ভালোবাসার টানেই অভিনয়ে ফিরে এসেছি


প্রকাশিত: ০১:২৬ পিএম, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৫
শিথিল রহমান

গোয়ালিনী বিনোদন বিচিত্রা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ২০০৩ সালে মিডিয়ায় কাজ শুরু করেন চিত্রনায়িকা মৃদুলা আহমেদ রেসি। পরের বছরই বুলবুল জিলানী পরিচালিত ‘নীল আঁচল’ ছবির মাধ্যমে রেসির চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারের যাত্রা শুরু হয়। এরপর একে একে প্রায় ৩০টি ছবিতে অভিনয় করেছেন। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ছবি হচ্ছে এফ আই মানিকের `এক জবান`, `স্বামী ভাগ্য` এবং মনতাজুর রহমান আকবরের `আমার স্বপ্ন আমার অহংকার` ইত্যাদি।

রেসি তার ক্যারিয়ারে রিয়াজ ছাড়া সমসাময়িক প্রায় সবার সাথে কাজ করেছেন। তবে তার অভিনীত অধিকাংশ ছবির নায়ক ছিলেন ডিপজল। বেশ কয়েক বছর ধরে স্বামী, সংসার আর সন্তান এই তিন `স` নিয়েই রেসির ছিল যত ব্যস্ততা। তাই অভিনয়ে অনিয়মিত হয়ে পড়েছিলেন। সুখের খবর হলো রেসি আবারো ফিরেছেন। এরইমধ্যে বিজ্ঞাপনের কাজ করেছেন দুটি। চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন একটি ছবিতেও। কথা চলছে আরো বেশি কিছু ছবি নিয়ে।

এই চিত্রনায়িকার অভিনয় জীবনে এক দশক অতিবাহিত করা, বিয়ে-সংসার, এরপর নতুন করে চলচ্চিত্রে ফেরাসহ রেসির সাতসতের নিয়ে লিখেছেন নাহিয়ান ইমন-

Majhe
জাগো নিউজ : দু্ই বছর পর ক্যামেরায় সামনে দাঁড়ালেন। স্বাগতম....
রেসি : ধন্যবাদ। আসলে নানা ঝামেলায় নিজেকে একটু গুটিয়ে নিয়েছিলাম। অনেক কষ্ট হলেও অভিনয় আর দর্শকদের থেকে দূরে থাকতে হয়েছে। তবে আবারো নিয়মিত কাজ করবো বলে ফিরে এসেছি।

জাগো নিউজ : হুট করে মিডিয়া ছেড়েছিলেন কেন?
রেসি : ২০১২ সালের ২২ জুন আমার বিয়ে হয়। তখন নিজেকে পুরোদস্তুর একজন গৃহিণী হিসেবে তৈরি করতে হয়েছিলো। কেননা, একজন নারীর কাছে তার সংসার সবার আগে। তারপর ২০১৩’র ২২ জুলাই আমার কন্যা সন্তানের (রাদোয়া ইসলাম প্রার্থনা) জন্ম হয়। ওর জন্মানোর পর আমি আরো বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম সংসারে। এইসব কারণেই মূলত মিডিয়া থেকে প্রায় দু`বছর দূরে ছিলাম। প্রায়ই ভাবতাম, হয়তো আর অভিনয় করা হবেনা। কিন্তু সবার দোয়ায় আবারো আমি চলচ্চিত্রে ফিরতে পেরেছি। এবার ছুটিয়ে কাজ করতে চাই।

জাগো নিউজ : বর্তমানে চলচ্চিত্রশিল্পে সংকটপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে। এটা জেনেও কেন ফিরলেন?
রেসি : চলচ্চিত্রের বাজার আমি যখন কাজ শুরু করি তখনও খুব একটা ভালো ছিলো না। রিয়াজ আর মান্না ভাই দুজনে দুই রকম আমেজের ছবি করে ইন্ড্রাষ্ট্রি টানছিলেন। আর আমি যখন অভিনয় থেকে বিরতি নেই তখণ শাকিব একাই সব। এখনও তেমনই আছে। তবে আশার কথা হলো প্রচুর নতুন মুখ এসেছে। তারা বেশ ভালো করছে। দর্শকদের হলে ধরে রাখতে পারছে। এসব দেখেই বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয়- চলচ্চিত্র শিল্পের অবস্থা এখন খারাপ কিন্তু আমি বিশ্বাস করি এ অবস্থা আর বেশিদিন চলবে না। তবে এসব ভেবে নয়। আমি অভিনয়ে ফিরেছি ভালোবাসার টানেই। অভিনয়টা রক্তে মিশে গেছে। নিজেকে অভিনয়ের বাইরের কেউ ভাবতে কষ্ট হয়। তাই নিজেকে পুরোপুরি গুছিয়ে আবারো ফিরেছি। এ জন্য আমার পরিবারকে ধন্যবাদ দিতে চাই। বিশেষ করে আমার স্বামীকে। ও আমাকে যোগ্য বন্ধু ও অভিভাবকের মতো সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে।

জাগো নিউজ : নতুন প্রত্যাবর্তনের পর কী কাজ করলেন?
রেসি : কাজী গ্রপের টয়লেট ক্লিনার হারপুন’র একটি বিজ্ঞাপনের কাজ করেছি। তারপর কাজ করলাম আরএফএল’র কয়েকটি পণ্যের বিজ্ঞাপনে। ঈদের জন্য কয়েকটি টেলিভিশনে নাচের অনুষ্ঠান করেছি। আরো কিছু কাজের কথাবার্তা চলছে। আর বড় পর্দায় বন্ধন বিশ্বাসের ‘শূন্য’ নামের একটি ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। আগামী মাসেই এর শুটিং শুরু হবে। পাশাপাশি কিছু মুশফিকুর রহমান গুলজারের পরিচালনায় সরকারি অনুদান প্রাপ্ত ‘লাল সবুজের সুর’ ছবিতেও কাজ করবো। দুটি ছবিতেই আমার বিপরীতে কাজ করেছেন আমার স্বপ্নের নায়ক ওমর সানী। সেই ছোটবেলায় সানী ভাইয়ের ছবি দেখে দেখে তার প্রেমে পড়েছি। মনে মনে নিজেকে তার নায়িকা কল্পনা করেছি। এবার সত্যি তার বিপরীতে কাজ করবো- ভাবতেই দারুণ লাগছে। এই দুটি ছবি ছাড়াও বেশ কিছু কাজ হাতে আছে।  

জাগো নিউজ : লাল সবুজের সুর এবং শূন্য ছবি দুটিতে আপনাকে কেমন চরিত্রে দেখা যাবে?
রেসি : আসলে এখন আর নায়িকা হয়ে নাচানাচি-ধাপাধাপি করবার মতো ক্রেজ নেই। এখন অভিনয়টাই করতে চাই দর্শকদের ভালো লাগার মতো করে। সে ভাবনা থেকেই এই দুটি ছবিতে কাজ করতে যাওয়া। তারমধ্যে ‘লাল সবুজের সুর’ ছবির মূল উপজীব্য একজন কিশোর মুক্তিযোদ্ধার গল্প নিয়ে গড়ে উঠা। ওমর সানিকে সেই মুক্তিযোদ্ধার চরিত্রে দেখা যাবে। এখানে তার বিপরীতে আমি থাকছি। আর ‘শূন্য’ ছবিটি সম্পূর্ণ পারিবারিক ঘরানার ছবি। দুজনের প্রেমকে কেন্দ্র করে পারিবারিক টানাপোড়েনের গল্পে নির্মিত হবে এ ছবিটি। এখানে আমি সানি ভাইয়ের স্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করবো।

Majhe
জাগো নিউজ : ছবিগুলো নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কেমন?
রেসি : ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই দেশাত্মবোধক কিংবা মুক্তিযুদ্ধের ছবিতে অভিনয়ের ইচ্ছা ছিলো। `লাল সবুজের সুর` এর মাধ্যমে এবার সেই ইচ্ছা পূরণ হতে চলেছে। তাই এটা আমার জন্যে একটা চ্যালেঞ্জ এবং  প্রত্যাশার কাজ। আর শূন্য ছবিটিও সুন্দর গল্প দিয়ে তৈরি হবে। আশা করছি দর্শকদের ভালো লাগবে।

জাগো নিউজ : বড় পর্দার মানুষ ফিরলেন ছোট পর্দা দিয়ে। এখন থেকে কী ছোটপর্দায় নিয়মিত দেখা মিরভে রেসির?
রেসি : হা হা হা..... আমি ক্যারিয়ারের শুরুতে অনেক বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করেছি। এরপর প্রায় সাত-আট বছর শুধু চলচ্চিত্রেই কাজ শুরু করি। আমি মনে করি অভিনয়ের গন্ডিটা শুধুমাত্র ছোট কিংবা বড়পর্দাতে সীমাবদ্ধ নয়। একজন অভিনেতা-অভিনেত্রী তার মনের মত কাজ পেলে সবক্ষেত্রেই বিচরণ করতে পারেন। তাই আমার পছন্দসই কাজ পেলে অবশ্যই আমি দুই ভূবনে কাজ করবো।

জাগো নিউজ : `শূন্য` ছবিটি নির্মাণ করবেন বন্ধন বিশ্বাস। চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে এ ছবির মাধ্যমে তার অভিষেক হতে যাচ্ছে। নবীন নির্মাতার নির্দেশনায় কতোটা নির্ভার থাকতে পারবেন?
রেসি : (ভেবে চিন্তে বললেন) আমার মনে হয় না কোনো সমস্যা হবে। কারণ এখন প্রচুর নতুন পরিচালক আসছেন চলচ্চিত্র নির্মাণে। তারা ভালোও করছেন।  সবাই ভালোভাবে বুঝেশুনে স্টাডি করেই আসছেন। সুতরাং আমি মনে করি বন্ধন বিশ্বাস দক্ষতার সাথেই শূন্য ছবিটি নির্মাণ করবেন। এ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই।

জাগো নিউজ : আপনার বিপরীতে বেশিরভাগ ছবিতে ডিপজলকে দেখা যেতো। এর কারণ কী?
রেসি : আমি মান্না ভাই, শাকিব খান, ইমন, নিরবসহ অনেকের সাথেই কাজ করেছি। তবে ডিপজল ভাইয়ের বিপরীতে আমার অভিনীত প্রায় সব ছবি ব্যবসা সফল। তাছাড়া আমি নিজেকে পারিবারিক গল্প নির্ভর ছবিতে উপস্থাপন করতে সবসময় পছন্দ করি। তার প্রায় সব ছবি নির্মাণও হতো পারিবারিক ক্লাইমেক্স নির্ভর যেটা দর্শকরাও গ্রহণ করতেন এবং আমারো ভালো লাগতো। তাই হয়তো বা তার সাথে আমার অভিনীত কাজের সংখ্যা একটু বেশি।

জাগো নিউজ : সাংসারিক জীবন নিয়ে কিছু বলুন...
রেসি : আমার স্বামী একজন ব্যবসায়ী। স্বামী-সন্তান-শ্বশুরবাড়ির সবাইকে নিয়ে খুব ভালো আছি। আর একমাত্র কন্যা রাদোয়া ইসলাম প্রার্থনা আমাকে ধন্য করে রেখেছে। তার সবকিছুতেই মুগ্ধতা কাজ করে আমার। ওর জন্য দোয়া করবেন সবাই।

জাগো নিউজ : অগ্রীম ঈদ মোবারাক....
রেসি : আপনাকে এবং জাগো নিউজ পরিবারকেও আমার পক্ষ থেকে ঈদের অগ্রিম শুভেচ্ছা রইল। সেইসাথে প্রত্যাশা রইল এবারের ঈদে সকলের মন সিক্ত হবে আনন্দের বারিধারায়।

এলএ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।