দেশে ফিরেই কোয়ারেন্টাইনে আছেন মেহের আফরোজ শাওন
ব্যক্তিগত কাজে সম্প্রতি নিউইয়র্ক গিয়েছিলেন অভিনেত্রী ও পরিচালক মেহের আফরোজ শাওন। কাজ শেষে ১৬ মার্চ দেশে ফিরেছেন তিনি। দেশে এসেই করোনাভাইরাসের ঝুঁকি এড়াতে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। ১৭ মার্চ নিজের ফেসবুকের দেয়ালে এক পোস্টের মাধ্যমে নিজেই এ কথা জানান শাওন।
তিনি লেখেন, ‘বেশ আগে প্রতিশ্রুতি দেয়া একটি বইমেলায় অংশ নিতে আমেরিকায় গিয়েছিলাম। ওয়াশিংটনে প্রকোপ থাকলেও নিউইয়র্কে করোনাভাইরাসের প্রকাশ পাইনি তখনও। ভাইরাসটির সংক্রমণ বাড়ার পরপরই আমেরিকার বিভিন্ন স্টেটে সতর্কবার্তা জারি হয়। তারপর ঘর থেকে বের হইনি একদম। এ বছর মে মাসের ৩০, ৩১ তারিখে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিতব্য হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্মেলন ২০২০ এর সংবাদ সম্মেলন বাতিল এবং মূল অনুষ্ঠানের তারিখ স্থগিত করা হয় তৎক্ষণাৎ। প্রতি মুহূর্তের খবর দেখছিলাম আর ভাবছিলাম বাচ্চা দুটোর কাছে ফিরতে পারবো তো?
পরম করুণাময়ের অশেষ কৃপায় গতকাল দেশে ফিরেছি। ঢাকা বিমানবন্দরের স্বাস্থ্যবিষয়ক সতর্ক অবস্থান দেখে ভালো লাগলেও দুবাই থেকে ফেরার ফ্লাইটে মধ্যপ্রাচ্যের যাত্রীদের গণহারে প্যারাসিটামল কিংবা প্যানাডল খেয়ে ‘জ্বর যেন না ওঠে তাইলে মেশিনে আটকায়ে দিবে’ ধরনের আচরণ খুব আশঙ্কাজনক লেগেছে!
‘কোয়ারেন্টাইন’ শব্দটার প্রতি এক অজানা ভীতিতে সবাই। ‘মাত্র ১৪টা দিন নিয়ম মেনে আলাদা থাকলে পরিবারের অন্য সদস্যরা করোনাভাইরাসের সংক্রমনের ঝুঁকিমুক্ত থাকবে’- এই কথা চার-পাঁচজনকে বোঝাবার চেষ্টা করে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছি আমি। তবে নিজের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছিলাম নিউইয়র্ক থেকে রওনা হওয়ার একদিন আগেই। আব্বু আম্মুর সাথে কথা বলে রেখেছিলাম, তারা দুজন সায় দিয়েছেন। নিনিত এবং নিষাদ দু’জনকেই বুঝিয়ে বলেছেন। পুত্রদ্বয়ও বিষয়টা সুন্দরভাবেই গ্রহণ করেছে।’
নিজ বাসায়ই তিনি সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন জানিয়ে লেখেন, ‘আমি গতকাল থেকে আমার ধানমন্ডির বাসায় সবার থেকে আলাদা (হোম কোয়ারেন্টাইন শব্দটিতে আমারও ভয় লাগে!) আছি। আমার মা’র বাড়িতে থাকা পুত্রদের সাথে ঘণ্টায় ঘণ্টায় ভিডিও কলে কথা হচ্ছে। বাসায় ফেরার পর গতকাল রাতে প্রতিবেশী স্বর্ণা ভাবী জড়িয়ে ধরে শুভেচ্ছা জানাতে চাইলে তাকে বারণ করেছি। তিনি বুঝতে পেরেছেন এবং ৩/৪ হাত দূরে দাঁড়িয়ে খাবার দিয়ে গেছেন। দক্ষিণ হাওয়া’য় আমার বাসার দরজা প্রথমবারের জন্য তালাবন্ধ রাখা হয়েছে!
আমি ভালো আছি। জ্বর, কাশি, গা ব্যথা কিছুই নেই। আপাতত আগামী সাড়ে ১৩ দিন (আধাদিন পার হয়ে গেছে) কি কি করবো তার তালিকা করছি।
১/ বিশ্রাম, ২/ বিশ্রাম, ৩/ বিশ্বের করোনা পরিস্থিতির খবর দেখা, ৪/ বিশ্রাম, ৫/ বাংলাদেশের খবর দেখা, ৬/ আবারও বিশ্রাম, ৭/ নেটফ্লিক্স, ৮/ নেটফ্লিক্স, ৯/ নেটফ্লিক্স, ১০/ বিশ্রাম, ১১/ ফেসবুক স্ক্রল করা, ১২/ ভিডিও কলে আড্ডা, ১৩/ কিঞ্চিৎ লেখালেখির চেষ্টা।’
স্ট্যাটাসের শেষদিকে নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের সহধর্মীনি সবার উদ্দেশ্যে যোগ করেন, ‘চাইলে আপনারাও কিছু যোগ করতে পারেন তালিকায়। সবাই ভালো থাকবার চেষ্টা করবেন। অন্যদের ব্যাপারেও সচেতন থাকবেন।’
এলএ/জেআইএম