নাটকের বাজেট বাড়লেই মান বাড়বে
রাজধানীর ট্রাফিক সিগন্যালগুলোতে যারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে বসে থাকেন তাদের চোখ আটকে থাকে রাস্তার পাশের বড় বড় বিলবোর্ডগুলোতে। যেখান বিভিন্ন পণ্যের মডেল হিসেবে তার মুখটি দেখা যায়। বলছি তানজিন তিশার কথা। মিষ্টি হাসির এই লাস্যময়ী একাধারে টেলিভিশন বিজ্ঞাপন, মডেলিং, অভিনয় করে ইতিমধ্যেই বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। নিজের ক্যারিয়ার, অভিজ্ঞতা ও সাম্প্রতিক নানা বিষয় নিয়ে তানজিম তিশা কথা বলেছেন জাগো নিউজের সাথে-
জাগো নিউজ : ঈদে আপনার অভিনীত নাটকগুলোতে কেমন সাড়া পেলেন?
তিশা : ভালো বললে কম হয়ে যাবে, খুব ভালো সাড়া পেয়েছি। সকলের প্রসংশা পেয়েছি। নিজের মধ্যে বেশ ভালো লাগা কাজ করেছে এবং কাজের প্রতি উৎসাহটা আরো দ্বিগুন হয়েছে।
জাগো নিউজ : অভিনেত্রী হওয়ার ইচ্ছে হলো কেন?
তিশা : চার বোনের মধ্যে আমি সবার ছোট। সেজন্য খুব আদুরে ছিলাম আমি। সত্যি কথা বলতে কি আমার বাবা চেয়েছিলেন আমি পেশা হিসেবে চিকিৎসক হই এবং মায়ের ইচ্ছে ছিলো আমি বিচারক হই। কিন্তু আমি চাইতাম ব্যতিক্রম কিছু করার। সে ভাবনা থেকে মডেলিং-অভিনয় ভালো লাগত। হঠাৎ করে ২০১২ সালে প্রথম বিলবোর্ডে একটি মুঠোফোন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের মডেল হওয়ার সুযোগ পেয়ে সব কিছু বদলে গেল। এখান থেকেই মূলত শুরু। মডেল হিসেবে জনপ্রিয়তার শুরু অমিতাভ রেজার সাথে কাজ করে।
জাগো নিউজ : আপনার প্রথম নাটকে অভিনয়ের কথা বলুন.....
তিশা : ২০১৪ সালে রেদওয়ান রনির দুই পর্বের নাটক ইউটার্ন দিয়ে নাটকে যাত্রা শুরু। এটি প্রচারিত হয়েছিল গেল বছরের রোজার ঈদে। এরপর সুযোগ পাই হিমেল আশরাফের ‘অন্তর্জাল’ আর বি ইউ শুভর ‘সোনালী রোদ্দুর’ নাটকে। এ দুটি নাটক প্রচারিত হয় কোরবানির ঈদে। এরপর থেকে ধীরে ধীরে নাটকে ব্যস্ততা বেড়েছে।
জাগো নিউজ: কে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে? মডেলিং নাকি অভিনয়?
তিশা : আমার কাছে দুটো কাজই উপভোগেরে। আমি এখনো শিখছি। বেশি বেশি কাজ করে নিজের অভিজ্ঞতাটা বাড়িয়ে নিতে চাই। একজন সত্যিকারের অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে চাই।
জাগো নিউজ : মিউজিক ভিডিওর কী খবর?
তিশা : মিউজিক ভিডিওতে কাজ করি অনেকটা শখের বশে। ইমরানের সাথে ‘বলতে বলতে চলতে চলতে’ গানটির মিউজিক ভিডিও করার পর এতো বেশি রেসপন্স পেয়েছি যেটা ছিলো অকল্পনীয়। দর্শক-ভক্তদের ভালোবাসার জন্যই মিউজিক ভিডিওতে কাজ করতে চাই। তবে সেগুলো হতে হবে ভালো নির্মাণ ও শ্রোতাপ্রিয় গানের।
জাগো নিউজ : একজন নবীন হিসেবে আপনার চোখে নাটক নির্মাণের প্রতিবন্ধকতা কি কি?
তিশা : অনেক সঙ্কট আছে আমাদের, আছে প্রতিবন্ধকতাও। প্রথমে বলবো নাটকের মান। আজকাল নাটকের গুল্পগুলো এমন যে দর্শকদের টানেই না। জোর করে মানুষ হাসানো হচ্ছে। তবে এরই মাঝে ভালো কাজও কিন্তু করছেন অনেকেই। গল্প আর পরিচ্ছন্ন নির্মাণের অভাবের পর আমি মনে করি নাটক নির্মাণের বড় বাঁধা বাজেট। ভালো কাজ করতে হলে চাই সে অনুযায়ী অর্থ সংস্থান। অনেক নির্মাতা আছেন যারা বলেন, ‘ভালোটা দাও, নিজের সেরাটা দাও’। কিন্তু পারিশ্রমিকের বেলায় তারা ভালোটা দিতে চান না। আসলে পারেন না। কারণ, বাজেট থাকে খুব কম। তাই আমরা নতুনরা কম পারিশ্রমিকে ভালোটা দেয়ার চেষ্টা করলেও সিনিয়ররা অনেক সময়ই তাড়াহুরো করে কাজ শেষ করেন। এর যুক্তিও আছে। শ্রমের মূল্য যথাযথ না পেলে কেন একজন নিজেকে খাটিয়ে মারবেন। আমার মনে হয়, নাটকের মান বাড়াতে, ভালো গল্প ও নির্মাণ উপহার দিতে বাজেট বাড়ানো জরুরি। এতে করে নির্মাতা কলাকুশলী এবং শিল্পীরা সবাই স্বাচ্ছন্দে কাজ করতে পারবেন। তারপর বুঝতে হবে দর্শকের চাহিদা।
জাগো নিউজ : চলচ্চিত্র নিয়ে কোনো পরিকল্পনা নেই?
তিশা : কেন থাকবে না। হা হা হা.... সবাই চায় শোবিজের সবচেয়ে বড় মাধ্যমটিতে কাজ করতে। আমিও চাই। এখানে নিজেকে উপস্থাপন করতে হলে অভিনয়ের বাইরেও অনেক কিছুই জানতে হয়। যেমন নাচ, ফাইটিং, গানের সাথে ঠোঁট মেলানো ইত্যাদি। সেসব মাথায় রেখেই নিজেকে তৈরি করছি। হয়তো খুব শিগগির চলচ্চিত্রে কাজ করা হয়ে যাবে। কারণ, প্রচুর প্রস্তাব পাচ্ছি। তারমধ্যে একটি গল্প নিয়ে অনেকবার কথা হয়েছে। গল্প খুবই ভালো লেগেছে। পরিচালকও ভালো। তবে চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত এখনো কিছু বলা যাচ্ছে না।
জাগো নিউজ : সাম্প্রতিক ব্যস্ততা কি নিয়ে?
তিশা : জসীম মুনের পরিচালনায় ‘ওয়ান টু সিক্স’ নামের একটি এক ঘন্টার নাটকে কাজ করেছি। এখানে আমার বিপরীতে অভিনয় করছেন এফ এস নাঈম ভাইয়া। মূলত রং নাম্বারে কথা বলা এবং দুই প্রেমিক-প্রেমিকার খুনসুটি নিয়েই নাটকটি সাজানো হয়েছে। অনেক মজার একটি কাহিনীকে কেন্দ্র করে নির্মিত হচ্ছে নাটকটি। এছাড়া আরো কিছু নাটক প্রচারের অপেক্ষায় আছে। সবমিলিয়ে বেশ সরবতায় কেটে যাচ্ছে দিনগুলো।
এলএ