আইয়ুব বাচ্চু, জেমসদের পরে আর কাউকে চিনি না আমি : রথীন্দ্রনাথ রায়

বিনোদন প্রতিবেদক
বিনোদন প্রতিবেদক বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:৫৬ পিএম, ০৪ জুলাই ২০২০

‘তুমি আরেকবার আসিয়া যাও মোরে কান্দাইয়া’, হায়রে কথায় বলে, গাছে বেল পাকিলে তাতে কাকের কী’, কিংবা ‘সবাই বলে বয়েস বাড়ে’ গানগুলো শুনলেই কানে এসে দোলা দিয়ে যায় যার কণ্ঠ তিনি রথীন্দ্রনাথ রায়। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের একজন গর্বিত কণ্ঠযোদ্ধা। অসংখ্য কালজয়ী গান তার কণ্ঠে উপহার পেয়েছেন এদেশের শ্রোতারা। তার নতুন গানের খবর ও সংগীত নিয়ে ভাবনার কথা জানিয়েছেন অরণ্য শোয়েব-

অনেক দিন ধরেই গানের সঙ্গে নিয়মিত নন রথীন্দ্রনাথ রায়। বর্তমানে স্থায়ীভাবে বাস করছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে। মাঝে মধ্যে দেশে আসেন। নীরবে নিভৃতে সময় কাটিয়ে আবার ফিরে যান।

চলতি বছরও এসেছেন। তবে এবার নিজেকে আড়ালে রাখলেন না। গান নিয়ে হাজির হচ্ছেন ভক্তদের সামনে।

হ্যাঁ, প্রায় ১০ বছর পর একটি একক গানে কণ্ঠ দিলেন লোকগানের জীবন্ত কিংবদন্তি রথীন্দ্রনাথ রায়। ‘এক পলকের নাই ভরসা’ শিরোনামে এ গানটির কথা ও সুর করেছেন রাজ কামাল। সংগীত আয়োজন করেছেন সুমন কল্যাণ। এটি প্রযোজনা ও পরিবেশনা করছে সাউন্ডটেক।

নতুন গানে কণ্ঠ দেয়া প্রসঙ্গে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘এটা লোকসংগীতের একটি গান। মার্চ মাসেও একটি গান করেছিলাম। মোট দুটো গান করলাম প্রায় আট-দশ বছর পর। আসলে দেশে থাকি না তেমন। তাই খুব একটা সময় হয় না গান করার। দেশে আসলে অনেকেই বলে। তবে গানের কথা-সুর পছন্দ হয় না বলে গাই না। এবারের গান দুটি বেশ ভালো লাগলো। তার মধ্যে ‘এক পলকের নাই ভরসা’ গানটি তৈরি হয়েছে। বাজারে আসবে। আশা করছি ভালো লাগবে শ্রোতাদের।’

রথীন্দ্রনাথ রায় জানান, গত বছর তিনি একটি সিনেমার জন্য গান করেন। যার মাধ্যমে প্রায় ১৯ বছর পর প্লেব্যাক করেছিলেন তিনি।

নতুন গান নিয়ে আলোচনার ফাঁকে বর্তমান মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমরা যেভাবে গান করেছি সেভাবে তো এখন হয় না। গানের ইন্ডাস্ট্রি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। সিনেমার গান নিয়েও কতো আয়োজন হতো। আমরা আগে ইপসাতে, শ্রুতিতে রেকডিং করতাম। কখনো এফডিসিতেও করতাম। সবাই এসব স্টুডিওতেই আসতো। একটা উৎসব উৎসব ব্যাপার ছিল। সবার সঙ্গে সম্পর্ক ভালো ছিল। কিন্তু এখন কুঠির শিল্পের মতো ঘরে ঘরে স্টুডিও চলে এসেছে। কেউ কাউকে খুব একটা মূল্যায়ন করে না। আন্তরিকতাও গড়ে উঠছে না।

আমি এটা পছন্দ করি না। আমরা যখন গান করতাম তখন গীতিকার, সুরকার, ডিরেক্টর এবং ফিল্মের ডিরেক্টর সবাই একত্র হতাম। সুন্দর সুন্দর গান সৃষ্টি হতো। এই যে যত গান করেছি সেটি কিন্তু একদিনে হয়নি। একেকটি গানের পেছনে দু-তিন মাস করে সময় যেত। গান শেষ হলে সুরকার সুর দিত আমাদের সবাইকে ডাকতো আমরা যেতাম। বিভিন্ন আলোচনা করে তারপর সিদ্ধান্তে হতো গাওয়ার।

jagonews24

রিহার্সেল চলতো অবিরাম। পারফেক্ট মনে হলে কণ্ঠ রেকর্ড হতো। এখন কি হচ্ছে? বাঁশির সুর এক সময় দিয়ে আসে, বেহালা আরেক সময় বাজছে, তারপর আমাকে ডাকছে ‘আসেন কণ্ঠ দিয়ে যান’। এটা আসলে গানের জন্য মানায় না।’

এ প্রজন্মের কোনো শিল্পীর প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই প্রজন্মের গানের কাউকে আমি চিনি না। বলতে গেলে আইয়ুব বাচ্চু, জেমস.... এদের পরে আর কাউকে চিনি না আমি।’

প্রসঙ্গত, রথীন্দ্রনাথ রায় জন্মেছেন সংগীত চর্চায় প্রসিদ্ধ এক পরিবারে। তার পিতা নন্দিত লোকসংগীত শিল্পী, গীতিকার ও সুরকার হরলাল রায়। রথীন্দ্রনাথ বাবাকে দেখে দেখেই ছোটবেলা থেকে সংগীতের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়েন। বাবার কাছেই প্রাথমিক তালিম গ্রহণ করেন। এরপর তিনি ওস্তাদ পি. সি গমেজের কাছে সংগীতে তালিম নেন।

আট বছর বয়সে তিনি বেতারে ও তের বছর বয়সে টেলিভিশনে গান পরিবেশন করেন। ১৯৬৬ সালে জীবনে প্রথম চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেনে খান আতাউর রহমানের ‘সাত ভাই চম্পা’ ছবিতে। মমতাজ আলী খানের কথা আর সুরে গানটি ছিল ‘কন্যা গো আমার ছয় মাসের সফর, বাণিজ্য করতে যাব আমি ফুলতলার শহর’। দ্বৈত এ গানটিতে রথীন্দ্রনাথ রায়ের সঙ্গে কণ্ঠ দিয়েছিলেন প্রয়াত মৌসুমী কবির।

এরপর বহু সিনেমার বহু গান তিনি গেয়েছেন, যা আজও শ্রোতাদের মনে দাগ কেটে যায়। তার মধ্যে ‘অন্ধ বধূ’ সিনেমার ‘ও যার অন্তরে বাহিরে কোনো তফাৎ নাই’ এবং ‘নাগরদোলা’ সিনেমার ‘তুমি আরেকবার আসিয়া যাও মোরে কান্দাইয়া’ গানের জন্য পেয়েছিলেন ‘বাচসাস’ পুরস্কার।

এছাড়া ‘ফকির মজনু শাহ’ চলচ্চিত্রের ‘সবাই বলে বয়েস বাড়ে’ এবং ‘নালিশ’ চলচ্চিত্রের ‘খোদার ঘরে নালিশ করতে দিল না আমারে’, ‘সখিনার যুদ্ধ’ ছবির ‘কাউয়ায় কমলা খাইতে জানে না’ গানগুলোর কথা এখনো ভুলতে পারেনি বাংলা গানের শ্রোতারা।

১৯৯৫ সালে একুশে পদক লাভ করেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের এই কিংবদন্তি শিল্পী।

এলএ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।