সংগীতশিল্পী শাম্মী আক্তারকে মনে রাখেনি কেউ
‘শাম্মী আক্তার’ নামে পরিচিত হলেও তার আসল নাম শামীমা আক্তার। শামীমাকেই আদর করে সবাই ডাকতেন শাম্মী বলে। তার গানে হাতে খড়ি বরিশালের ওস্তাদ গৌর বাবুর কাছে। এরপর নানা সময় নানা জনের কাছে গানে শিক্ষা নিয়েছেন তিনি।
১৯৭০ সালের দিকে জীবনের প্রথম বেতারের গানে কণ্ঠ দেন তিনি। গানটি ছিল নজরুলসংগীত ‘এ কি অপরূপ রূপে মা তোমায়’। চলচ্চিত্রের গানে শাম্মী আক্তারের যাত্রা শুরু হয়েছিলো ১৯৮০ সালে আজিজুর রহমান পরিচালিত ‘অশিক্ষিত’ চলচ্চিত্রে গান গাওয়ার মধ্য দিয়ে।
ছবিতে গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লেখা ও সত্য সাহার সুর-সংগীতে ‘আমি যেমন আছি তেমন রব বউ হবো না রে’ এবং ‘ঢাকা শহর আইসা আমার আশা পুরাইছে’ গান দুটি গেয়েই রাজকীয় অভিষেক হয় তার। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। এসেছে নাম, যশ ও খ্যাতি।
সেই সংগীতশিল্পীর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ। মৃত্যুর মাত্র দুই বছর না যেতেই বিস্মৃতির অতলে যেন হারিয়ে গেলেন এই কিংবদন্তি গায়িকা। দুই একটি গণমাধ্যম ছাড়া কেউ মনে রাখেনি নন্দিত এই শিল্পীকে। কোনো সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে পাওয়া যায়নি স্মরণ বা কোনো অনুষ্ঠান আয়োজনের খবর। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চোখে পড়েনি তাকে নিয়ে কোনো স্মৃতিচারণ! অবশ্য, অস্থির সময়ের এই শোবিজে আজকাল বলা চলে কাউকেই মনে রাখতে পারছে না কেউ। মৃত্যু হলে শোকের মাতম চলে। কিছুদিন পর সবই ফ্যাকাশে। শিল্পীর শিল্প কিংবা ব্যক্তিজীবন কোনোকিছু নিয়েই আর কারো মাথাব্যথা থাকে না।
তবে শাম্মী আক্তার নিশ্চয় এসব নিয়ে মন খারাপ করবেন না। বরং আনন্দ আর তৃপ্তি নিয়েই হয়তো তিনি দেখছেন যাদের জন্য গান গেয়ে গেয়ে জীবন কাটিয়ে গেলেন সেইসব সাধারণ ভক্ত-শ্রোতারা তাকে মনে রেখেছে ভেবে। সামাজিযোক যোগাযোগ মাধ্যমে শাম্মীর গানের অনেক শ্রোতাই শ্রদ্ধাঞ্জলী জানিয়েছেন তাদের প্রিয় কণ্ঠশিল্পীকে। শিল্পী তো এভাবেই বেঁচে থাকে মানুষের মনে মনে।
শাম্মী আক্তার ছিলেন সুরের পাখি। স্বাধীন বাংলাদেশের আগেই শিল্পী হিসেবে তার যাত্রা শুরু হলেও স্বাধীনতার পর থেকেই জনপ্রিয়তা। তখনকার রেডিওতে খুব শোনা যেত তার গান। একটা সময়ে তিনি নিজেকে চলচ্চিত্রের গানেই সমর্পিত করেন।
খোঁজ পাওয়া যায় ক্যারিয়ারজুড়ে প্রায় ৩০০ চলচ্চিত্রের জন্য গান গেয়েছেন তিনি। তারমধ্যে জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত ‘ভালোবাসলেই ঘর বাঁধা যায় না’ চলচ্চিত্রে ‘ভালোবাসলেই সবার সঙ্গে ঘর বাঁধা যায় না’ গানটি গাওয়ার জন্য ২০১০ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও অর্জন করেন।
মৃত্যুর আগে দীর্ঘ ছয় বছর ধরে ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধ করছিলেন শাম্মী আক্তার। চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ৫ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছিলো। শেষরক্ষা হলো না কিছুতেই। সেই যুদ্ধে অবশেষে হারতে হলো। সংগীতাঙ্গনকে শোকের সমুদ্রে ভাসিয়ে ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি না ফেরার দেশে পাড়ি জমান এই গানের পাখি।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬২ বছর। তার স্বামী সংগীতশিল্পী আকরামুল ইসলাম। ব্যক্তিজীবনে ১৯৭৭ সালের ২২ ফ্রেব্রুয়ারি আকরামুলের সঙ্গে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন শাম্মী। তাদের দুই সন্তান কমল ও সাজিয়া। শেষ বয়সে দুই নাতি আর্শ ও আরিবের সঙ্গেই সময় কাটতো শাম্মী আক্তারের।
এলএ/এমকেএইচ