রিটা কাৎজকে নিয়ে প্রশ্ন পুলিশের


প্রকাশিত: ১১:৫১ এএম, ০৫ অক্টোবর ২০১৫

ঢাকা এবং রংপুরে দুজন বিদেশি নাগরিক খুনের ঘটনায় আইএসকে জড়িয়ে সংবাদ প্রচার করে আলোচনায় এসেছে Search for International Terrorist Entities (S.I.T.E) নামে বেসরকারি গোয়েন্দা সংস্থাটির সহযোগী প্রতিষ্ঠাতা রিটা কাৎজ। তবে রিটা কাৎজকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পুলিশ।
 
সোমবার বিকেলে সদর দফতর থেকে পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য তুলে ধরেছে বাংলাদেশ পুলিশ।
 
পুলিশের প্রশ্ন রিটা কি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করছেন? নাকি কোন গোয়েন্দা সংস্থার বেসরকারি মুখপাত্র হিসেবে প্রপাগান্ডা চালাচ্ছেন? সিআইএ, কেজিবি, মোসাদ, এম-১৬ এর মত বিশ্বখ্যাত গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যে ইনটেলিজেন্স প্রকাশ করছে না- সেটা করছে Search for International Terrorist Entities (S.I.T.E)। তাদের এই সামর্থ্য পৃথিবীর বহু দেশের গোয়েন্দা সংস্থার সামর্থ্যকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
 
বিশ্লেষকদের ভাবনাকে গুরুত্ব দিয়ে পুলিশ বলছে, ইরাক আক্রমণের আগে সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে গণবিধ্বংসী অস্ত্রের কথা বলেছিল মার্কিন ও ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। সেটা মিথ্যা ও বানোয়াট প্রমাণিত হওয়ায় কালো প্রচারণার দায় পড়েছিল তাদের ওপর। মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য তারা সমালোচিত হয়েছিল পৃথিবী জুড়ে। তাই মিথ্যা বা বানোয়াট প্রচারণার দায়টা আর সরাসরি নিতে চায় না কোন সংস্থা বা দেশ।
 
প্রতীয়মান হচ্ছে যে, বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমেই প্রচারণা চালাচ্ছেন তারা। তাত্ত্বিকভাবে এটা ধূসর প্রচারণা হিসেবে পরিচিত (কোন মিথ্যা নিজে না বলে অন্যকে দিয়ে বলানোকেই ধূসর প্রচারণা বলা হয়)।

হোমল্যান্ড সিকিউরিটির সাবেক পরিচালক জস ডেভনের সঙ্গে কাজ করছেন রিটা কাৎজ। অতীতে প্রকাশ্যে কাজ করেছেন ইসরাইলী প্রতিরক্ষা বাহিনীতে এবং মার্কিন তদন্ত গোয়েন্দা সংস্থা-এফবিআইয়ের সঙ্গে।
 
অনর্গল আরবীভাষী রিটা ছদ্মবেশে থেকেছেন প্যালেস্টাইনী রাষ্ট্রের আন্দোলনে; কাজ করেছেন ইসরাইলী গোয়েন্দা সংস্থা ‘মোসাদ’ এর সঙ্গেও।
 
১৯৬৩ সালে ইরাকের বসরায় জন্ম নেন রিটা কাৎজ। জন্মগতভাবে ইহুদি রিটা। মোসাদের হয়ে গুপ্তচর বৃত্তির অভিযোগে ১৯৬৮ সালের দিকে সাদ্দাম সরকার প্রকাশ্যে ফাঁসিতে ঝোলায় রিটার বাবাকে। তিনটি ছোট বাচ্চা নিয়ে রিটার মা পালিয়ে যান ইরানে। সেখান থেকে ইসরাইলের ‘বাট ইয়াম’ শহরে আশ্রয় নেন তারা।
 
ইসরাইলে আরবী শিখে চাকরি নেন ইসরাইলী প্রতিরক্ষা বাহিনীতে। প্রতিরক্ষা বাহিনীর তত্ত্বাবধানেই তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি, ইতিহাস আর মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে পড়াশুনা করেছেন।
 
১৯৯৭ সালে ডাক্তার স্বামীর সঙ্গে পাড়ি দিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। জাল ভিসার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে আটকও হয়েছিলেন রিটা কাৎজ।
 
১৯৯৭ সালেই মার্কিন মধ্যপ্রাচ্যে গবেষণা ইনস্টিটিউটে চাকরি পান রিটা। হোলিল্যান্ড ফাউন্ডেশন নামে একটি গ্রুপে হামাসের পক্ষে কাজ করছেন রিটা।
 
এরপরেই গোয়েন্দাতে কদর বেড়ে যায় রিটার। মুসলিম নারী পরিচয়ে রেকডিং যন্ত্র নিয়ে ছুটে বেড়ান ইসলামী সম্মেলনে ফান্ড সংগ্রহের সঙ্গে।
সে সময় এফবিআই তাকে লুফে নেয় ইসলামসহ বিদেশী সন্ত্রাসী গ্রুপ নির্ধারণে গোয়েন্দাগিরির জন্য।
২০০২ সালে ইরাক আক্রমণের আগে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত মুসলমানদের ওপর কড়া নজরদারি করা হয়। সে সময় রিটা খুলে ফেলেন S.I.T.E সংস্থাটি।
 
গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং অনলাইনে ফাঁস করাটাই তাদের বড় কাজ। আলকায়দা নেটওয়ার্ক, আইএস নেটওয়ার্ক, হামাস, ইসলামিক জিহাদ এবং হিজবুল্লাহ নিয়েই তার প্রতিষ্ঠান নিয়মিত প্রচারণা চালায়।
 
এখানে উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় ইতালীয় নাগরিক সিজারে তাভেল্লা খুনের দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট (আইএস)। এমনি একটি খবর প্রচার করে ব্যাপক আলোচনায় আসে S.I.T.E । তাদের ওয়েবসাইটটির অফিসিয়াল পেইজে এ সংক্রান্ত তথ্য উপাত্ত তুলে ধরেছে।
 
এরপর তাদের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স-ও (www.mobile.reuters.com/article) এ সংক্রান্ত সংবাদ পরিবেশন করে।
 
এরপর রংপুরে দুর্বৃত্তদের হাতে জাপানী নাগরিক কোনিও হোসি নিহত হওয়ার পর আবারো আইএস খুন করেছে বলে দায় স্বীকার করে সংবাদ পরিবেশন করে সংস্থাটি।

জেইউ/জেডএইচ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।