এক শটেই শাওন খুশি!


প্রকাশিত: ০১:৫১ পিএম, ০৮ অক্টোবর ২০১৫
ছবি : শিথিল রহমান

আগের রাতে কথা হয়েছিল শুটিং শুরু হবে বেলা ১২টায়। পরদিন যথা সময়ে পৌঁছে দেখি ঠিক তাই! সবকিছু ঠিকঠাক। এখন শুধু ম্যাডামের আসার অপেক্ষা। বলতে বলতে চলে এলেন মেহের আফরোজ শাওন। ঘড়ির কাঁটা তখন ১২টা ১২ মিনিট।

তড়িঘড়ি করে এসেই নির্মাতা শাওন তার বিশেষ সহকারী জুয়েল রানাকে জিজ্ঞেস করলেন- সবাই এসেছে তো? ক্যামেরা-লাইট সব ওকে? জুয়েল বললেন- জ্বী ম্যাডাম। তাহলে আর দেরি করে লাভ নেই। আর্টিস্ট ডাকো। শটটা নিয়ে নেই।

Shaon

গত বুধবার উত্তরায় এভাবেই দিন শুরু হয় নন্দিত নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের ‘কৃষ্ণপক্ষ’র উপন্যাস অবলম্বনে নির্মানাধীন চলচ্চিত্রের শুটিং সেটে।

ওদিকে অরুকে নিজের মাঝে বশ করে দোতলা থেকে একপা-দুপা করে নেমে এলেন মাহি। তার সঙ্গে আসলেন অরুর বাবা বেশে কায়েস চৌধুরী। সংলাপ বুঝিয়ে দেওয়ার পর শাওন গিয়ে বসলেন মনিটরের সামনে।

Mahi

হ্যান্ডমাইক হাতে পাশের রুমে মনিটরের দিকে তাকিয়ে বুঁদ হয়ে আছেন শাওন। মাহি দৃশ্যের প্রয়োজনে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। রাশভারী কায়েস চৌধুরীও নিজেকে দৃশ্যের প্রযোজনে সোফায় গা এলিয়ে শুয়ে পড়লেন। তার সামনে টেবিলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বাংলার ইতিহাস, পৃথিবীর ইতিহাস, ভেষজ উদ্ভিদ ও লোকজ ব্যবহার, কয়েকটি পত্রিকা ও ম্যাগাজিনের বই।

অন্যদিকে তাঁতের মিষ্টি রঙের শাড়িতে মাহি এখন ‘অরু’। একান্তে বিড়বিড় করে আওড়াচ্ছেন সংলাপগুলো। চারদিকে সুনসান নীরবতা। প্রস্তুত মাহি, মনিটরে ওপাশে প্রস্তুত শাওনও। দরজার ওপাশ থেকে জগতের সব চিন্তা মাথায় নিয়ে কালো ব্যাগ হাতে গুটিগুটি পায়ে রুমে ঢুকলেন মাহি। ওদিকে বাবা মনোযোগ দিয়ে সবুজ কভারে মোড়ানো বই পড়ছেন। পাশে এসে ঢোক গিলতে গিলতে মাহি সংলাপ ছুঁড়ে দিলেন- কেমন আছো বাবা? খারাপ থাকার তো কিছু নেই! আবার ভালো থাকার মতোও কিছু ঘটেনি। মাহি ফ্যালফ্যাল করে তাকয়ে রইলেন তার বাবার জবাব শুনে। ক্ষণিকের মধ্যেই কায়েস চৌধুরী ধমকের সুরে বললেন- আজকের খবরের কাজ পড়েছিস? চমকে উঠলেন মাহি। না, কি আছে কাগজে? কি আছে সেটা জানার জন্যই তো বলছি পড়েছিস কিনা। এই নে পত্রিকা। যা মনযোগ দিয়ে পড়ে দেখ। মাহি হাতটা বাড়িয়ে দিলেন। খবরের কাগজটা হাতে নিলেন। এরপর বাবার দিকে একনজর তাকিয়ে আবার রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। পাশ থেকে শাওন বললেন- ওকে কাট। চলবে। একবারেই শট ওকে। ওদিকে ক্যামেরার সাথে আটুলের মতো লেগে থাকা ব্যক্তির দিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে শাওন বললেন- জোশ হয়েছে জামান। সেট অন্যত্র রেডি করো। মাহির একটা ক্লোজ শট নিলে মন্দ হয় না।

Mahi

ইউনিটের সবাই আবারো তোড়জোড় শুরু করলো। ক্যামেরা-লাইট অন্যত্র নেওয়ার জন্য।

এই ফাঁকে কথা সেরে নেই নির্মাতা শাওনের সাথে। তিনি জানালেন, ‘উপন্যাস কৃষ্ণপক্ষকে সঠিকভাবে সকলের সামনে তুলে ধরাই আমার চ্যালেঞ্জ। এজন্য নিখুঁতভাবে সকলের কাজটা আদায় করে নিচ্ছি। তবে হাতে সময়ও সংক্ষেপ। ১৩ নভেম্বর মুক্তি দেবো বলে ঠিক করেছি। সময়জ্ঞান মাথায় রেখেই এগুতে হচ্ছে। মাহির ভিতর থেকে অরুকে আবিস্কার করার চেষ্টা করছি। সে খুব ভালো কাজ করছে। হয়তো হুমায়ূনের মতো করে পারব না, তবে আমি তার ভক্তদের মন জয় করার সর্বোচ্চ চেষ্টাই করবো।’

মাহির সাথে আলাপটা বেশ জমেই উঠলো। তিনি বললেন, ‘আমি হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্যের একনিষ্ঠ পাঠক। উনার সব গল্প-উপন্যাসই আমার প্রিয়। কৃষ্ণপক্ষও কয়েকবার পড়েছি। আমি যখন উপন্যাসটি পরেছিলাম সত্যি কথা বলতে পড়তে পড়তে অনেক ইমোশনাল হয়ে পড়েছিলাম। আমাকে যদি কেউ বলে তোমার পছন্দের ভালোবাসার উপন্যাস কোনটা বা কোনগুলো, তার জবাবে যে ছোট্ট তালিকাটা আমার মুখ থেকে বেরিয়ে আসবে তারমধ্যে ‘কৃষ্ণপক্ষ’ অবশ্যই থাকবে।’

মাহি আরো বলেন, ‘অসাধারণ। একটি হৃদয় ছোঁয়া গল্প। জীবনের খুব চেনা ও পরিচিত গল্পকে হুমায়ুন স্যার বরাবরই ভিন্ন আঙ্গিকে আন্তরিকতার সাথে সাহিত্যের পাতায় তুলে আনতে পারতেন। কৃষ্ণপক্ষও তেমনি এক গল্প দিয়ে সাজানো। এখানে অরু চরিত্রে কাজ করতে বেশ লাগছে। শাওন আপা খুব মিশুক মানুষ। অন্যরাও খুব সাহায্য করছেন। রিয়াজ ভাইয়ের সাথে প্রথমবার কাজের অভিজ্ঞতা হলো। দারুণ লাগছে। আশা করছি চমৎকার একটি ছবি উপহার দিতে পারবো আমরা।’

Mahi

এরপর আবারো শটের জন্য ডাক পড়লো মাহির। মাহি বিদায় নিলেন। যাবার আগে দিয়ে গেলেন ‘সেলফি টাইম’। বিদায় নিতে শাওনের দ্বারস্থ হতেই মিষ্টি হেসে বললেন আবার দেখা হবে। প্রত্যুত্তরে আমিও হেসে বলে এলাম- ‘দেখা তো হবেই আপা, নির্মাতা শাওন আপার সাথে বারবারই দেখা করতে চাই।’

পরিচালনার পাশাপাশি ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ‘কৃষ্ণপক্ষ’ যৌথভাবে প্রযোজনাও করছেন শাওন। ছবিটিতে অরুর চরিত্র রূপদান করছেন মাহি এবং তার বিপরীতে মুহিব চরিত্রে অভিনয় করছেন রিয়াজ। অন্য অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে আছেন ফেরদৌস, তানিয়া আহমেদ, মৌটুসী বিশ্বাস, আজাদ আবুল কালাম, কায়েস আহমেদ, ফারুক আহমেদ প্রমুখ।

জানা গেছে, উত্তরার কাজ শেষে ছবিটির শুটিং হবে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে। এর দৃশ্যধারণের কাজ শেষ হবে ধানমন্ডিতে অবস্থিত হুমায়ূন আহমেদের দখিন হাওয়ায়।

এলএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।