বন্ধের পথে রাজশাহী টেক্সটাইল মিল


প্রকাশিত: ০৫:০০ এএম, ২০ অক্টোবর ২০১৫

শ্রমিক সঙ্কট, উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস ও বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ অত্যাধিক হওয়ায় প্রতি মাসেই লোকসান দিয়ে চলছে রাজশাহী টেক্সটাইল মিলস। কম মজুরি প্রদান করায় দিন দিন কমে যাচ্ছে শ্রমিক সংখ্যা। অথচ পুরনো মেশিনের পরিবর্তে অত্যাধুনিক মেশিন ও নিজস্ব পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জেনারেটর বসানো হলে মিলটিকে আবারো লাভজনক করা সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

মিলস কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্য মতে, উত্তর জনপদে শিল্পায়ন ও ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালের ডিসেম্বর মাসে তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী শহীদ এএইচএম কামরুজ্জামানের প্রচেষ্টায় ‘রাজশাহী টেক্সটাইল মিলস’ প্রকল্পটি সরকারের অনুমোদন লাভ করে। পরে ১৯৭৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি মিলটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ১৯৭৯ সালের ১৩ জানুয়ারি প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান প্রথম ১২ হাজার ৫১৮টি টাকু উদ্বোধনের মাধ্যমে মিলটি চালু করেন। কিন্তু মিলের অধিকাংশ মেশিনারিজ নিম্নমানের হওয়ায় প্রথম থেকেই কাঙ্খিত মানের উৎপাদন হয়নি। ফলে স্থাপনকাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত মিলটি মুনাফা অর্জন করেছে মাত্র দুই বছর। এরপর থেকে মেশিনগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ায় লোকসান শুরু হয়।

রাজশাহী টেক্সটাইল মিলটি স্থাপনকালীন সময়ে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা সর্বোচ্চ নির্ধারিত হয় ২৫ লাখ কেজি, পর্যায়ক্রমে মেশিনের দক্ষতা হ্রাস পাওয়ায় ও অর্ধেক মেশিন অকেজো হয়ে পড়ায় চলতি বছরে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে বার্ষিক মাত্র ৪ দশমিক ৭৪ লাখ কেজি, যা চলতি বছরের শতকরা ৭০ ভাগও উৎপাদন করা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন কর্তৃপক্ষ।

বর্তমান সময়ের উচ্চ প্রযুক্তির একটি মেশিন যেখানে প্রতিমিনিটে ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার আরএমপি গতিতে চলে, সেখানে এই মিলের মেশিনের গতি মিনিটে মাত্র ৭ থেকে ৮ হাজার আরপিএম। ফলে কাঙ্খিত উৎপাদন আসে না এবং মিলের লোকসান হচ্ছে।

Rajshahi-Textile

জানা যায়, মিলটির স্থায়ী জনবল সরকার ঘোষিত স্বেচ্ছায় অবসর কর্মসূচির আওতায় ২০০৩ সালের ৩০ জুন সরকারিভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ২০০৪ সালের আগস্ট মাসে মিলটি সম্পূর্ণ অস্থায়ীভিত্তিতে দৈনিক ভিত্তিক শ্রমিক দ্বারা সার্ভিস চার্জ পদ্ধতিতে চালু করা হয়। যা ২০০৮ সালের ২৮ নভেম্বর বন্ধ হয়ে ২০০৯ সালের ১৬ জুলাই পুনরায় চালু হয়। মিলটির বর্তমান সার্ভিস চার্জ (প্রতিবেল) ৬ হাজার ৮৫০ টাকা। স্থায়ী কর্মকর্তা রয়েছেন প্রায় ৫০ জন এবং দৈনিক ভিত্তিতে শ্রমিক রয়েছেন প্রায় ২শ` জন। এই শ্রমিকদের ‘নো ওয়ার্ক নো ফি’র ভিত্তিতে জনপ্রতি দৈনিক মজুরি গড়ে ৮৫ টাকা এবং সর্বোচ্চ ১৪০ টাকা। বিটিএমসি নিয়ন্ত্রিত ১৮টি মিলের মধ্যে বর্তমানে রাজশাহীসহ চারটি মিল চালু আছে। লিকুইডেশন সেলের আওতায় রয়েছে পাঁচটি মিল।

সূত্রে আরো জানা যায়, মিলটিতে জুলাই ২০০৮ থেকে জুলাই ২০১৪ পর্যন্ত শুধুমাত্র বিদ্যুৎ বিলই রয়েছে ৮৬ দশমিক ৬৭ লক্ষ টাকা। এছাড়া সিটি কর্পোরেশন ট্যাক্স ১৭৬ দশমিক ৭৩ লক্ষ টাকা, অক্টোবর ১৯৯৬-৯৭ সালের টেলিফোন বিল শূন্য দশমিক ৬০ লক্ষ টাকা, ২০০২-০৩ সালের স্বেচ্ছাবসর গ্রহণকারী শ্রমিকদের মেডিকেল ভাতা বাবদ ১২ দশমিক ৬৬ লক্ষ টাকা, দীর্ঘ মেয়াদী ঋণ (বিভিন্ন দেশ ও এজেন্সি) ৯শ` দশমিক ৯৮ লক্ষ টাকা, ওয়ার হাউজ লাইসেন্স ফিস বাবদ ১ দশমিক ৮৭ লক্ষ টাকা। ফলে দেনার ভারে বর্তমানে মিলটি বন্ধ হতে চলেছে।

মিলের হিসাবরক্ষক আরশেদ আলী জাগো নিউজকে জানান, বর্তমানে মিলটিকে প্রতিমাসে লোকসান দিতে হচ্ছে পাঁচ লাখ ১৬ হাজার টাকা। মিলটিতে বিদ্যুৎ খরচ বাবদ প্রতিমাসে ব্যয় হয় প্রায় সাড়ে ছয় লাখ টাকা। অথচ গ্যাস সংযোগ দেয়া হলে প্রতিমাসে জ্বালানি খরচ হবে মাত্র এক লাখ ৭২ হাজার টাকার। এছাড়া বন্ধ মিলগুলো থেকে ভালো মেশিনগুলো অথবা নতুন মেশিন স্থাপন করা হলে এর উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় দ্বিগুণ হবে।

তিনি আরো বলেন, বিএমআরই বাবদ পাঁচ কোটি টাকা এবং গ্যাস সংযোগ বাবদ দুই কোটি টাকাসহ মোট সাত কোটি টাকা ব্যয় করলে রাজশাহী টেক্সটাইল মিলটিকে আবারো লাভজনক করা সম্ভব হবে। শুধু তাই নয়, বর্তমানে মাত্র ২শ` শ্রমিকের পরিবর্তে প্রায় ৫শ` শ্রমিকের কর্মসংস্থান হবে এ মিলটিতে।

মিলের উপ-মহাব্যবস্থাপক শেখ আবুয়াল হোসেন জাগো নিউজকে জানান, মিলের বর্তমান সমস্যা ও তা সমাধানে করণীয় বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে মিলটিকে আবারো লাভজনক করা সম্ভব হবে।

শাহরিয়ার অনতু/এমজেড/আরএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।