কুলি-রিকশাওয়ালা থেকে জনপ্রিয় অভিনেতা শামীম আহমেদ
প্রায় ১৯ বছর ধরে অভিনয় করছেন অভিনেতা শামীম আহমেদ। পেয়েছেন জনপ্রিয়তা। বিশেষ করে কমেডি চরিত্রে টিভি নাটকে শামীম নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন অনন্যতায়। তার ক্যারিয়ারে রয়েছে অনেক অজানা গল্প।
শামীম আহমেদের অভিনয়ের পথচলার ১৯৯৯ সালে ‘বন্ধন’ ধারাবাহিক দিয়ে। অভিনেত্রী আফসানা মিমির আগ্রহেই মহিলা সমিতির পিওন শামীম হয়ে উঠলেন অভিনেতা। শামীমের ভাষায়, ‘বন্ধন নাটকের প্রোডাকশন ম্যানেজার ছিলাম আমি। আমার একটা গুণ ছিল, কোন কোন আর্টিস্ট কখন ওষুধ খাবেন, কোন আর্টিস্ট কখন ডায়াবেটিসের ইনসুলিন নেবেন আর নেওয়ার কতক্ষণ পর সে খাবার খাবেন, কোন নায়ক কখন খাবেন- এ বিষয়গুলো মনে রাখতে পারতাম। কাজটা ঠিকমতো করতাম। খুব পরিচ্ছন্ন ছিলাম। সেটেও জনপ্রিয় ছিলাম। আফসানা মিমি আপার ওই নাটকে একটা চরিত্র ছিল ‘লোকমান’। লোকমান চরিত্রটা করার জন্য যে ছেলেটাকে সিলেক্ট করা হয়েছিল দুদিন শুট করার পর সে আর আসেনি। কারণ তার কী একটা পরীক্ষা চলছিল।
তখন শুটিংয়ের আগের দিন রাতে মিমি আপা, পান্থ ভাই, অম্লান বিশ্বাস, অমিতাভ ভাই, মুরাদ ভাইরা আড্ডা দিচ্ছিলেন। হঠাৎ মিমি আপা আমাকে ডেকে বললেন, শামীম তুই লোকমান ক্যারেক্টারটা পড়ছস? আমি কইছি, হ পড়ছি। তখন আপা কইলেন, তুই এই দুটা সিন পড়ে রাখ, এই দুটা তুই করবি। আমি তো ভয়েই শেষ। অনেক অনেক বড় অভিনেতা চোখের সামনে দেখেছি। উনাদের দেখে বুঝেছিলাম অভিনয় জিনিসটা এত সহজ নয়। তাই না করছিলাম। কিন্তু সবাই অনেক বলার পর, সাহস দেয়ার পর চরিত্রটা আমি করি। বাকিটুকু ইতিহাস।’
শামীম বলেন, ‘বন্ধন নাটকটা করতে গিয়ে অনেক প্রশংসা পেলাম। মাছরাঙা প্রোডাকশন হাউসের মালিক অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু স্যার আমাকে ২০ হাজার টাকা দিলেন। তুষার ভাই দিলেন আরও ৫ হাজার টাকা শুধুমাত্র একটা দৃশ্য করার জন্য। তখনই ঠিক করে ফেললাম যে আমি নিয়মিত অভিনয় করবো।'
নিজের জীবনের গল্প বলতে গিয়ে শামীম বলেন, 'অনেক অভিজ্ঞতা আছে আমার। অভাবি ঘরের মানুষ। অভাব ছিল। নানাভাবে জীবন ধারণের চেষ্টা করেছি। পকেটমার হয়েছি, কুলিগিরি করেছি। রিকশা চালিয়েছি। খোদা আমাকে সুন্দর এই পথে নিয়ে এসেছে। আমি পরিশ্রম করে খেতে পারছি। অতীতের কথা বলতে আমার কোনো লজ্জা নেই। কারণ এটা সত্য। সত্য লুকানো যায় না।
আমি দেখেছি সত্য শুনে মানুষ অবাক হলেও সেটাকে সবাই খুব সহজে গ্রহণ করে ও মেনে নেয়। সম্মান করে সত্যকে। পিন্টু স্যার একবার আমাকে ১০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন আমার সত্যবাদিতার জন্য। আমি তার কাছে অকপটে আমার অতীতের সব কথা বলেছিলাম। তিনি খুশি হয়েছিলেন আমার সততায়।’
অভিনয়ে কেউ প্রভাবিত করে কী না জানতে চাইলে শামীম আহমেদ বলেন, ‘আমি ১৯৮৬ সালের দিকে মহিলা সমিতি অফিসের পিওন ছিলাম। সেখানে ক্যান্টিনে থাকতাম। অভিনয়টা আসলে আমি শিখি হুমায়ুন ফরিদী ভাইকে দেখে দেখে। যখন অভিনেতা হলাম উনার অভিনয় আমাকে প্রভাবিত করল।’
অভিনয়ে আরেকজন ম্যাজিশিয়ান আছে আমাদের। এটিএম শামসুজ্জামান নানা। আমার খুব প্রিয়। তার মতো অভিনেতা হতে ইচ্ছা করে। আবার তার কথা ভাবলে মনটাও খারাপ হয়ে আসে। প্রায় ৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি এই লাইনে। অভিনয়, লেখা, পরিচালনা, প্রযোজনা-কত কিছু করেছেন। বিরাট বটবৃক্ষ।
শামীম আহমেদ এক হাজারেরও বেশি নাটকে কাজ করেছেন। প্রায় ২৬টা চলচ্চিত্রে দেখা গেছে তাকে। তার প্রথম সিনেমা ছিল ‘জীবন মরণের সাথী’। শাকিব খানের বন্ধু চরিত্রে কাজ করেছিলেন। এরপর একে একে শাকিবের সঙ্গে আরও অনেক ছবিতে কাজ করেছেন। সিনেমায় অনেক প্রস্তাব থাকার পরও নিয়মিত হননি তিনি।
কারণ জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘শাকিব খান অনেক বড় তারকা। তার সঙ্গে কাজ করার মজা আছে। সেটা আমি পেয়েছি। কিন্তু একটা সময় বাধ্য হয়ে তার সঙ্গে কাজ করা ছাড়তে হলো। অনেক প্রস্তাব ছিল তার ছবিতে অভিনয়ের।’
কিন্তু কি করবো। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমার মতো শিল্পীর টিকে থাকা অসম্ভব। ‘মাই নেইম ইজ সুলতান’ ছবির জন্য আমি ২৫ দিন শিডিউল দিয়েছিলাম। পরে দেখা গেল আমার শিডিউল নিল ভালো কথা আজ শাকিব অসুস্থ, কাল মাথা ব্যথা, পরশু আসতে দেরি হলো এই করতে করতে চলে যায়।
আজকাল করে শিডিউল নিয়ে ঠিকমতো কাজটা হয় না। পরিচালক ফোন দিয়ে বলেন আজ তো হচ্ছে না, কাল আসো। কোনো প্রশ্ন আর করতে পারি না। করলে বলেন, বোঝোই তো হিরো। কিছু বলা যায় না। তাকে হয়তো কিছু বলা যায় না, কিন্তু আমার যে একটা দিন নষ্ট হলো সেটার পারিশ্রমিক তো পরিচালক বা হিরোরা আমাকে দেয় না। প্রযোজকরা তো ছোট শিল্পী ভেবে পাওনা টাকাই ঠিকমতো দেন না। এসব কারণেই সিনেমার প্রতি আগ্রহ কমে গেছে।'
এলএ/জেআইএম