দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে অনেক দৃশ্যই জমছে না : আরফান আহমেদ

বিনোদন প্রতিবেদক
বিনোদন প্রতিবেদক বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:৫৪ পিএম, ১৬ জুলাই ২০২০

আরফান আহমেদ। ছোট পর্দার একজন জনপ্রিয় অভিনেতা। বিভিন্ন জেলার আঞ্চলিক ভাষার নাটকে এবং কৌতুক চরিত্রে অভিনয়ের জন্য খ্যাতি অর্জন করেছেন। ১৯৯৪ সালে অভিনয়ের যাত্রা শুরু হয় তার। বনফুল মিষ্টির একটি বিজ্ঞাপন প্রথম কাজ। ১৯৯৭ সালে লিস্টেড হন বিটিভির শিল্পী হিসেবে ও ১৯৯৫ সালের ডিসেম্বরে প্রথম নাটকে অভিনয় করেন। সাপ্তাহিক সেই নাটকের নাম ‘পুরস্কার’।

অভিনেতা হওয়ার আগে নাটকের নেপথ্যে কাজ করেছেন। প্রায় একশো’টি নাটকের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন তিনি। প্রথম ধারাবাহিক নাটক ‘আকালি’ প্রচার হয় ১৯৯৬ সালে। অভিনয়ের পাশাপাশি আরফান আহমেদের ক্যামেরার পেছনে কাজ করার অভিজ্ঞতা বেশ। তিনি অনেক নাটক লিখেছেনও। বহুমুখী এই অভিনেতাকে নিয়ে লিখেছেন অরণ্য শোয়েব-

জাগো নিউজ : এখনো অবসরে নাকি শুটিংয়ে ফিরেছেন ?
আরফান আহমেদ : দীর্ঘ তিন মাস বাসায় ছিলাম যখন সংগঠনগুলো কাজ বন্ধ করার সিদ্বান্ত নেয়। বর্তমানে কাজ করছি। সংগঠনগুলো কাজ করার অনুমতি দেয়ায় কাজে যোগ দিয়েছি। প্রায় টানা কাজ করছি চার পাঁচদিন গ্যাপ ছাড়া।

জাগো নিউজ : স্বাস্থ্যবিধি এবং দূরত্ব মেনে শুটিং করতে কি কি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন ?
আরফান আহমেদ : অনেক সমস্যায় পরতে হচ্ছে। ঠিক মেলাতে পারছিনা অনেক কিছুই। কিছু দৃশ্য থাকে যেখানে অনেক লোক থাকতে হয়। সেখানে দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে সিনটা জমিয়ে করতে পারছিনা। ধরুন একটি বিয়ে বাড়ির দৃশ্য। সেখানে অনেক লোকের সমাগম দরকার। কিন্তু দেখা যাচ্ছে আট দশজন লোক দূর থেকে রয়েছেন।আবার দেখা যায় একটি ফুটবল টুর্নামেন্ট আছে সেখানেও তেমন মানুষ শো করা যাচ্ছে না। আসলে এমন হলে কন্টেন্ট কিছুটা দুর্বল হয়ে যায়।

জাগো নিউজ : অবস্থা চলমান থাকলে এভাবেই কি কাজ করবেন?
আরফান আহমেদ : জানি না আসলে। পরিস্থিতি কি হয় কে জানে। এমনও হতে পারে কাজ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আমার ঈদ উপলক্ষে কিছু কাজ করতে হচ্ছে। আমরা অনেকেই করছি। ঝুঁকি নিয়েই। কারণ আমাদের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত ইউনিটের অনেকেই কাজ করে দুটো পয়সা পাচ্ছে। সবাইকেই তো আসলে টিকে থাকতে হবে। শুনছি কাজ করতে গিয়ে অনেকে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এটা ভয়ের। তবু সাবধান থেকে কাজ করে যেতে হবে। আশা করছি সব সঠিক হয়ে যাবে এবং করোনাকে আমরা জয় করবো ইনশাল্লাহ।

জাগো নিউজ : করোনার কারণে তিন মাস ঘরে ছিলেন বললেন। সেই অবসরে বিশেষ কাজগুলো কি করছেন?
আরফান আহমেদ : এতদিন অবসরে থাকার সুযোগ আগে কখনো পাইনি। আমার একটু লেখালেখির অভ্যাস আছে। চেষ্টা করেছি কিছু লিখতে। কিছু সিঙ্গেল নাটক লিখেছি। এরপরে পারিবারিকভাবেও একটু ব্যস্ত ছিলাম। এই লকডাউনে সবার সাথে বেশি বেশি যোগাযোগ হয়েছে যেটা আগে হয়নি। বেশ মজা।

ছোটবেলার বন্ধুদের সাথেও কথা হয়েছ। তবে পারিনি শুধু দেখা করতে। কিন্তু ইচ্ছে হতো যদি একটু দেখা করতে পারতাম।

জাগো নিউজ : এই মুহূর্তে কোন বিষয়টি ভালো লাগছে ?
আরফান আহমেদ : মানুষ খুব সচেতন হয়ে গেছে আগের চেয়ে। দেখা যাচ্ছে খাবার পরেও মনে করছেন হাতটা ভালো করে আবার ক্লিন করি। আগে লক্ষ্য করা যেত খুব অস্থিরতা। সেই বিষয়গুলো থেকে মানুষ বের হতে পারছে। তারপরে এই যে সামাজিক দূরত্বটা সৃষ্টি হয়েছে। একজন আরেকজনের কাছ থেকে বিনয়ের সাথে কথা বলছে। আবার মানুষের প্রতি ভালোবাসা মায়া বেড়েছে সবার। এটা আগে ছিলো না।

জাগো নিউজ : নাটকের গল্প ও মান নিয়ে মাঝে মধ্যেই প্রশ্ন ওঠে। বিষয়টি কি বলবেন ?
আরফান আহমেদ : এখানে নায়ক-নায়িকা, প্রযোজক, পরিচালক ও এজেন্সিকে দোষ দিলে হবে না। কিংবা সিস্টেমের দোষও নেই। সামগ্রিভাবে আমরা সবাই একটি মন্দ কাঠামোর মধ্যে পড়ে গেছি। দেখুন, স্বল্প বাজেটে কাজ করতে গেলে কিছুটা সমস্যা হয়। এখন অনেক নাটকেই দেখা যায় একদিনের মধ্যে একটি নাটক নামিয়ে ফেলতে হয় বাজেটের কারণে।

আগে বিটিভিতে যখন কাজ করতাম তখন তিন চারদিন রিহার্সেল করার পর কয়েকদিন ধরে শুটিং শেষ হত। এখন সেটি কমতে কমতে কেউ একদিন দুইদিনেই নাটক শেষ করছেন বাজেটের অভাবে। বলা যায় বাজেটের কারণে অনেক সংকটময় অবস্থা তৈরি হয়েছে। এভাবে কাজ করলে মান তো কমবেই। কয়েকজন পরিচালক কিন্তু আছেন যারা বেশ সময় নিয়ে কাজ করেন। কারণ তারা সেই বাজেটটা পান। আমি বলবো সমালোচনা না করে কাজ হচ্ছে সেটাকে সমর্থন দেয়া উচিত।

জাগো নিউজ : সিনেমার কোনো খবর আছে ?
আরফান আহমেদ : আমি দুটো সিনেমায় কাজ করেছি। কিন্তু সেগুলো তেমন আলোচনায় আসেনি। ভালো চরিত্র পাই না। আসলে ঠিক সেই চরিত্রের জন্যই অপেক্ষা করি যেটাতে কাজ করলে মানুষের ভালো লাগবে। এখন পর্যন্ত ভালো কোনো সিনেমার অফার আসেনি। কিন্তু সিনেমার অফার পাই প্রতিনিয়ত। দর্শক পছন্দ না করলে কাজ করে লাভ কী!

জাগো নিউজ : আপনি সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে কেন?
আরফান আহমেদ : আমার ভালো লাগে না এভাবে সময় নষ্ট করতে। তাই কোনো ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বা পেজ নেই। ভুয়া কিছু আইডি ছিল যা নিয়ে আমি একটি জিডি করেছি নীলক্ষেত থানায়। আমার যে ফেসবুক আইডিটি আছে সেটা আমি ব্যবহার করি না। যেটা আমি ব্যবহার করি না সেটাই আমার অরিজিনাল আইডি।

আসলে সারাদিন নাটক শুটিং করার পরে ইচ্ছে হয় না কারোর কথার উত্তর দিতে। তখন এতো এনার্জি থাকে না। আমি আসলে এটি নিয়ে কমফোর্ট ফিল করি না।এর জন্য আমি সবার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী যারা চান আমি সোশাল মিডিয়ায় থাকি। এটা আমার অলসতা বলাও যায় (হাসি দিয়ে )।

জাগো নিউজ স্পেশাল : শেষ দুই প্রশ্নের উত্তর চাই।
১/ প্রথমটি হলো কোনো অভিনেতা অভিনেত্রীর সাথে কাজ করে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে?
উত্তর : আমি আমার নিজের সঙ্গেই কাজ করে তিক্ততা পেয়েছি। আমি যদি নিজেকে আরও একটু কুল করতে পারতাম তাহলে সবই ঠিক থাকতো। এই ক্ষেত্রে আমি আমাকেই দায়ী করবো। আরফান আহমেদ একজন অভিনেতা যিনি আসলে ভালো অভিনয়টা বোঝেন না। আমার একাডেমিক কোনো ক্যারিয়ার নেই। থিয়েটারে কাজ করিনি। ঈশ্বর প্রদত্ত যা পেয়েছি তা দিয়ে করে খাচ্ছি।

২/ আপনার চোখে এই মুহূর্তে সেরা অভিনেতা অভিনেত্রী কে?
উত্তর : আমার জাহিদ হাসান ভাইকে খুব ভালো লাগে। আমরা দুজন অভিনেতাকে ‘স্ক্রিন ম্যাজিশিয়ান’ বলি। একজন হচ্ছেন শ্রদ্ধেয় এটিএম শামসুজ্জামান, আরেকজন জাহিদ হাসান। তিনি বয়সকে ছাপিয়ে এখনো ভালো কাজ করে যাচ্ছেন। যেটি দেখে খুব হিংসে হয়।

আর অভিনেত্রীদের মধ্যে অর্ষাকে (নাজিয়া হক অর্ষা) ভালো লাগে। আমি ওকে সবসময় বলি, ‘তুমি তোমাকে চিনতে পারছো না। তুমি বড় একজন অভিনেত্রী।’ অর্ষাও জয়া আহসানের মতো আন্তর্জাতিক মানের কিছু কাজ করার যোগ্যতা রাখে। কিন্তু তার উচিত নিজের প্রতি যত্নশীল হওয়া। আরও ধৈর্যশীল হওয়া কাজের ব্যাপারে।

এলএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।