কাজে ফিরেছেন তারকারা, সিনেমা এখনো প্রাণহীন

বিনোদন প্রতিবেদক
বিনোদন প্রতিবেদক বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:৫৯ পিএম, ১২ জুলাই ২০২০

অনেকের ভাষ্যমতে ২০২০ সালটি পৃথিবীর জন্য ‘অভিশপ্ত’। মহামারি, মৃত্যু, ভূমিকম্প, যুদ্ধ-মারামারি, অর্থনৈতিক মন্দায় একেবারে থমকে গিয়েছে যেন মানুষের জীবনধারা। বিশেষ করে করোনাভাইরাস তছনছ করে দিয়েছে পৃথিবীকে। কোটির উপর মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন এই ভাইরাসে। আর প্রাণ গেছে সাড়ে ৫ লাখেরও বেশি মানুষ। অমিতাভ বচ্চনের মতো তারকাও তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মজা করেছিলেন, ২০২০ সাল ডিলিট করে নতুন বছর ইন্সটল করতে চেয়ে।

তবুও করোনা কাটিয়ে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে পৃথিবী। প্রাণ খুঁজে নিচ্ছে শোবিজও। লিখেছেন অরণ্য শোয়েব-

২০২০ সালে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সারা বিশ্বের শোবিজ। এ বছরে চলে গেছেন অনেক কিংবদন্তিরা। করোনার কারণে স্থবির হয়ে আছে শুটিং। বন্ধ সিনেমা হল, নেই সিনেমা। নতুন গানের ভিডিওতেও শূন্যতা। এমন চেহারা শোবিজের কোনোদিনই দেখেনি পৃথিবীর মানুষ।

বাংলাদেশের শোবিজের অবস্থা আরও শোচনীয়। এমনিতেই ছোট ইন্ডাস্ট্রি। কোনো একটা প্রতিকূল অবস্থার তৈরি হলে তা মোকাবিলা করতে হিমশিম খেতে হয়। অনেকদিন ধরেই সিনেমায় প্রাণ নেই। দুটি ঈদকে ঘিরে যেটুকু চাঙ্গা থাকে সেটাও এবার হয়নি করোনার কারণে। বলা চলে ঢালিউড মুমূর্ষু। নাটক-গানেও লেগেছে বৈরী হাওয়া।

তবে আশার কথা হলো ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে সবকিছু। সামনে কোরবানি ঈদকে উপলক্ষ করে নাটক ও সংগীতাঙ্গন কিছুটা হলেও জমে উঠতে শুরু করেছে। এরইমধ্যে নাটক-টেলিছবির জন্য শুটিংয়ে ফিরেছেন অনেক তারকা। গানের মানুষেরাও যোগ দিয়েছেন কাজে, তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন গান।

যার মধ্যে উল্লেখ করা যায় কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবরের কথা। করোনার কারণে বেশ লম্বা সময় ধরেই পরিবারের সঙ্গে ঘরবন্দী ছিলেন তিনি। সেই বিরতি কাটিয়ে সম্প্রতি দুটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। নিজেই ফেসবুকে ছবি পোস্ট করে সেই খবর জানান দেশের তুমুল জনপ্রিয় এ গায়ক।

খবর পাওয়া গেছে ইমরান, কনাসহ আরও অনেক তারকা শিল্পীরাও গানে ফিরেছেন। অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ও সিনেমার জন্য গানে কণ্ঠ দিচ্ছেন তারা। খুব দ্রুতই হয়তো শুরু হবে স্টেজ শোগুলোও।

তবে তুলনামূলক বেশি জমজমাট নাটকপাড়া। জুনের শেষদিক থেকেই সরকার নির্দেশিত বিধি নিষেধ মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নাটকের শুটিং হয়েছে। কোরবানি ঈদকে ঘিরে শুটিং বেড়েছে। ঢাকার বিভিন্ন লোকেশনেই কড়া নিরাপত্তা নিশ্চিত করে নাটক বানাতে কোমর বেঁধে নেমেছেন নির্মাতারা। এরইমধ্যে শুটিংয়ে যোগ দিয়েছেন জাহিদ হাসান, তারিন, মোশাররফ করিম, জাকিয়া বারী মম, অপূর্ব, মেহজাবীন, তাহসান খান, আনিসুর রহমান মিলন, মীর সাব্বির, প্রভা, নাদিয়া মিম, টয়া, মিম মানতাসা, হোমায়রা হিমু, নাদিয়া, এফএস নাঈম, মনোজ প্রামাণিক, মিশু সাব্বির, নাবিলা ইসলাম, হিমি, শাহেদ শরীফ খান, তারিক আনাম খান, সাফা কবির, সাবিলা নূর, আখম হাসানসহ দেশের প্রথম সারির আরও অনেক তারকা।

তবে তাদের মধ্যে অপূর্ব ও মেহজাবীন অবশ্য খানিকটা ভোগান্তিতেও পড়েছেন। একটি নাটকের শুটিং করছিলেন তারা উত্তরায়। সেখানে তাদের ইউনিটের দুজনের শরীরে করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে। পরীক্ষার ফল হাতে আসতেই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে শুটিং। হোম কোয়ারেন্টাইনে যেতে হয়েছে এই দুই তারকাকে।

খবরটি কিছুটা আতঙ্ক তৈরি করলেও বন্ধ হয়নি নাটক-টেলিছবির শুটিং। বাড়ানো হয়েছে সচেতনতা। পাশাপাশি অনেক তারকা বিজ্ঞাপনের শুটিংয়েও অংশ নিচ্ছেন।

জানা গেছে, লকডাউন তুলে নেয়ার পর টিভি চ্যানেলগুলোও আগামী কোরবানি ঈদ সামনে রেখে নতুন নাটক নির্মাণের জন্য নির্মাতাদের উৎসাহিত করছেন। কোনো কোনো টিভি চ্যানেল নাটকের বাজেট বাড়িয়ে দিয়েছেন।এতে নির্মাতারা অভিনয়শিল্পীদের পারিশ্রমিকও বৃদ্ধি করেছেন। যার কারণে কিছুটা ঝুঁকি নিয়েও কাজ করতে আগ্রহী হচ্ছেন তারকারা।

গেল কয়েক বছর ধরে প্রতি ঈদেই সংগীতশিল্পী ও তাহসান খান অভিনীত নাটকের চাহিদা থাকে আকাশচুম্বী। চলতি বছরের শুরু থেকেই নাটকে সেভাবে দেখা যায়নি এ অভিনেতাকে। গত ঈদে তার অভিনীত তেমন কোনো নাটকও প্রচার হয়নি। করোনার কারণে দীর্ঘ সময় ঘরবন্দি ছিলেন। চলতি সপ্তাহেই ঢাকার বাইরে একটি খণ্ড নাটক দিয়ে অভিনয়ে ফিরলেন তাহসান।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গত ঈদেও নাটকে অভিনয় করিনি। এবার অভিনয় করছি কলাকুশলীদের কথা ভেবে। কারণ আমরা যদি অভিনয় করি তাহলে ওদের কর্মসংস্থান হবে। এতে সামষ্টিকভাবে সবাই উপকৃত হব। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে যদি কেউ আমাকে নিয়ে নাটক বানাতে চায়, তাহলে আমার কাজ করতে কোনো আপত্তি থাকবে না।’

ছোট পর্দার জন্য যারা এখনও কাজে ফেরেননি তারাও অল্প সময়ের মধ্যেই শুটিংয়ে ফিরবেন বলে জানা গেছে নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে। তারকা অভিনয়শিল্পীদের শুটিংয়ে ফেরার কারণে আগামী ঈদে টিভি চ্যানেলগুলোকে আর নতুন নাটকের খরায় পড়তে হচ্ছে না- এমনটাই বলেছেন সংশ্লিষ্টরা।

তবে মন খারাপের বিষয় হলো শোবিজের সবচেয়ে বড় মাধ্যম সিনেমা এখনো প্রাণহীন। এফডিসিতে নেই মানুষের আনাগোনা। কোথাও শুটিংয়ের খবরও নেই। বন্ধ রয়েছে সারা দেশের সিনেমা হল। ঈদ উপলক্ষে খোলা হবে কি না সেই প্রশ্নে সংশ্লিষ্ট আঙিনার বিভিন্ন সংগঠনের মধ্যে মতভেদ লক্ষ করা যাচ্ছে। হল খুললেও এই মুহূর্তে নতুন ছবি মুক্তি দেবেন কী না প্রযোজকেরা সেই প্রশ্নটাও উঠছে বেশ জোরালোভাবে।

এই বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রদর্শক সমিতির এক নেতা জাগো নিউজকে বলেন, ‘অনেকেই আবেগের বশে অনেক কথা বলছেন হল খুলে দেয়ার জন্য। কিন্তু ঈদে বিগ বাজেটের ভালো ছবিগুলো মুক্তি পাবে কী না সেই নিশ্চয়তা কী তারা দিতে পারবেন? যদি নতুন ছবি মুক্তি না পায় তাহলে ঈদের বাজারে যে ক্ষতির মুখে পড়বেন হল মালিকরা তার পূরণ হবে কী করে?

হল চালু করে মোটা অংকের লোকসানের চেয়ে বন্ধ রাখা ভালো। করোনার কারণে প্রথমত কারো মনেই শান্তি নেই। দ্বিতীয়ত কারো হাতে আনন্দ বিনোদনে ব্যয় করার মতো অর্থও নেই এখন। মানুষ খুব খারাপ সময় পার করছে। এমন সময়ে প্রযোজকরা নতুন সিনেমা মুক্তির ঝুঁকি নিতে চাইবেন না। তাই হল খোলা নিয়ে আরও ভাবার দরকার আছে বলে মনে করি।’

এলএ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।