আমি জানতে চাই শাকিব খান কি শিল্পীর মধ্যে পড়ে না : অমিত হাসান

বিনোদন প্রতিবেদক
বিনোদন প্রতিবেদক বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:৩৯ পিএম, ১৯ জুলাই ২০২০

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানকে বয়কট করেছে চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট ১৮টি সংগঠন। এখন থেকে চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট কোনো অনুষ্ঠানে জায়েদকে কেউ আমন্ত্রণ জানাতে পারবেন না, তিনিও কোনো অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারবেন না। যে আমন্ত্রণ করবেন, তাকেও একঘরে করবে ১৮ সংগঠন।

গত বুধবার (১৫ জুলাই) দুপুরে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের জহির রায়হান কালার ল্যাব মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান চলচ্চিত্রের উন্নয়নে কাজ না করে ব্যক্তিস্বার্থে নিজের পরিচয় ব্যবহার করছেন।

চলচ্চিত্র পরিবারের দাবি, জায়েদ খান অন্য শিল্পীদের হয়রানি করেন, মিথ্যা মামলার ভয় ও ক্ষমতার দাপট দেখান। তার কাজের সমালোচনাকারীকে সমিতির সদস্যপদ বাতিলসহ নানাভাবে ক্ষতির চেষ্টা করেন।

এদিকে আজ রোববার ১৯ জুলাই দেখা যায় আরেক চিত্র। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন বিএফডিসির গেটের সামনে মিশা-জায়েদের পদত্যাগ চেয়ে রাস্তায় নেমেছেন শিল্পী সমিতির ভোটাধিকার হারানো ১৮৪ জন শিল্পী। আজ বেলা সাড়ে ১১টায় এসব শিল্পী এফডিসির গেটে মানববন্ধন করেন। সেই সঙ্গে ‘যে নেতা শিল্পীদের সম্মান করে না, তাকে আমরা চাই না’ স্লোগান দিয়ে ভোটাধিকার ফেরত দেওয়ার পাশাপাশি মিশা-জায়েদের পদত্যাগ দাবি করেন।

এ বিষয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেন শিল্পী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক চিত্রনায়ক অমিত হাসান। তিনি বলেন, এটা শিল্পী সমিতির জন্য লজ্জার। কারণ ইতিহাসে এই প্রথম কোনো সভাপতি ও সেক্রেটারির পদত্যাগের দাবিতে এফডিসির গেটের সামনে মানববন্ধন করলেন শিল্পীরা। তাদের কিছু নোংরা কার্যকলাপের জন্য আজ শিল্পীরা গেটে অবস্থান নিয়েছেন। যাদের অন্যায়ভাবে বাদ দেয়া হয়েছে ভোটার তালিকা থেকে তারা অনেক সিনেমায় কাজ করেছেন। তাদের সঙ্গে এটা করা ঠিক হয়নি।

যারা এখন ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন তারাই কিন্তু ২০১৭ সালের নির্বাচনে ভোট দিয়ে মিশা-জায়েদকে নির্বাচিত করেছিলেন। এটা আসলেই দুঃখজনক। এই সমিতি আমাদের প্রাণের সমিতি। এই সমিতির কোনো বদনাম হোক আমি ব্যক্তিগতভাবে তা চাই না। আলোচনার মাধ্যমে সবকিছুর সমাধান সম্ভব। কিছু ব্যক্তির জন্য সমিতির ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে, এটা কাম্য নয়।’

শিল্পীদের মধ্যে এবং শিল্পী সমিতিতে অতীতে এমন বিভাজন কী হয়নি? এ প্রশ্নের জবাবে এই অভিনেতা বলেন, ‘শিল্পী সমিতি কিন্তু আজকের নয়। সেই রাজ্জাক সাহেবের আমল থেকে এটি মূল ধারার চলচ্চিত্র শিল্পীদের নিয়ে শুরু হয়। তখন থেকে আমার সময় (সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন) পর্যন্ত এই যে শিল্পীদের মধ্যে বিভাজন কোনো টার্মেই এটা হয়নি। শুধু আমাদের ক্ষমতা ছাড়ার পর যারা এসেছেন তাদের থেকেই এটা শুরু হয়েছে। এসব কেন হবে? এগুলো শিল্পীদের সবার খতিয়ে দেখা উচিত।’

মিশা-জায়েদের হাত ধরে সমিতির নাকি বেশকিছু ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে বলে মনে করেন অনেকে। আপনার নেতৃত্বাধীন সময়ে সমিতির উন্নয়নের চিত্রটা কেমন ছিল জানতে চাই। উত্তরে অমিত হাসান বলেন, ‘মিশা-শাকিবের প্যানেল ছিল। আমি কিন্তু স্বতন্ত্র থেকে পাশ করেছিলাম। শিল্পীরা আমাকে ভালোবাসে বলেই তারা পাস করিয়েছিলেন। অনেকে না জেনে বুঝে বলে যে শিল্পী সমিতির সৌন্দর্য বাড়িয়েছে এরা। ভুল। আমরাও শিল্পীদের উন্নয়ন ও সাহায্য করেছি, প্রচার করিনি। এই শিল্পী সমিতির যত সৌন্দর্য এখন চোখে লাগছে তার অনেক কিছুই আমি করেছি। এই যে শিল্পী সমিতির বাগান, বসার স্থান, সমিতির ঘরের টাইলস-চাকচিক্য এটা শাকিব সভাপতি থাকাকালীন আমি নিজ দায়িত্বে করেছি।

এই সুন্দর পরিবেশটা আমরা করেছি। আমাদের সময়ে শিল্পীদের মধ্যে কোনো বিভাজন ছিল না। সবার সাথে সবার ভালো সম্পর্ক ছিল। আগে যারা ছিলেন তাদেরও সময়টা খুব ভালো ছিল। একটা কথা বলতে হচ্ছে এখন। সেটা হলো আমাদের সময়ও সিনিয়র শিল্পীরা আসতেন, আড্ডা দিতেন এবং অসচ্ছল শিল্পীদের আমরাও অনেক সাহায্য করেছি। কিন্তু সেটা আমরা ফেসবুকে ছবি দিয়ে বা সাংবাদিকদের ধরে খবরের শিরোনামে দেইনি। এটা দেবই বা কেন?

আমাদের শিল্পীকে আমরা সাহায্য করবো সেটা জনগণ জানবে কেন? তারা জানলে শিল্পীদের ইমেজটা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়? শিল্পীদের ছোট করা হয় এভাবে। শিল্পীদের যেটা প্রয়োজন হতো সেটি আমরা নিজেরা গিয়ে হাতে তুলে দিতাম। কিন্তু ছবি তুলতাম না এবং প্রচারমাধ্যমে আনতাম না।’

‘জায়েদ খানের সময়ে প্ৰশ্ন আসলো বয়কট কিংবা শিল্পীদের অবাঞ্ছিত করা যায় না। কিন্তু শাকিব খানের সময়ে তো তারাই সামনের সারিতে ছিলেন আজ যারা জায়েদকে সেভ করতে চাইছেন’- এমন মন্তব্য করে অমিত হাসান আরও বলেন, ‘আমাদের প্রিয় বড় ভাই ফারুক ভাই একটা কথা বলেছেন, ‘শিল্পীদের অবাঞ্ছিত করা যায় না। শিল্পীদের বয়কট করা যায় না। শিল্পীরা সবকিছুর উপরে। আসলেই তাই। আমিও এটা বলি, আমিও মানি কথাটি। কিন্তু যখন শাকিব খানকে এই ১৮ সংগঠনের পক্ষ থেকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে বয়কট করা হয়েছিল তখন তো আমাদের প্রিয় মিয়াভাই (অভিনেতা ফারুক) তাদের প্রধান ছিলেন। তখন তো আপনি এই কথাগুলো বলেননি।

ভাইয়ের কাছে আমার প্রশ্ন। আশা করছি তিনি বেয়াদবি নেবেন না। তিনি আমার মুরুব্বি। ইচ্ছা হলে মারতে পারেন, কাটতে পারেন। কারণ তাকে সবসময়ই অভিভাবক হিসেবে আমি মানি। বিনয়ের সাথে জানতে চাই, দুজনের বেলায় দুরকম কেন বলছেন ভাই? জায়েদ খান শিল্পী আর শাকিব খান কি শিল্পীর মধ্যে পড়ে না?’

এলএ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।