যৌথ পরিবারের অসহায় বোনদের প্রতিনিধি হয়ে কাঁদালেন খুশি

সিনেমার প্রচারণার জন্য ‘পরিবার নিয়ে দেখার মতো’ বাক্যটি বহুল ব্যবহৃত। বাস্তব সত্য হলো পরিবার নিয়ে দেখার মতো সিনেমা খুব কমই নির্মাণ হয়। তবে ছোট পর্দায় পরিবার নিয়ে দেখার মতো নাটক নির্মাণ হয় অনেক।
যদিও ভিউ পাওয়ার লোভে আজকাল অশ্লীল সংলাপ, গালাগালি, সুড়সুড়ি দেয়া দৃশ্যের নাটক নির্মাণে মন দিয়েছেন অধিকাংশ পরিচালক। তবে কোরবানির ঈদে ‘জয়েন ফ্যামিলি’ নামের নাটকটি নির্মাণ করেছিলেন দীপু হাজরা, যা খানিকটা ভিন্ন ভাবনার। নাটকটি রচনা করেছেন বৃন্দাবন দাশ। এক যৌথ পরিবারে নিপীড়িত বোনের গল্প উঠে এসেছে নাটকটিতে।
ভালোবাসার বন্ধনে জড়িয়ে থাকা ভাইবোনেরা যখন বড় হয়ে যায় তখন সব ভালোবাসা কোথায় যেনো পালিয়ে যায়! ভাইয়ে ভাইয়ে মারামারি হট্টগোল এখন নিত্য দিনের ঘটনা। বোনদের বঞ্চিত করার ঘটনাও ঘটছে হর হামেশাই।
‘জয়েন ফ্যামিলি’ নাটকে তেমনই চিত্র দেখা গেল। যেখানে উঠে এসেছে তিন ভাই ও এক বোনের গল্প। নাটকে বড় ভাইয়ের স্ত্রী মারা গেছেন দুই সন্তান রেখে। মেজো ভাই ও সেজো ভাই বিবাহিত। দুই জনের ঘরেই সুন্দরী বউ।
তাদের এক মাত্র বোনটির বিয়ে না দিয়ে মারা গেছেন বাবা-মা। বাড়ির বউরা কোনো কাজ করেন না। তারা শুধু সাজ গোজে ব্যস্ত। বাড়ির যত কাজ-দায়িত্ব সব চেপেছে বোনের ঘাড়ে।
ভাইয়েরা বিয়ে দিতে চায় না বোনের। কারণ তার বিয়ে হয়ে গেলে সংসারের কাজ তার বউদের করতে হবে। এদিকে বোন বাড়ির সব কাজ সামলে মনে মনে স্বপ্ন দেখে তারও একদিন সুখের সংসার হবে। কিন্তু তার স্বপ্নের খেয়াল রাখে কে?
বাবার আদরের মেয়েটি ভাইদের সংসারের দায়িত্ব নিতে নিতে কখন যেন নিজের অজান্তেই পরিবারের একমাত্র কাজের মেয়ে হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেলেন। এটা যখন তিনি বুঝতে পারলেন তখন গল্পটা অন্যরকম হয়ে আসে।
তিন ভাই ধরেই নিয়েছে বোনটির বিয়ে হবে না। সে বিয়ের অযোগ্য। তার যোগ্যতা কেবল ভাইদের পরিবারের সেবা করা। সেই যোগ্যতা নিয়ে ভাইয়ের বউদের কাছে প্রতিনিয়ত অপমানিত হয় বোন। সেই অপমান একদিন ক্ষোভে রুপ নেয়।
রান্নাবান্না ও ঘরের সব কাজ বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় বোন। শুরু হয় সবার অনাহারে থাকার দিন। দুই বউয়ের বাচ্চারা না খেয়ে দিন-রাত পার করে তবু তারা সংসারের কাজে হাত দেয় না। বরং যার যার স্বামীদের প্ররোচিত করে বোনকে শাস্তি দেয়ার জন্য। কেন সে কর্মবিরতি দিয়ে সবাইকে কষ্ট দিচ্ছে। এভাবেই এগিয়ে চলে গল্পটি। যার শেষটুকু চোখ ভিজিয়ে দেয়, মনে জন্ম দেয় বোনের প্রতি দায়িত্ববোধ ও ভালোবাসা।
নাটকে বোনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন শাহনাজ খুশি। গ্রাম বাংলার লাখো পরিবারের অবিবাহিত বোনের প্রতিনিধি যেন খুশি। যার অভিনয় দাগ কেটে যায় মনে।
নাটকটিতে খুশির ছোট ভাইয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরী, তার স্ত্রী নাদিয়া আহমেদ। মেজো ভাইয়ের চরিত্রে আছেন বৃন্দাবন দাশ। তার স্ত্রী নাজনীন হাসান চুমকী। এতে অভিনয় করেছেন বৃন্দাবন-খুশি দম্পতির দুই ছেলে দিব্য জ্যোতি ও সৌম্য জ্যোতিসহ আরও অনেকে। প্রত্যেকেই নাটকে দারুণ অভিনয় করেছেন।
ঈদ উপলক্ষ্যে টিভি চ্যানেলে প্রচারের পর ইউটিউবে প্রকাশ করা হয়েছে নাটকটি। অল্প সময়েই মধ্যেই ১০ লক্ষেরও বেশি দর্শক দেখেছেন নাটকটি। ইউটিউবের কমেন্ট বক্সে ঝরে পড়ছে শত শত প্রশংসা। যা বাংলা নাটকের জন্য আশিবার্দই বটে।
এমএবি/এলএ/এমকেএইচ