কোনো অভিনেত্রী ভালো করলে হিংসে তো হয়ই : দীপা খন্দকার
নব্বই দশকের নন্দিত অভিনেত্রী দীপা খন্দকার। নান্দনিক অভিনয় ও শৈল্পিক গুণে দর্শকের কাছে এখনো সমানভাবেই সমাদৃত এ তারকা। দীর্ঘদিনের ক্যারিয়ারে নাটক, বিজ্ঞাপন, টেলিছবি; প্রায় সব অঙ্গনেই নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রেখে হয়েছেন প্রশংসিত।
বর্তমানে করোনার জন্য তিনি ঘরবন্দি। সময় কাটাচ্ছেন পরিবারের সঙ্গে। নতুন করে শুটিংয়ে ফেরার প্রস্তুতি ও সাময়িক ব্যস্ততা নিয়ে আলাপ করেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। লিখেছেন অরণ্য শোয়েব-
জাগো নিউজ : দীর্ঘদিনের ঘরবন্দি সময়ের অবসরে কীভাবে কাটছে?
দীপা : ঘরের কাজ তো থাকেই টুকিটাকি। আগের চেয়ে বেশি কাজ করতে হচ্ছে। বাচ্চারা বাসায় আছে তাদের নিয়ে সময় কাটাচ্ছি। তারপরও মাঝে মধ্যে একটু বোরিং হয়ে যাই। তখন সিনেমা নাটক গান এসব শুনি। এভাবেই চলছে সবকিছু। কিছুই তো করার নেই। ঘরেই থাকতে হবে।
জাগো নিউজ : শেষ ব্যস্ততা কি ছিল?
দীপা : মার্চ মাসের ১৫ তারিখে শেষ শুটিং করেছি। বিটিভির এক ঘণ্টার একটি নাটক ছিল। তবে তারও আগে একটি বিজ্ঞাপনের শুটিংও করছিলাম। এরপর ১৬ তারিখ থেকেই বাসায় আছি।
জাগো নিউজ : আবারও শুটিং শুরু হয়েছে। আপনি কী শুটিং করবেন এই মুহূর্তে ?
দীপা : এই মুহূর্তে লম্বা সময় ধরে কাজ করা সম্ভব নয়। তবে আমি ইতিমধ্যে শুটিং করেছি। দুটো বিজ্ঞাপনের। সেগুলো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ছিল। যদিও খুব কম সময়ের মধ্যে শেষ হয়েছে। শুটিং এই মাসেই হয়েছিল।
জাগো নিউজ : অবস্থা যদি এমন থাকে তাহলে ভবিষৎ পরিকল্পনা কী?
দীপা : আসলে অবস্থা এখন যা তাতে শুটিং করতে চাচ্ছি না। কারণ সারাদিন শুটিং করা এখন সম্ভব নয়। কোথাও না কোথাও তো একটু কমফোর্ট জুনের প্রয়োজন হয়। সেটা যে এখন কোথায় কেউ জানি না। যেখানে নিরাপদ বলে কাজ করা হচ্ছে যদি সেখানে কোনো সংক্রমণ থেকে থাকে তাহলে তো সমস্যা।
আমি বিজ্ঞাপনের শুটিং করেছি কম সময়ের মধ্যে। কারণ আমার যেন খিদা না পায়, কোথাও বসতে না হয় এবং তাড়াতাড়ি শেষ করা যায় কাজটি। কাজ যদি সারাদিন হয় তাহলে সমস্যা। এই অবস্থা ছয় মাস কিংবা এক বছর চলতে থাকলে আয়ের হিসাবে নেতিবাচক ধাক্কা লাগবে।
কাজ তো করতে হবে। কিন্তু আমি আসলেই এখন জানি না যে কী হবে ভবিষ্যতে। তাই কোনো প্ল্যানও করিনি।
জাগো নিউজ : স্বাস্থ্যবিধি ও দূরুত্ব মেনে শুটিং করা আসলে কতটুকু সম্ভব?
দীপা : আমি মনে করি এটা সম্ভব নয়। লাস্ট কাজ করতে গিয়ে দেখলাম সবাই ঠিক সচেতন না। চাইলেও দেখছি ওরা দূরত্ব বজায় রাখতে পারছে না। যেমন খুব কাছ থেকে মাঝে মধ্যে ককশিট ধরে বা ক্লোজ শট নেয়। তখন দুই-একজন লোক থাকতে হচ্ছে। অনেক সময় আমি ঘেমে যাচ্ছি মেকআপম্যান এসে সেটি মুছে দিচ্ছে। তার হাতকেও তো বিশ্বাস করা যায় না। সে প্রেশারে থাকে। কতক্ষণ সতর্ক থাকতে পারবে। নাটকের শুটিং করতে গেলে দু-তিন দিন লেগে যাবে। সেক্ষেত্রে রিস্ক বাড়ে।
সবচেয়ে বড় কথা এত সাবধান হয়ে এসব কাজ হয় না। কারণ এটা টিম ওয়ার্ক।
জাগো নিউজ : একটা সময় প্রচুর নাটকে দেখা গেলেও এখন কম দেখা যায়। এর কারণ কী?
দীপা : আসলে এখন পরিবার আছে। বাসায় সময় দিতে হয়। বাচ্চাদের সঙ্গে থাকতে হয়। তাদের দিকে খেয়াল রাখতে হয়। ওদের রুটিন থাকে। আর ওদের রুটিনের সঙ্গে আমাকে টাইম মেলাতে হয়। সবকিছু মিলিয়ে দেখা যায় আমি মাসে ৭-৮ দিন কাজ করার সুযোগ পাই। আগে যেমন মাসজুড়ে কাজ করতাম এখন সেটি করছি না।
আর এতো চ্যানেল হয়েছে যে কোন চ্যানেলের জন্য কাজ করতে যাচ্ছি নিজেও জানি না। নানাবিধ কারণে আগের মতো বেশি কাজ করার আগ্রহটাও পাই না।
জাগো নিউজ : বর্তমান নাটকের গল্প-সংলাপ ও চিত্রায়নের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠছে। এসব নিয়ে আপনি কি বলবেন?
দীপা : আমার যেটা মনে হয় অনেক গুণী ক্যামেরাম্যান ও নির্মাতা আছেন এখন যারা অনেকেই ভালো কাজের সঙ্গে ইনভলব হয়েছেন। আমি নতুনের পক্ষে। অনেক সময় অনেক রকম এক্সপেরিমেন্ট দেখি, আমার ভালো লাগে। তবে নাটকে গল্পের বিকল্প নেই। এই কোয়ারেন্টাইনে বসে অনেক পুরোনো নাটক দেখছিলাম। এখনো দারুণ লাগে। আমার বাচ্চারাও পছন্দ করে। যেমন হুমায়ূন আহমেদের নাটকগুলো। 'নক্ষত্রের রাত' নাটকের পর্বগুলো দেখতে বসলে উঠতে পারি না। এসব নাটকের মূল শক্তি হলো গল্প। আমরা এখন দর্শককে আগের মতো বসিয়ে রাখতে পারছি না।
ওই সময় কিন্তু এতো উন্নত কোনো ইকুইপমেন্ট ছিল না। কিন্তু স্ট্রং গল্প ছিল। তার মানে হচ্ছে গল্পটা দর্শকদের বসিয়ে রাখে। বাকি সব সেকেন্ডারি। তো আমার কাছে মনে হয় গল্পটা স্ট্রং হওয়া উচিত।
গল্পকে প্রাধান্য দিতে পারলে সব প্রশ্নেরই অবসান হবে।
জাগো নিউজ : নতুন কোনো সিনেমার খবর আছে?
দীপা : (হাসি দিয়ে) দেশের যা অবস্থা। আর হল তো বন্ধ সব। অনিশ্চিত এক সময়। এ মুহূর্তে সিনেমাই হচ্ছে না।
জাগো নিউজ : ভক্তদের উদ্দেশ্যে যা বলতে চান-
দীপা : এ অবস্থায় অবশ্যই কাজ ছাড়া বের হবেন না। সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। নিজের ও দেশের সুরক্ষায় নিজেকে নিরাপদ রাখতে হবে।
জাগো নিউজ স্পেশাল : শেষ দুই প্রশ্নের উত্তর চাই-
১. এই প্রজন্মের অভিনেতা ও অভিনেত্রীদের মাঝে ঘাটতি কি আছে বলে মনে করেন?
উত্তর : আমার কাছ মনে হয় না খুব বেশি ঘাটতি আছে। এখন যারা কাজ করছে খুবই ভালো করছে। আমি বলবো যে আমাদের জেনারেশনে আমরা অনেক কিছু নিয়ে ভেবেছি। ঘর সংসার করতে চেয়েছি বা আমাদের ফ্যামিলি বন্ডিংয়ের জায়গা থেকে কি ভাবলো ও কি ভাবলো অনেক কিছু নিয়েই ভেবেছি আমরা।
এই জেনারেশন এতো কিছু নিয়ে ভাবে না। তাছাড়া যে কাজটাই ওরা করে ঠিকঠাকভাবে করার চেষ্টা করছে। এ প্রজন্মের শিল্পীদের অনেক পজেটিভ দিক আছে।
২. কোন অভিনেত্রীকে দেখে হিংসে হয়?
উত্তর : অভিনেত্রী দেখে হিংসে হয় না। তবে অনেক চরিত্র দেখে হিংসে হয়। যখন কোনো অভিনেত্রী স্পেশাল বা ভালো কোনো চরিত্র প্লে করে তখন একজন অভিনেত্রী হিসেবে হিংসে তো হবেই (হাসি দিয়ে)।
এমএবি/এলএ/জেআইএম