বোতাম তৈরি করে অভাব মোচন


প্রকাশিত: ০৬:১৭ এএম, ১৪ অক্টোবর ২০১৫

মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার প্রত্যন্ত উলাইল গ্রামে নারিকেলের খোল (মালাই অথবা আঁচাও বলা হয়) দিয়ে তৈরি হচ্ছে পোশাকের বোতাম। এ কাজ করে সংসারে স্বচ্ছলতা এনেছেন এক সময়ের দরিদ্র চাষি মজিবর রহমান। নিজের পাশাপাশি তার কারখানায় কর্মসংস্থান হয়েছে আরো ১৫টি পরিবারের।  

মানিকগঞ্জ জেলা সদর থেকে ঘিওর উপজেলার পয়লা ইউনিয়নের উলাইল গ্রামের দূরত্ব প্রায় তিনশ কিলোমিটার। অর্ধেক কাঁচা-পাকা রাস্তার বেশির ভাগই ভাঙা-চোরা। প্রত্যন্ত এ গ্রামেই বোতাম কারখানা গড়ে তুলেছেন মজিবর রহমান।

Mozibor-Rahman

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কারখানার বাইরে নারিকেলের খোলের স্তুপ। কয়েকজন নারী নারিকেল খোলের ময়লা পরিষ্কার করছেন। বোতাম বাছাই করতেও দেখা গেল কয়েকজনকে। টিনশেড কারখানার ভেতরে চারটি মেশিনে কাজ করছেন মজিবরের ছেলে, মেয়ের জামাইসহ দুই নারী।

কারখানার ভেতরেই কথা হয় উদ্যোক্তা মজিবর রহমানের সঙ্গে। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, খুবই অভাবের সংসার ছিলো তার। অন্যের জমিতে কাজ করে সংসার চলত। পোশাক কারখানায়ও কাজ করেছেন কিছু দিন। একমাত্র ছেলে ঢাকার একটি বোতাম কারখানায় চাকরি নেয়। একদিন সেখানে গিয়ে নারিকেলের খোল দিয়ে বোতাম বানানোর দৃশ্য দেখেন তিনি। সেখান থেকে মজিবরের স্বপ্ন জাগে নিজেই বোতাম তৈরি করবেন। স্থানীয়ভাবে একটি এনালগ মেশিন তৈরি করে মাত্র ৮ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে ২০০৭ সালে বোতাম তৈরির কাজ শুরু করেন মজিবর রহমান।

Mozibor-Rahman

মজিবর রহমান জানান,পুঁজির অভাবে বার বার হোঁচট খেলেও হাল ছাড়েননি তিনি। স্থানীয় এনজিও এবং ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ধীরে ধীরে উৎপাদন বাড়িয়েছেন। এখন স্বচ্ছলতা এসেছে তার পরিবারে। ছেলে, মেয়ে, মেয়ের জামাই এখন তার কারখানায় সহযোগিতা করছেন।

মজিবরের ছেলে জাকির হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, বাবা বোতাম কারখানা দেয়ার কথা বললে শুরুতে আমরা কেউ রাজি হইনি। কিন্তু তার ইচ্ছা শক্তি ও পরিশ্রমে আজ তিনি সফল। আমরা পরিবারের সবাই এখন এই বোতাম তৈরির কাজ করি।

তিনি জানান, নারকেলের খোলগুলো খুলনা-বাগেরহাট এলাকার তৈল তৈরির কারখানা থেকে সংগ্রহ করা হয়। একটি খোলে ১০-১২ টি বোতাম হয়। হাজার প্রতি বোতাম বিক্রি হয় তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত। চাহিদা অনুযায়ী যে কোনো আকার-আকৃতির বোতাম তৈরি করা হয় মজিবরের কারখনায়।

Mozibor-Rahman

বোতাম তৈরির প্রক্রিয়ার বিষয়ে কারখানার শ্রমিকরা জানান, প্রথমে নারিকেলের খোল ধুঁয়ে কিম্বা কাঁচি দিয়ে চেঁচে পরিষ্কার করা হয়। এরপর ঢিল মেশিনের মাধ্যমে পরিষ্কার করা আঁচ কেটে বোতামের আকৃতি করা হয়। শ্রমিকদের ভাষায় যাকে বলা হয় ট্যাবলেট। এর পর সেই ট্যাবলেট টানিং মেশিনের মাধ্যমে পরিপূর্ণ বোতামে পরিণত হয়। পরে পলিস যন্ত্রের মাধ্যমে বোতামগুলো ব্যবহারের উপযোগী করা হয়। মজিবরের কারখানায় তৈরি বোতাম ঢাকার বিভিন্ন দোকানে বিক্রি হয়। সেখান থেকে বিভিন্ন পোশাক কারখানায় চলে যায়।

মজিবর রহমানের ইচ্ছে কারখানার পরিধি আরো বাড়ানোর। এজন্য সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন,কারখানার পরিধি বাড়লে তিনি নিজে যেমন লাভবান হবেন তেমনি প্রত্যন্ত গ্রামটিতে আরো অনেকের কর্মসংস্থান হবে।

এসএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।