রাতারগুলে মাছ নিধনে বিষ প্রয়োগ : পরিবেশ ধ্বংসের আশঙ্কা


প্রকাশিত: ০৯:২২ এএম, ২৭ অক্টোবর ২০১৫

দেশের একমাত্র জলাবন (সোয়াম্প ফরেস্ট) ও বন্যপ্রাণী এবং মাছের অভয়ারণ্য সিলেটের রাতারগুলের পরিবেশ ধ্বংসের মুখে।

এখানকার কইয়ারখালে রয়েছে দেশীয় মাছের পাশাপশি বিভিন্ন প্রকারের জলজ প্রাণি ও অণুজীব। আর এই অভয়ারণ্যের ভেতর মাছ নিধন করতে বিষ প্রয়োগ করছে দুর্বৃত্তরা। এর সঙ্গে বন বিভাগের স্থানীয় কর্মকর্তা-কর্মীরাও জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।

এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, এবারের শুষ্ক মৌসুমকে সামনে রেখে চইলতাবাড়ি এলাকার একটি পক্ষ কইয়ারখালে মাছ ধরতে নানা তৎপরতা শুরু করে। প্রকাশ্যে মাছ শিকার করতে না পারায় তারা রাতের বেলা বিষ দিয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গত শনিবার রাত দুইটার দিকে সাত-আটজন লোক বস্তা নিয়ে রাতারগুলের ভেতর কইয়ারখালের দিকে যায়। ভোর পাঁচটা থেকে সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত খালের বড় মাছগুলো ধরে নিয়ে চলে যায় তারা।

Ratergul

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নে অবস্থিত ‘রাতারগুল’ বাংলাদেশের সমৃদ্ধ জলার বন। নদী ও হাওরবেষ্টিত ৫০৪ দশমিক ৫০ একর আয়তনের এই এলাকাকে ১৯৭৩ সালে সংরক্ষিত ঘোষণা করে বন বিভাগ।

গত বছর জানুয়ারিতে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, বিশ্রামাগারসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করে বন বিভাগ। ওই সময় পরিবেশবাদীরা এর প্রতিবাদ জানান।

শুষ্ক মৌসুমের শুরুতে রাতারগুলে প্রবেশমুখের কইয়ারখাল জলমহাল হিসেবে তিন বছর মেয়াদে ইজারা দিত বন বিভাগ। এর আগে ২০১২ সালের অক্টোবর মাসে পরিবেশবাদীদের ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটামের মুখে খইয়ার খালের অবৈধ ইজারা বাতিল করে বন বিভাগ। এসব কারণে বন বিভাগের কর্মীরাও ক্ষীপ্ত হয়ে আছেন।

বন বিভাগের ওয়েবসাইটে বলা আছে, রাতারগুল দেশের দৃষ্টিনন্দন জলাভূমির বন। এ বনাঞ্চল মাছের আবাসস্থলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু গত রোববার মাছের সেই গুরুত্বপূর্ণ আবাসস্থল সম্পূর্ণরুপে ধ্বংস করে দেয়া হয়। গভীর রাতে ঢেলে দেয়া বিষের প্রতিক্রিয়ায় ভোর থেকে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, সাপ ব্যাঙ, কাঁকড়া আধমরা হয়ে ভেসে ওঠে। স্থানীয় গ্রামবাসীরা বিষয়টি দেখতে পেয়ে বন বিভাগ ও পরিবেশকর্মীদের তাৎক্ষণিকভাবে অবগত করেন।

Ratergul

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খাল থেকে তুলনামূলকভাবে বড় আধমরা মাছগুলো দুর্বৃত্তরা ভোররাতেই সংগ্রহ করে নিয়ে গেছে। এখন আধমরা ছোট মাছগুলো মরে ভেসে উঠছে। সে সব মাছ সংগ্রহ করতেই বনের ভেতর সাধারণ গ্রামবাসীর এই ঢল ।

পরিবেশকর্মী সৈয়দ সোহাগ বলেন, খালের পানিতে বিষ ঢালার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ভেসে থাকা মাছ বা সাপের ময়নাতদন্ত করা জরুরি।

এ বিষয়ে বাপা সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রাতারগুল জলার বনের প্রাণ বৈচিত্র্য যে ধ্বংসের শেষ সীমায় পৌঁছেছে তা সরকারের দায়িত্বশীল কোনো ব্যক্তিকে বোঝানো যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, রাতারগুল জলারবনকে সুরক্ষায় অবিলম্বে বিশেষজ্ঞ মতামতের ভিত্তিতে সায়াম্প ফরেস্ট আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন। এই বনের বৈশিষ্ট অক্ষুণ্ন রাখতে হলে মাছসহ জলজপ্রাণি হত্যা বন্ধ করতে হবে।

ছামির মাহমুদ/এমএএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।