মিশা-জায়েদ পদত্যাগ না করলে কোনো আপস নয়
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানকে বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে সিনেমার ১৮টি সংগঠন তথা চলচ্চিত্র পরিবার। এই ঘোষণার প্রতিবাদে দুই নেতার পাশে দাঁড়িয়েছে শিল্পী সমিতির বর্তমান কমিটির অন্য নেতারা। তারা চলচ্চিত্র পরিবারকে আল্টিমেটাম দিয়েছে মিশা-জায়েদের বয়কট ঘোষণা বাতিলের জন্য। নইলে তারা ১৮ সংগঠনকেই বয়কট করবে।
সে প্রেক্ষিতে জল আরও ঘোলা হয়ে এলো চলচ্চিত্রের বর্তমান পরিস্থিতির। মিশা-জায়েদ পদত্যাগ না করা পর্যন্ত শিল্পী সমিতির শিল্পীদের সঙ্গে কোনো আপস হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে চলচ্চিত্র পরিবার। বুধবার (২২ জুলাই) এফডিসিতে চলচ্চিত্র পরিবারের আওতায় ১৮টি সংগঠনের জরুরি এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বৈঠকে সংগঠনের নেতারা বলেন, মিশা-জায়েদের পদত্যাগের আগে সমঝোতা বা আলোচনার কোনো সুযোগ নেই। এসব সিদ্ধান্ত চলচ্চিত্রের স্বার্থেই নেয়া হয়েছে।
এর আগে গত ১৫ জুলাই চলচ্চিত্র স্বার্থে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ১৮টি সংগঠন ঐক্যবদ্ধ হয়ে মিশা সওদাগর ও জায়েদ খানকে বয়কটের ঘোষণা দেয়। সেদিন মিশা-জায়েদের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহার করে যখন-তখন শিল্পীদের সদস্যপদ বাতিল করা, দুর্নীতি, চলচ্চিত্রের উন্নয়ননীতির বিরুদ্ধে শিল্পীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করাসহ নানা অভিযোগ আনা হয়।
এই বয়কটের প্রতিবাদে গত ১৯ জুলাই এফডিসির জহির রায়হান মিলনায়তনের প্রদর্শন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি। সেখানে নেতারা সিনেমার স্বার্থে সবাইকে এক হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান। পাশাপাশি জায়েদ-মিশাকে বয়কটের সমালোচনাও করেন।
সে প্রেক্ষিতে বুধবার চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ১৮ সংগঠনের নেতারা জরুরি বৈঠকে বসেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রযোজক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু, সম্পাদক শামসুল আলম, পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার, মহাসচিব বদিউল আলম খোকন, চলচ্চিত্র পরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, সোহানুর রহমান সোহান, ফিল্ম ক্লাবের নেতা ওমর সানী, ১৮ দলের সমন্বয়ক বিপ্লব শরীফ প্রমুখ।
বৈঠকে শিল্পী সমিতির নেতা রুবেল, ডিপজলসহ অভিনেতা ফারুকেরও সমালোচনা করেন চলচ্চিত্র পরিবারের নেতৃবৃন্দ।
বৈঠক শেষে প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু বলেন, ‘শিল্পী সমিতির নেতারা বলছেন মিশা ও জায়েদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। অথচ আমরা তাদের দুজনের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ পেয়েছি, তার প্রমাণও হাতে পেয়েছি। এছাড়াও নতুন করে কিছু দুর্নীতির অভিযোগও এসেছে।’
‘২০১৯ সালে চলচ্চিত্র দিবসে যে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান কাজ করেছিল, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে খরচ বাবদ তারা জায়েদ খানকে ছয় লাখ টাকা দিয়েছিল। বারবার চিঠি দেয়া সত্ত্বেও চলচ্চিত্র উদযাপন কমিটির আহ্বায়ককে সেই খরচের হিসাব দেননি জায়েদ খান। এ হিসাবের বাইরেও ঘুষ হিসেবে তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আরও দুই লাখ টাকা নিয়েছেন। এগুলো অভিযোগ নয়? আরও আছে। তারা প্রমাণ চাইলে, প্রমাণের ব্যবস্থা আছে।’
এদিকে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জায়েদ খান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তারা মনগড়া কথা বলছে। আমার ঘুষ নেয়ার ব্যাপারে তাদের কাছে কোনো প্রমাণ আছে? প্রমাণ না থাকলে এসব নিয়ে কথা বলব না। আর আমাকে বয়কট করছে যারা, তারা কে? আমার ব্যাপারে কেবল শিল্পী সমিতিই সিদ্ধান্ত নিতে পারে। অন্যরা না।’
এর জবাবে প্রযোজক সমিতির সেক্রেটারি শামসুল আলম বলেন, ‘এসব হলো স্বেচ্ছাচারিতার পরিচয়। তাকে বয়কট করেছে চলচ্চিত্র পরিবার। এই পরিবার সিনেমার মানুষদের নেতৃত্ব দেয়। সে যদি চলচ্চিত্র পরিবারকে না চেনে তাকে তবে সেটা তার দুর্ভাগ্য এবং অযোগ্যতা।’
এলএ/বিএ