামাল পরিচালিত এই ছবিতে অভিনয় করেছেন ফারুক, কবরী, সুচরিতা, আলমগীর, অলিভিয়া, এটিএম শামসুজ্জামান প্রমুখ। ছবিতে বেশ কিছু গানে কণ্ঠ দিয়েছেন এন্ড্রু কিশোর, সাবিনা ইয়াসমিন প্রমুখ।

তবে তিনি ক্যারিয়ারের সর্বশেষ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান ২০০২ সালের ‘লাল দরিয়া’ ছবিতে। এখানে মনির খানের গাওয়া ‘সে আমার ভালোবাসার আয়না’ গানের সুরকার হিসেবে স্বীকৃতি পান তিনি। গানটির জন্য মনির খান সেরা গায়ক এবং গাজী মাজহারুল আনোয়ার সেরা গীতিকারের পুরস্কার পান। এ গানে ঠোঁট মিলিয়েছেন চিত্রনায়ক রিয়াজ।

এলএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।