কেমন আছেন সালমান শাহের নায়িকা সন্ধ্যা?
ঢালিউডে তিনি যাত্রা করেছিলেন ‘প্রিয় তুমি’ সিনেমা দিয়ে। সেটা ১৯৯৫ সালের কথা। কলেজে পড়ার সময় শখের বসে মডেলিং করতেন। পরিচালক হাফিজ উদ্দিন তার চাচা। তার মাধ্যমেই ‘প্রিয় তুমি’ সিনেমায় কাজ করার প্রস্তাব পান। ওমর সানি, মৌসুমী, হেলাল খান অভিনীত সিনেমায় হেলাল খানের বিপরীতে অভিনয় করে নবাগতা হিসেবে হাজির হন চিত্রনায়িকা সন্ধ্যা।
প্রথম ছবিতে ভালো সাড়া পাওয়ায় নিয়মিতই কাজ করতে থাকেন। এরপর প্রিয় যুদ্ধ, স্বপ্নের রাজা, আমার অন্তরে তুমি, ভালোবাসি তোমাকে, প্রেমের বাজিসহ অল্প ক্যারিয়ারে কাজ করেছেন ১৮টি সিনেমায়। নায়ক হিসেবে পেয়েছিলেন হেলাল খান, রুবেল, মাহফুজ আহমেদ, সালমান শাহসহ আরও অনেককেই।
এরপর ২০০০ সালে শোবিজ থেকে আড়াল হয়ে যান এই নায়িকা।
অশ্লীলতা ইন্ডাস্ট্রিতে গ্রাস করতে শুরু করছে দেখে নিজেকে গুটিয়ে নেন। পরের বছর বিয়ে করে আমেরিকায় চলে যান। সেখানে পনের বছর বসবাস করার পর আবার ২০১৬ সালের দিকে দেশে ফিরে আসেন সন্ধ্যা। দেশে এলেও শোবিজের কোথাও দেখা যায়নি তাকে। নিজের পরিচয়কে আড়াল করেই রেখেছিলেন অনেকটা।
সম্প্রতি তার খোঁজ পাওয়া গেল। বর্তমানে তিনি নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন পরিবার ও ব্যবসায় নিয়ে। একটি ফ্যাশন হাউজ খুলেছেন অনেক বছর আগে। এখন সেটারই দেখাশোনা করছেন। বাস করছেন রাজধানীর ইস্কাটনে।
তার সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘এখন চারদিকে শুধু সিনেমা নেই, হল নেই রব। আগের মতো সিনেমার কিছুই নেই আসলে। চাকচিক্য আর মিডিয়াবাজি বেড়েছে। প্রযোজকরা যে টাকা লগ্নি করছেন তা উঠে আসছে না। অথচ নব্বই দশকটা ছিল সিনেমার জন্য বেশ রমরমা। তখন অনেক বেশি পরিমাণ সিনেমা হতো আর ব্যবসাও করতো।’
কেন সরে গেলেন সিনেমা থেকে, জবাবে এই নায়িকা বলেন, ‘অশ্লীলতা তখন মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছিল, বড় বড় সব পরিচালক, প্রযোজক ও নায়ক-নায়িকরাও অশ্লীলতায় ডুবে গেল চোখের সামনে দেখলাম। বুঝতে পেরেছিলাম সময় খুব খারাপ। তখন নিজ থেকেই সরে যাই। আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না ওই স্রোতে গা ভাসানো। যারা অন্য স্রোতে কিছুটা চেষ্টা করছিলেন ভালো সিনেমা করার তার সংখ্যা ছিল খুবই কম। হতাশ ছিলাম আসলে।’
তিনি যোগ করেন, ‘অনেক নায়িকাকেই দেখেছি ইন্ডাস্ট্রিতে এসে রাতারাতি বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়ে গেছে। কিন্তু আমার সেরকম ইচ্ছা ছিল না। কারণ ইন্ডাস্ট্রিতে আসার আগে থেকেই আমার বাড়ি ও গাড়ি ছিল। আমার বাবার পাঁচতলা বাড়ি ও তিনটা গাড়ি ছিল। তাই শিল্পের নামে ওইসব নোংরামি করে রাতারাতি কিছু হয়ে যাওয়ার ইচ্ছা আমার মধ্যে কখনওই ছিল না। যখন অন্য নায়িকারা রাতারাতি গাড়ি-বাড়ি করার পেছনে ছুটতো তখন আমি এফডিসিতে শুটিং করতে যেতাম গাড়ি নিয়ে। অনেক স্বপ্ন নিয়ে সিনেমায় এসেছিলাম। কিন্তু সেই স্বপ্নটা ভাঙতে বেশি সময় লাগেনি।’
কিছু নোংরা লোক ছিল ইন্ডাস্ট্রিতে যারা শুধু বাজে প্রস্তাব দিত। এসব মনমানসিকতা নিয়ে কাজ করতে পারিনি আমি। এই গিভ অ্যান্ড টেক পলিসিতে কাজ করার মেয়ে আমি নই। খুবই স্পষ্টবাদী। ভালো কাজ করতে চাইতাম পরিচ্ছন্নভাবে, ভালো থাকতে পছন্দ করতাম। পরিচালক শহীদুল ইসলাম খোকন, আসিফ উদ্দিন, কমল সরকার, শওকত জামিল, মোস্তাফিজুর রহমান বাবু এদের সঙ্গে আমি কাজ করেছি। এরা সবাই তখন অনেক বড় পরিচালক। হেলাল খান, রুবেল, সালমান শাহ- এদের সঙ্গে আমি কাজ করেছি। যে কয়েকটা কাজ করেছি, ভালো কাজ করার চেষ্টা করেছি। আমার মধ্যে তৃপ্তি আছে।’
বদরুন্নেসা কলেজে পড়াকালীন সময়ে শখের বশে মডেলিং করতেন সন্ধ্যা। সেখান থেকেই সিনেমায় নাম লেখান। প্রায় ১৮টির মতো সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি খুবই অল্প সময়ে। তার মধ্যে সালমান শাহের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতাকে সেরা বলে মানেন। সন্ধ্যা বলেন, ‘ক্যারিয়ারে স্মরণীয় বা আনন্দঘন মূহুর্ত অনেক আছে। তবে আমার কাছে সবচেয়ে সেরা হলো সালমান শাহের সঙ্গে কাজ করা। কারণ সালমান ছিল আমারও স্বপ্নের পুরুষ। তার সাথে কাজ করতে পেরেছি দুটা সিনেমায়। এটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। সবচেয়ে বড় আফসোসটা হলো সালমানের সঙ্গে একটি সিনেমাও আমার মুক্তি পায়নি।’
‘প্রেমের বাজি’ নামের যে ছবিটি করেছিলাম সেটির শুটিং হয়েছিল বেশ অনেকটাই। গানও করেছিলাম একটি। কিন্তু সালমানের অকাল প্রয়াণে ছবিটি আর হয়নি। তবে ছবির একটা গান ‘ওদের ধর’ নামের সিনেমায় যোগ করে দেয়া হয়েছিল। ‘ওদের ধর’ সিনেমার জন্যও আমি আর সালমান কাজ শুরু করেছিলাম। পরে আর হয়নি। আমি নায়ক হিসেবে অনেককেই তো দেখেছি তবে সালমান ছিল সবার চেয়ে আলাদা। সবকিছুতে সবার চেয়ে অনেক এগিয়ে। ওর কথা বলে শেষ করা যাবে না। আল্লাহ তাকে শান্তিতে রাখুক।’
আর কখনও সিনেমায় আসার ইচ্ছে নেই জানিয়ে চিত্রনায়িকা সন্ধ্যা বলেন, ‘সিনেমায় আসার কথা ভাবি না আর। তবে সিনেমা প্রযোজনা করার ইচ্ছা আছে। অবশ্য কয়েক বছর আগেই একবার প্রযোজনা করবো বলে ভাবছিলাম। কিন্তু আশপাশের অবস্থা ও মানুষজনের কথা শুনে আর শুরু করিনি। টাকা ফেরত না এলে লগ্নি করার সাহসটা আসে কী করে!’
শোবিজ ছেড়ে দিলেও নিজের মধ্যে কখনও আফসোস কাজ করেনি সন্ধ্যার। তবে ইন্ডাস্ট্রিকে মিস করতেন ভীষণভাবে। তিনি বলেন, ‘মিস করেছি অনেক। এটা একটা অন্য জগৎ। একটা মোহ। একটা ভালোবাসা। সিনেমা করবো, নায়িকা হবো সেই স্বপ্ন খুব রঙিন ছিল। যদি সময়টা খারাপ না হতো তাহলে হয়তো সিনেমা থেকে সরে যেতাম না।’
আড়ালে থাকার এই ২০ বছরে শোবিজের কারও সঙ্গে কি যোগাযোগ হয়েছে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ। অনেকের সাথেই যোগাযোগ হয়। শাবনূর হচ্ছে আমার বান্ধবী। ওর সাথে আমার তুই তুই সম্পর্ক। ওর সাথে নিয়মিতই যোগাযোগ হয় আমার। মৌসুমী আপার সঙ্গেও খুব ভালো সম্পর্ক। উনার সাথে যোগাযোগ হয়।’
বর্তমানে ‘শপারস ডিজাইনার হাউজ’ নামে ফ্যাশন হাউজ পরিচালনা করছেন সন্ধ্যা। বসুন্ধরা সিটিতে দুটো আউটলেট রয়েছে ১৫ বছর ধরেই। গত সপ্তাহে বনানীতে নতুন আউটলেট খুলেছেন তিনি। সেই সঙ্গে সুখী দাম্পত্যে সন্ধ্যার নয়নের মণি তার দুই সন্তান। এক ছেলে নাসিফ মাজিদ ও লেবেল শেষ করেছে। ছোট মেয়ে সোহা মাজিদ এখন ৮ম শ্রেণিতে পড়ছে।
এলএ/এমএস