ঝালকাঠির ২৪টি স্কুলে চলছে ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান


প্রকাশিত: ০৯:১১ এএম, ২৭ অক্টোবর ২০১৫

ঝালকাঠি জেলায় ১২৮টি ঝুঁকিপূর্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে অতি ঝুঁকিপূর্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ২৪টি। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৫টি, নলছিটি উপজেলায় ৬টি, রাজাপুর উপজেলায় ৭টি ও কাঠালিয়া উপজেলায় ৬টি। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ সকল বিদ্যালয়ে চলছে পাঠদান কার্যক্রম।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নলছিটি উপজেলার ২নং ভৈরবপাশা ইউনিয়নের রায়পাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন পাঠদানের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিদ্যালয়ের ভবনটি একটি টিন শেড বিল্ডিং। বিদ্যালয়ের প্রত্যেকটি স্থান সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। দেয়ালের পলেস্তরা খসে পড়ে গেছে। পিলারগুলো ক্ষয় হয়ে সরু হয়ে যাওয়ায় রড বেরিয়ে কাঠামো দূর্বল হয়ে পড়েছে। যে কোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে বিদ্যালয় ভবনটি। ফলে বিপাকে পড়েছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।

বিদ্যালয়টি ঘুরে দেখা যায়, শিক্ষকদের একটি সরু কক্ষসহ মোট চারটি কক্ষ রয়েছে। শ্রেণি কক্ষগুলোর খুবই নোংরা। দরজা জানালা কিছুই নেই, যা আছে তা সবই ভাঙা। তিনটি শ্রেণিকক্ষের জন্য মাত্র ছয়টি বেঞ্চ রয়েছে। এমনকি শিক্ষকদের জন্য শ্রেণিকক্ষে কোনো টেবিল নেই। একটি শ্রেণি কক্ষের দরজাসহ দেয়ালের বেশ কিছু অংশ ভেঙে পড়েছে। জানালাগুলো দেয়ালের সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে ঝুলছে। ফলে যে কোনো সময় ঘটে যেতে পারে দুর্ঘটনা। শ্রেণিকক্ষে পর্যাপ্ত বেঞ্চ না থাকায় শিক্ষার্থীরা ইটের উপর কাঠ বিছিয়ে শ্রেণিকক্ষে পড়াশোনা করছে।

বিদ্যালয়ের সামনে ছোট একটি মাঠ রয়েছে। কিন্তু মাঠটি অনেক নিচু হওয়ায় সব সময় পানি জমে থাকে। ফলে একটি ডোবার মত মনে হয়। শিক্ষার্থীদের খেলার কোনো জায়গা নেই। বিদ্যালয়ের টিনগুলো অনেক পুরনো হওয়ায় মরিচা ধরেছে ও অসংখ্য ছিদ্র হয়েছে। ফলে অল্প বৃষ্টিতেই ভিতরে পানি পড়ে। শ্রেণিকক্ষের মেঝের পলেস্তরা উঠে যাওয়ায় ও ছিদ্র টিন দিয়ে পানি পড়ার কারণে শ্রেণিকক্ষ কর্দমাক্ত হচ্ছে।

রায়পাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হামিদা সুলতানা জাগো নিউজকে বলেন, বিদ্যালয়ে আমরা মোট চারজন শিক্ষক। চারজনই নারী। সব সময়ই আতঙ্কের মধ্যে থাকি। হামিদা সুলতানা আরও বলেন, বিদ্যালয়টি ১৯৯৬ সালে কমিউনিটি স্কুল হিসেবে নির্মিত হয়। এরপর ২০০৫ সালে সংস্কার করা হয়। ২০০৫ সাল থেকে আজ পর্যন্ত আর কোনো সংস্কার হয়নি। কমিউনিটি বিদ্যালয় থেকে যাত্রা শুরু করে ২০০৯ সালে রেজিস্ট্রার ও এরপর ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি সরকারিকরণ করা হয়।

শ্রেণিকক্ষে বেঞ্চ নেই এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে প্রধান শিক্ষক হামিদা সুলতানা বলেন, ২০০২ সালে ১৫টি বেঞ্চ আনা হয়। এরপর আমরা আর কিছুই পাইনি। তিনি আরও বলেন, আমি উপজেলা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে কয়েকবার স্কুলের বিষয়ে বলেছি। তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না আবার পরিত্যক্ত ঘোষণাও করছেন না।

তিনি বলেন, গত বছর সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জিকে মোস্তাফিজকে আমরা স্কুলে এনেছিলাম সামাজিক চেষ্টায় বিদ্যালয়ের কোনো পরিবর্তন আনা যায় কিনা সেজন্য। তবে তিনিও ব্যবস্থা নিতে পারেননি। তাছাড়া বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যাও দিন দিন কমে যাচ্ছে। অভিভাবকরা তাদের ছেলে মেয়েদের দূরের অন্য কোনো স্কুলে ভর্তি করছে।

বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী টুটুল, সজল ও রাফিউল বলে, স্কুলে আসতে আমাদের ভয় লাগে। মা মাঝে মধ্যে স্কুলে আসতে দেয় না। স্কুলে বেঞ্চ নাই তাই ইটের উপর বসে ক্লাস করি।

৩য় শ্রেণির ছাত্রী আসমা আক্তার বলে, একটু বৃষ্টি অথবা বাতাস হলেই মা আমাকে স্কুলে আসতে দেয় না। বাতাস হলে ভেঙে পড়ার আতঙ্কে এবং বৃষ্টি হলে বই খাতা ভিজে যাবার ভয়ে।

বিদ্যালয়ের শিক্ষক শামীমা আক্তার বলেন, বর্ষায় অতি বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসের সময় মনে হয় ভবনটি ভেঙে পড়বে। স্কুলের পিছনে বেশ কয়েকটি বড় গাছ রয়েছে। ঝড়ো বাতাসে গাছের একটি ডাল পড়লেই স্কুলটি ভেঙে পড়বে। সব সময়ই আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাতে হয়।

ভৈরবপাশা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হক জাগো নিউজকে বলেন, এটি নিয়ে বিভিন্ন দফতরে লেখালেখি ও অনেক ধরনা দিয়েছি। কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ না নেয়ায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অসহনীয় কষ্ট পোহাতে হচ্ছে। বিকল্প কোনো জায়গা ও কোনো ভবন না থাকায় কর্তৃপক্ষ হয়তো স্কুলটিকে পরিত্যক্তও ঘোষণা করতে পারছে না। তাই দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মাসুদ আলম জাগো নিউজকে বলেন, স্কুলের বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী আমির হোসেন আমুকে বলেছি আমরা। আমাদের চাওয়া হচ্ছে একটি সাইক্লোন শেল্টার কাম প্রাথমিক বিদ্যালয় যাতে করে দেয়া হয়।

বিদ্যালয়ের পরিদর্শন বইতে দেখা যায়, গত ২৬ জুলাই ২০১৫ তারিখে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার আরজুদা বেগম বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেন এবং মতামতে লেখেন বিদ্যালয়ের অবস্থা সম্পর্কে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।

এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নিখিল চন্দ্র হালদারের বক্তব্য নেয়ার জন্য একাধিকবার ধরনা দিলেও তিনি বক্তব্য দিতে অপ্রস্তুত অজুহাত দেখিয়ে এড়িয়ে যান।  
     
জেলা প্রশাসক রবীন্দ্রশ্রী বড়ুয়া বলেন, জেলার ঝুঁকিপূর্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয় সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে তালিকা দেয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু করা হবে। পর্যায়ক্রমে ঝুঁকিপূর্ণ সব বিদ্যালয়গুলোই সংস্কার করা হবে।

এসএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।