এখন কাজ নাই, টাকাও নাই : খালেদা আক্তার কল্পনা
ঢাকাই সিনেমার এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম খালেদা আক্তার কল্পনা। ৩৮ বছরের চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারে পাঁচ শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। বলা যায় প্রায় দশ বছর ধরেই অভিনয় থেকে দূরে আছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয়ী এই অভিনেত্রী। অভিনয়ের জন্য এখন ডাক পড়ে না তেমন। অফুরন্ত অবসরে নাটক লিখেন ঘরে বসে।
করোনাভাইরাসের সক্রমণের এই দিনে ঘর থেকে যখন বের হওয়ার সুযোগ নেই, তখন কীভাবে কাটছে এই নন্দিত অভিনেত্রীর দিন? কেমন আছেন খালেদা আক্তার কল্পনা? খোঁজ নিয়ে জানা গেলো, এখন ছেলের সংসারে থাকেন তিনি। ছেলের বউ সন্তান সম্ভবা। সামনে মাসে হয়তো নাতি কিংবা নাতনির মুখ দেখবেন তিনি। এক সময়ের পর্দা কাঁপানো এই অভিনেত্রী খোঁজ রাখে না কেউ। না, এ নিয়ে কারো প্রতি কোনো অভিযোগ নেই তার। এই সময়ও চারপাশের মানুষকে নিয়ে ভাবেন।
খালেদা আক্তার কল্পনা জাগো নিউজকে বলেন, ‘মানুষকে সহযোগিতা করার মত আমার আর সেই সামর্থ্য নাই। চোখের সমস্যা নিয়ে বেশ কিছুদিন ভুগেছি। ভারত গিয়ে চিকিৎসা করিয়েছি। এখন কাজ নাই, টাকাও নাই। তারপরও কিছু কিছু মানুষকে আমার পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি। সেটা আমার আত্মীয় ও পরিচিতদের মধ্যেই করেছি। আমার কষ্ট লাগছে আমি সেই ভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারিনি।’
যারা মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে, সহযোগীতা করছেন তাদের প্রতিও ভালোবাসা জানিয়েছেন এই প্রবীণ অভিনয় শিল্পী।
খালেদা আক্তার কল্পনা বলেন, ‘করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে ,আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। কত লোক বেকার, টাকা-পয়সা নাই, কাজকর্ম নাই, খাওয়া নিয়ে চিন্তা। ত্রাণ দিচ্ছেন সরকার। এছাড়াও অনেক সচ্ছল ব্যক্তিরাই এগিয়ে আসছেন, অসহায়দের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। অনেক প্রতিষ্ঠান মানুষের সহযোগিতায় এগিয়ে আসছে। এসব দেখে খুব ভালো লাগছে।
তবে যারা সহযোগিতা করছেন তারা আর কত দিনইবা করতে পারবেন! আবার যারা সহযোগিতা নিচ্ছেন, কতদিন চলবে এসব খাবার দিয়ে তাদের। আবার অনেক মানুষ আছেন তারা কারও কাছে চাইতেও পারছেন না; তাদের কি হবে! আবার অনেকে আছে তারা চাইলেও বিশ্বাস করবে না কেউ! লোকে বলবে, আপনারও সাহায্য দরকার। যারা চাইতে পারছে না তাদের জন্য আরো বেশি সমস্যা।’
চিকিৎসক, পুলিশ, সেচ্ছ্বাসেবদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে খালেদা আক্তার কল্পনা বলেন, ‘আমাদের চিকিৎসক, নার্স, পুলিশ প্রশাসন, স্বেচ্ছাসেবক,দল বা এরকম আরো যারা আছেন। যারা জীবন বাজি রেখে করোনা ভাইরাসের প্রতিরোধে এগিয়ে আসছেন। সেসব করোনাযোদ্ধাদের অনেক অনেক শ্রদ্ধা জানাই। উনাদের প্রতি অনেক ভালোবাসা রইলো। অনেক চিকিৎসকও আক্রান্ত হয়েছেন করোনায়। উনারা যেটা করছেন তার তুলনা হয় না। মানবিকতার পরিচয় দিচ্ছেন তারাই, উনাদের প্রতি অনেক ভালোবাসা।’
এখনো যারা সচেতন না হয়ে ঘোরাঘুরি করছেন বাইরে তাদের উদ্দেশ্যে খালেদা আক্তার কল্পনা বলেন, ‘যারা শিক্ষিত সচেতন তারা নিয়ম মানছেন। আবার কোয়ারেন্টাইন মানছে না তাদের সংখ্যাও কম নয়। তারা তো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে। এত বলেও তো কাজ হচ্ছে না। যারা এলোমেলো ঘোরাঘুরি করছে, তারা যদি কথা শুনতো তাহলে ওদের জন্য ভালো হতো, আমাদের জন্যও ভাল হত। খুব তাড়াতাড়ি আমরা করোনাভাইরাসের এই ভয়াবহতা থেকে মুক্তি পেতে পারতাম।’
১৯৮৪ সালে ‘নতুন মুখের সন্ধানে’ কার্যক্রমের মাধ্যমে চলচ্চিত্রের সাথে সম্পৃক্ত হন কল্পনা। মিজানুর রহমানের ‘হনুমানের পাতাল বিজয়’ চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় করলেও তার অভিনীত প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র হচ্ছে মতিন রহমানের ‘রাধাকৃষ্ণ’। নায়করাজ রাজ্জাক পরিচালিত ‘জিনের বাদশা’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।
এমএবি/এমএস