সমকামীতার দোহাই দিয়ে বদলে গেল নাম, নির্মাতার ক্ষোভ


প্রকাশিত: ০৭:৪৩ এএম, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫

কোরবানি ঈদ উপলক্ষে নির্মিত হয়েছিলো ব্যতিক্রমি গল্পের টেলিফিল্ম ‘রেইনবো’। বাংলাভিশনের জন্য এটি নির্মাণ করেছেন নির্মাতা মাহমুদ দিদার। ঈদের চতুর্থদিন সোমবার টেলিছবিটি প্রচারের কথা। কিন্তু রোববার সকালে নির্মাতা জানালেন ‘রেইনবো’ নামটি পরিবর্তন করা হয়েছে। টেলিছবিটি ‘ইটস মাই লাইফ’ নামে প্রচার হবে। কারণ, রেইনবো নাকি সমকামীতার প্রতীক!

সমকামীতাকে সমর্থন দিয়ে কোনো নাটক-টেলিফিল্ম বা ফিউশন টেলিভিশনে যাতে প্রচার না হয় সেজন্য ‘রেইনবো’ নামের টেলিছবিটি প্রতিরোধ করতে ফেসবুকে আন্দোলনের ডাক দেন রাজাকার শিরোমনি গোলাম আজমের পুত্র। তারপর থেকেই তার অনুসারীরা বিষয়টি নিয়ে ফেসুবকে মাতামাতি শুরু করে। কেউ কেউ গ্রুপ খুলেও টেলফিল্মটি প্রচার বন্ধের জন্য নানারকম তৎপরতা চালায়। সেখানে জামায়াতপন্থী বিনোদন সাংবাদিকও রয়েছেন বেশ ক`জন।

এর প্রেক্ষিতেই গোয়েন্দা বিভাগ সতর্ক হয়ে বাংলাভিশনে ‘রেইনবো’ টেলিফিল্মটির খোঁজ খবর নেয় ও সেটির নাম পরিবর্তনের আদেশ দেয়। নির্মাতার ধারণা, এসব কারণেই বাধ্য হয়ে টেলিছবিটির নাম বদলে দিয়েছে বাংলাভিশনের কর্তৃপক্ষ। পুরো বিষয়টির জন্য ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন পরিচালক মাহমুদ দিদার।

তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘এটা কখনোই মেনে নেয়ার মত বিষয় নয়। হাজার মাইল দূরে কিছু মানুষ সমকামীতাকে ‘রেইনবো’ দিয়ে ব্যাখ্যা করছে তার মানে এই নয় যে আমরা সবাই সেটা মেনে নিয়েছি। রেইনবো একটা ইংরেজি শব্দ। এবং খুব জনপ্রিয়। আমার টেলিফিল্মের গল্পের সাথে এই নামটিই মানানসই ছিলো। এখানে চরিত্রদের জীবনের নানা রঙ আমি তুলে ধরতে চেয়েছি নিজস্ব ভাবনায়। কিন্তু এমনই সাধারণ ও সুন্দর একটি বিষয়কে ইচ্ছে করেই ইস্যু বানিয়ে সমকামীতার সাথে জড়িয়ে একটা উস্কানি তৈরির চেষ্টা করা হয়েছে। রাষ্ট্রও বিষয়টি ইতিবাচকভাবে না নিয়ে সমাজ থেকে পতিত কিছু নোংরা মানুষের দাবি মেনে নিতে চ্যানেলকে নির্দেশ দিয়েছে। এরজন্য একজন নির্মাতা হিসেবে আমাকে দুঃখ প্রকাশ করতেই হচ্ছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘যারা আমাদের দেশের নাটক-ছবিতে একটু খোলামেলা দেখলেই হৈ চৈ শুরু করে দেন তারাই দিন শুরু করেন বিদেশি অশ্লীল আর অসভ্য সংস্কৃতি দিয়ে। আমরা কেবল মুখেই আধুনিক আর সভ্যতার বড়াই করি; বাস্তবতা ভিন্ন। এখানে গন্ডির বাইরে গিয়ে মানুষ তার দুঃখের কথা বলতে পারে না, জীবনের গল্পটা শুনাতে পারে না। সেটা নানা দোষে দুষ্ট হয়ে পড়ে। অথচ মুহূর্তে মুহূর্তে আমরা দিনবদলের বুলি আওড়াই।’

এছাড়াও মাহমুদ দিদার টেলছবির নাম পরিবর্তনের কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করে কৈফিয়ত শিরোনামে নিজের ফেসবুকের স্ট্যাটাসে লিখেন, ‘রেইনবো’তে তিনজন নারীর নিজস্ব জীবনযাপনের গল্প বলতে চেয়েছি। কিন্তু নামটা নাকি সমকামীদের সিম্বল। এখানে রেইনবো নামে বিরিয়ানীর দোকান, বাস সার্ভিস, ফিল্ম সংগঠন, কাপড়ের দোকান থেকে শুরু করে মনোহরী কসমেটিক্সের নামও আছে। তাহলে কি ধরে নেবো এইসব জিনিসপত্র সমকাম করে বেড়ায়?’

তিনি আরো লেখেন, ‘গল্পে আমি এমন কিছু দেখাইনি যাতে সমাজ স্বাভাবিক জীবনযাপন থেকে বিচ্যুত হতে পারে। কিন্তু গল্পের পুরোটা না জেনেই অনেকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। গোলাম আযমের ছেলে নাকি তার ফেসবুক পেজে প্রতিরোধের ডাক দিয়েছে। সেখানে তিনি ৭১ টেলিভিশনে প্রচারিত একটা শুটিং স্পট রিপোর্ট এর লিঙ্ক শেয়ার করে দেখিয়েছেন। তাতে তার প্রেতাত্মা অনুসারী, নব্য রাজাকাররা এটা নিয়ে প্রচুর প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে। আরো একবার নিশ্চিত হলাম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মধ্যে যে জঙ্গী প্রতিক্রিয়াশীলতা তার মূল হচ্ছে মৌলবাদী জামাতী গোষ্ঠি।’

সরকারের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর গোয়েন্দা সংস্থাও ‘রেইনবো’র উপর নজরদারী চালাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি জানান, ‘তারা গল্পের ‘রেইনবো’ নামটা ইরেজ করে দিতে চায়। এই নামে কোনোও ফিকশন অন এয়ার হলে রাষ্ট্রে তুমুল অশান্তি তৈরী হবে। তাহলে ঘটনা কি দাড়ালো? তার সারমর্ম এই যে, ‘জামাতীদের দাবির সপক্ষে গিয়ে তারা স্ট্যান্ড নিয়েছে। প্রতিক্রিয়াশীল, খুনবাদী গোষ্ঠি যদি এভাবে রাষ্ট্রের প্রশ্রয় পেতে থাকে তার পরিণতি নিশ্চিতভাবেই ভালো হবেনা একসময়। মুক্তিযোদ্ধা পিতার সন্তান হিসেবে আমি এই পুরো প্রক্রিয়াটাকে প্রত্যাখ্যান করছি।’

সমকামীতার প্রতীক দাবি করে টেলিছবিটির হঠাৎ নাম পরিবর্তনে তুমুল সমালোচনা চলছে মিডিয়া পাড়ায়। পাশাপাশি এটি নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও।

উল্লেখ্য, নাটকটি আজ সোমবার দুপুর ২টা ১০ মিনিটে বাংলাভিশনে প্রচার হবে। নাটকটির মুখ্য তিনটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন রিচি সোলায়মান, প্রভা ও স্বাগতা।  এখানে এই তিন নারী ছাড়াও আরো গুরুত্বপূর্ণ দুটি চরিত্রে অভিনয় করছেন নিয়াজ মোর্শেদ ও পাভেল ইসলাম।

এলএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।